সন্দীপ সরকার, কলকাতা: প্রথমে প্যাট কামিন্সের (Pat Cummins) রেকর্ড ২০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা দামে সানরাইজার্স হায়দরাবাদে যাওয়া। তারপর কামিন্সের স্বদেশীয় মিচেল স্টার্কের (Mitchell Starc) সেই রেকর্ডও ভেঙে দেওয়া। একই দিনে। ২৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকায় অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি পেসারকে কিনে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স। যা আইপিএলের ইতিহাসে নতুন মাইলফলক।


আইপিএলের (IPL Auction) ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে ১৯ ডিসেম্বর তারিখটি। যেদিন দুবাইয়ে বসেছিল মিনি অকশনের আসর। মরুশহরে যখন রেকর্ড দামে বিকোলেন স্টার্ক-কামিন্সরা, প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতো, নিলামে বাংলার প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূন্য! বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন, যদি রাজ্যের দু-একজন ক্রিকেটারও দল পায় আইপিএলে। কিন্তু মরুশহর দুবাইয়ের কোকা কোলা এরিনায় হতাশার ছবিটা অপরিবর্তিত। বাংলার কোনও ক্রিকেটারকে নিয়েই নিলামে আগ্রহ দেখায়নি কলকাতা নাইট রাইডার্স। বাংলার ক্রিকেটারদের নেয়নি বাকি ৯ দলও।


আইপিএল নিলামে বাংলার মোট ৯ জন ক্রিকেটার নাম দিয়েছিলেন। ঈশান পোড়েল, অভিমন্যু ঈশ্বরণ, সুদীপ কুমার ঘরামি, ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়, শাকির হাবিব গাঁধী, মহম্মদ কাইফ, রবি কুমার, কৌশিক মাইতি ও শশাঙ্ক সিংহ। তাঁদের মধ্যে তিনজনের নাম নিলামের টেবিলে উঠেছিল। ঈশান পোড়েল, মহম্মদ কাইফ ও শশাঙ্ক সিংহ। কিন্তু কাউকে নিয়েই আগ্রহ প্রকাশ করেনি দশ দল।


আইপিএলের নিলামে বাংলার ক্রিকেটারেরা বঞ্চিত, এমন ব্যাখ্যায় অবশ্য নারাজ মনোজ তিওয়ারি (Manoj Tiwary)। বাংলার অধিনায়ক হিসাবে নামছেন কেরিয়ারের শেষ রঞ্জি ট্রফিতে। আইপিএলেও এক সময় নজর কেড়েছিলেন। ২০১২ সালের আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে কলকাতা নাইট রাইডার্সের জার্সিতে উইনিং স্ট্রোকটি এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকেই। সেই মনোজ এবিপি লাইভকে বলছিলেন, 'আইপিএল নিয়ে আলোচনা রঞ্জি ট্রফির প্রস্তুতির সময় করি না। ছেলেদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়নি। তবে আমি মনে করি না যে, বঞ্চিত করা হয়েছে বাংলার ক্রিকেটারদের। কেউ এসে প্লেটে করে খাবার দিয়ে যাবে না। কেউ বলবে না, এই ছেলেটা ভাল, একে দলে নাও। কেউ করবে না। নিজেদের জায়গা নিজেদেরই তৈরি করে নিতে হবে।'


বাংলার ক্রিকেটারদের মধ্য়ে মহম্মদ শামি ও ঋদ্ধিমান সাহাকে রিটেন করেছেন গুজরাত টাইটান্স। যদিও ঋদ্ধি এখন ত্রিপুরার হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেন। মুকেশ কুমার ও অভিষেক পোড়েলকে রিটেন করেছে দিল্লি ক্যাপিটালস। আকাশ দীপকে ধরে রেখেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। আর শাহবাজ আমেদকে ট্রেডিং উইন্ডোতে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে দিয়েছে আরসিবি। সব মিলিয়ে ১০ দলে মাত্র ৬ জন ক্রিকেটার!


মনোজ অবশ্য নেতিবাচক কিছু বলছেন না। তাঁর কথায়, 'বেঙ্গল প্রিমিয়ার লিগ শুরু হবে শুনছি। অনেকে বলাবলি করছেন, আগে এই টুর্নামেন্ট হলে বাংলা থেকেও অনেকে আইপিএল খেলত। আমি সহমত নই। বেঙ্গল প্রিমিয়ার লিগ আগে হলে নিজেদের প্রতিভা দেখানোর জায়গা নিশ্চয়ই থাকত। কিন্তু তার আগেও তো লক্ষ্মীরতন শুক্ল, মনোজ তিওয়ারি, অশোক ডিন্ডা, ঋদ্ধিমান সাহা, মহম্মদ শামি, সৌরাশিস লাহিড়ী, রণদেব বসুরা আইপিএলে খেলেছে। দলে থেকেছে। তারা কী করে সুযোগ পেল তাহলে?'


মনোজ যোগ করছেন, 'মোদ্দা কথা হচ্ছে, যখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট হচ্ছে, দলকে জেতাতে হবে। ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো পারফর্ম করতে হবে। নিজের প্রতিভা দেখাতে হবে। সেই সুযোগ থেকে তো কেউ বঞ্চিত করছে না। রঞ্জি ট্রফি, সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি বা বিজয় হাজারে ট্রফির ম্যাচ খেলা তো আটকাচ্ছে না। সেখানেই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। ম্যাচ দেখার জন্য বিভিন্ন দলের স্কাউটরা হাজির থাকে। এমন ইনিংস খেলো যাতে তোমাকেও নিলামে নেওয়ার জন্য সব দল ঝাঁপায়। তবে ভাগ্যও দরকার হয়। যদিও কপাল তাদেরই সঙ্গ দেয়, যারা বেশি পরিশ্রম করে।'


আরও পড়ুন: 'শেষ দুবার ফাইনালে হেরে কেঁদেছিলাম,' রঞ্জি ট্রফিতে নতুন প্রজন্মে লগ্নি মনোজের


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে