কলকাতা: গত হিরো আইএসএলে (ISL 2023) সেমিফাইনালের প্রথম লেগে হারের পর দ্বিতীয় লেগে চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ এফসি-কে (Haydrabad FC) প্রায় কোণঠাসা করে হারালেও মোট গোলের বিচারে ফাইনালে উঠতে পারেনি। প্রচুর গোলের সুযোগ হাতছাড়া হওয়া ও হায়দরাবাদের গোলরক্ষক লক্ষ্মীকান্ত কাট্টিমণির অসাধারণ দক্ষতা সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাদের। 


তবে হিরো আইএসএএলেই শেষ হয়ে যায়নি এটিকে মোহনবাগানের অভিযান। তার পরেও তারা এশীয় মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরেছে এবং সেখানেও রীতিমতো দাপট বজায় ছিল তাদের। এপ্রিলে তারা শ্রীলঙ্কার ব্লু স্টার ও ঢাকার আবাহনী লিমিটেডকে হারিয়ে গ্রুপ পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।


মে মাসে গ্রুপ পর্বে তারা গোকুলম কেরালা এফসি-র কাছে ২-৪-এ হারলেও বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংসকে ৪-০ ও মলদ্বীপের মাজিয়া এসআর-কে ৫-২-এ হারিয়ে ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালে ওঠে। তবে ঘরের মাঠ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে সেই মোকাবিলায় তারা ১-৩-এ হেরে যায় কুয়ালা লামপুর সিটির বিরুদ্ধে। এ মরসুমের শুরুতে ডুরান্ড কাপেও গ্রুপ পর্বের বেড়া ডিঙোতে পারেনি সবুজ-মেরুন বাহিনী। গ্রুপের দুই সেরা দলের সমান পয়েন্ট থাকলেও মুখোমুখি লড়াইয়ের ফলের ভিত্তিতে নক আউটের দৌড় থেকে ছিটকে যায় তারা। এ বার তাদের চ্যালেঞ্জটা আরও কঠিন। কারণ, আরও সামনে লম্বা ঘরোয়া ক্লাব মরসুম।  


তাই এ বার দলের খোলনলচে পাল্টে ফেলেছেন সবুজ-মেরুন বাহিনীর স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো। দলকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টায়, একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী দলে নতুন খেলোয়াড় নিয়ে এসেছেন তিনি ও ক্লাবের কর্তারা। কিন্তু সেই পরিকল্পনা কতটা কার্যকরী হয়ে উঠবে, সেটাই বোঝা যাবে সারা মরশুমে।  


-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------


গত দুই মরশুমে


২০২০-২১লিগ টেবলে ২ নম্বরে, রানার্স-আপ২০২১-২২লিগ টেবলে ৩ নম্বরে, সেমিফাইনালিস্ট


-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------


দল কেমন হল?


সমর্থকদের দুই নয়ণের মণি রয় কৃষ্ণা ও ডেভিড উইলিয়ামসকে বিদায় দিয়েছে এটিকে মোহনবাগান। ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্গনকেও অব্যহতি দিয়েছে তারা। আরেক নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার স্প্যানিশ তারকা তিরি চোটের জন্য এই মরসুমের বেশির ভাগ সময়টাই মাঠে নামতে পারবেন না। এই ঘাটতি পূরণের জন্য দুই বিদেশি ডিফেন্ডার গিনির ফ্লোরেন্তিন পোগবা ও অস্ট্রেলিয়ার ব্রেন্ডান হ্যামিলকে সই করানো হয়েছে। গত হিরো আইএসএল মরসুমে এটিকে মোহনবাগান লিগ পর্বে ২৬টি গোল খেয়েছিল, যা চার সেমিফাইনালিস্টের মধ্যে ছিল সবচেয়ে বেশি। তাই এ বার দলবদলের শুরুতেই রক্ষণ মজবুত করার দিকে জোর দেন কোচ ফেরান্দো। যোগ দিয়েছেন গত হিরো আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ এফসি থেকে আসা ডিফেন্ডার আশিস রাই। কিন্তু সম্প্রতি ডুরান্ড কাপে এই ডিফেন্স লাইন-আপকে তেমন শক্তিশালী মনে হয়নি। গ্রুপ পর্বে ছ’গোল দিয়ে চার গোল খেয়েছে তারা।


গত মরসুম পর্যন্ত যে কাজটা করেছেন রয় কৃষ্ণ, সেই কাজটা এ বার করবে কে, সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। নাকি কোচের মস্তিষ্কে অন্য কোনও ছক ঘোরাফেরা করছে? শুধুমাত্র কিয়ান নাসিরিকে সামনে রাখবেন তিনি? নাকি নবনিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার পাঁচ ফুট ন’ইঞ্চির দিমিত্রিয়স পেট্রাটসকে ‘ফলস নাইন’-এর ভূমিকায় দেখা যাবে?  ফেরান্দোর এই অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত থেকেই অনেকে মনে করছেন, তিনি কোনও জেনুইন স্ট্রাইকারকে দিয়ে আক্রমণে না উঠে হয়তো দুই উইং দিয়ে আক্রমণ শানিয়ে বিপক্ষের রক্ষণে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করবেন। সে জন্য লিস্টন কোলাসো ও মনবীর সিং আছেন। এক্ষেত্রে আশিস রাইয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।


পেট্রাটস কিন্তু মূলত অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। গোলের সুযোগ তৈরি করেন তিনি। তাঁর পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়, তিনি যত না গোল করেছেন, গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন অনেক বেশি। ‘নম্বর নাইন’ হিসেবে না ভেবে পেট্রাটসকে ‘নাম্বার টেন’ হিসেবে ধরাই ভাল। অন্তত তাঁর অতীতের রেকর্ড সে রকমই বলছে। ‘ফলস নাইন’-এর ভূমিকায় খেলার অভ্যাস রয়েছে তাঁর। দূরপাল্লার গোলেও তিনি বিশেষজ্ঞ।  তবে ফেরান্দো তাঁকে কোন ভূমিকায় ব্যবহার করবেন, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ডুরান্ড কাপে তিনি ছিলেন না। তাই তাঁর খেলা এখনও দেখা যায়নি। সমর্থকেরা তাই অপেক্ষায় রয়েছেন এই অস্ট্রেলিয়ানের কেরামতি দেখার জন্য।