কলকাতা: বাংলা ফুটবল তথা ভারতীয় ফুটবল জগতের অন্যতম সুপরিচিত মুখ। কলকাতা ময়দানের প্রাক্তন ফুটবলার। খেলেছেন কলকাতার তিন প্রধানেই। তবে শুরুটা হয়েছিল এই সবুজ মেরুন ক্লাবেই। তিনি দীপেন্দু বিশ্বাস। প্রথমে ২০০৫-২০০৭ ও পরে ২০১২ সালে ফের একবার মোহনবাগানের জার্সি গায়ে চাপিয়েছিলেন। অসংখ্য স্মৃতি এই ক্লাবের সঙ্গে। তেমনই বাঙালি ফুটবলার হিসেবে ডার্বির মাহাত্ম্যও খুব ভাল করেই বোঝেন। আজ ডুরান্ড ফাইনালে সল্টলেক স্টেডিয়ামে কলকাতা ডার্বি। কেমন দেখছেন এখনের মোহনবাগানকে? এবিপি লাইভের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ডুরান্ড ফাইনাল ও সবুজ মেরুন শিবির নিয়ে কথা বললেন দীপেন্দু-


রবিবারের ডার্বিতে কাকে এগিয়ে রাখবেন?


দীপেন্দু: দেখুন আমি নিজে মোহনবাগানে খেলেছি অনেকগুলো বছর। এই ক্লাবের ইতিহাস সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল। এই মরসুমের প্রথম ডার্বিতেও বাগানের খেলা দেখেছিলাম। ফেরান্দোর কোচিংয়ে দলটা দারুণ খেলছে গত দুই মরসুম। প্রথম ডার্বিতেও কিন্তু খাতায় কলমে মোহনবাগানই এগিয়ে ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ম্যাচে হারতে হয় তাঁদের। তবে আমি রবিবারের ম্যাচেও ফেরান্দোর দলকেই এগিয়ে রাখব। তবে ইস্টবেঙ্গল কঠিন লড়াই দেবে। অনেক দিন পর একটা হাড্ডাহাড্ডি ডার্বি দেখতে চলেছেন সবাই। 


মোহনবাগানকে এগিয়ে রাখছেন কেন?


দীপেন্দু: একটাই কারণ। তা হল, এই দলটায় উন্নতমানের ভারতীয় ফুটবলার রয়েছে। প্রচুর তরুণ ফুটবলার যারা দেশের জার্সিতেও খেলে। এঁদের মধ্যে সাহাল আব্দুল সামাদ, মনবীর, শুভাশিস, আশিস রাই, অনিরুদ্ধ থাপা, আনোয়ার আলি, লিস্টন কোলাসো সবাই এই ধরণের পরিবেশ, মানসিক চাপ নিতে অভ্য়স্ত। দেশের জার্সিতেও খেলেছে। আশিক কুরুনিয়ান ও অনিরুদ্ধ থাপা তো আমার মতে এই মুহূর্তে দেশের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার ও উইঙ্গার। গতি আছে, বোঝাপড়া ভাল নিজেদের মধ্যে। 


বিদেশি প্লেয়ারদের কেমন লাগছে আপনার? 


দীপেন্দু: বুমোস এই দলের প্রাণভোমরা। বিদেশিদের মধ্য়ে ও এই দলটার সঙ্গে অনেকদিন ধরে রয়েছে। দারুণভাবে খেলাটা গোটা মাঠ জুড়ে। এছাড়া পেত্রাতোস, সাদিকু, কামিংসরা তো আছেই। আগের ম্যাচই সাদিকুর গোলটা তো এবারের ডুরান্ডের অন্যতম সেরা। এত বিশ্বমানের গোল খুব কমই হয়। 


রবিবারের ডার্বিতে আপনার চোখে মোহনবাগানের সেরা ২জন প্লেয়ার কে কে হতে পারে?


দীপেন্দু: অবশ্যই একজন বুমোস। ও পেছন থেকে খেলাটা চালায় মূলত। বড় ম্যাচ খেলার প্রচুর অভিজ্ঞতা রয়েছে। ময়দানের ফুটবলটার সঙ্গেও মিশে গিয়েছে। গত কয়েকটি ম্যাচের দিকে চোখ রাখলে দেখা যাবে বেশ কয়েকটিতে ম্য়াচের সেরাও নির্বাচিত হয়েছিল ও। আর দ্বিতীয় নামটি বাছতে হল আমি বলব হেক্টরের কথা। ডিফেন্স লাইনে প্রীতম যে কাজটা করত, হেক্টরকেও সেই কাজটাই করতে হবে। ইস্টবেঙ্গল কাউন্টার অ্যাটাক করবে উইং থেকে। কারণ ওঁদের উইং খুব শক্তিশালী। মাহেশ ও নন্দকুমারকে আটকানোর দায়িত্বটা কিন্তু হেক্টরকে নিতে হবে।


আগের ডার্বিতে হার, কোথাও কি একটু চাপে থাকবে ফেরান্দোর দল?


দীপেন্দু: দেখুন ডার্বি আবেগের ম্যাচ। গোটা টুর্নামেন্টে আপনি কেমন খেললেন, কেমন পারফর্ম করলেন, কটা ম্যাচ জিতলেন তা নিয়ে কেউ ভাবে না। কিন্তু ডার্বিতে হার, জিতের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। শেষ ডার্বিতে মোহনবাগানকে হারতে হয়েছিল। তবে তারও কারণ আছে। আমার মনে হয় বিদেশিদের মধ্যে কামিংস, পেত্রাতসদের ফিটনেস ইস্যু একটা রয়েছে। যা খেলাতেও ধরা পড়ছিল। ফেরান্দো অবশ্য ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলিয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের কাউন্টার অ্যাটাকের সামনে কামিংসা পুরো ফিট না থাকলে কিছুটা চাপ তো অনুভব করতেই হবে।


ডার্বি মানেই উত্তেজনা, মাঠের লড়াইয়ের আঁচ যেন মাঠের বাইরে না ছড়ায়, তার বার্তাও দিয়েছেন দীপেন্দু। তিনি বলেন, ''এটুকুই বলব যে খেলাটা উপভোগ করবেন। নিজের প্রিয় ক্লাবকে সমর্থন করুন অবশ্যই। কিন্তু কোনওভাবেই কাউকে মানসিক ও শারীরিকভাবে আঘাত দেবেন না।''