সন্দীপ সরকার, কলকাতা: দল পেনাল্টি কর্নার পেলেই তাঁর চোখ যেন চকচক করে ওঠে। নিখুঁত ড্র্যাগফ্লিকে প্রতিপক্ষের রক্ষণকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে দলকে এগিয়ে দেওয়া যেন অভ্যাসে পরিণত করেছেন।
সেই রূপিন্দর পাল সিংহের (Rupinder Pal Singh) মনে হচ্ছে, দেশের মাটিতে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে (Asian Champions Trophy) ফেভারিট ভারতীয় দলই। টুর্নামেন্টের শুরুটা দুরন্তভাবে করেছে ভারত। চিনকে ৭-২ গোলে উড়িয়ে দিয়ে। 'এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়াই লক্ষ্য থাকবে ভারতের। কারণ ঘরের মাঠে খেলছে ভারত। খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, সামনেই এশিয়ান গেমস। তার প্রস্তুতি সেরে নিতে হবে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। কোনও দলকে হাল্কাভাবে নেওয়া চলবে না। তবে নিজেদের দক্ষতা অনুযায়ী খেলতে পারলে কোনও দলই ভারতের সামনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারবে না,' ভুবনেশ্বর থেকে এবিপি লাইভকে মোবাইল ফোনে বললেন রূপিন্দর।
কিন্তু পাকিস্তানের কোচ ভারতের মাটিতে পা রেখেই যে হুঙ্কার দিয়ে রেখেছেন যে, ভারতের বিরুদ্ধে এগিয়ে রয়েছেন তাঁরা! রূপিন্দর বলছেন, 'পাকিস্তান শিবিরের গর্জনের কথা শুনেছি। ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ সব সময়ই টানটান লড়াই হয়। হাড্ডাহাড্ডি হয় ম্যাচ। তবে নির্দিষ্ট সেই দিন যারা ভাল খেলবে, তারাই জিতবে। পাক হুঙ্কার পাত্তা দেওয়ার কিছু নেই। মাঠে নেমে খেলতে হবে।' যোগ করলেন, 'ভারত ইউরোপ সফর থেকে ফিরেছে। স্পেন, ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে খেলে দল এখন অনেক ভাল প্রস্তুত। এতে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও এশিয়ান গেমসে সুবিধা হবে ভারতের।'
সেপ্টেম্বরে হাংঝাউতে এশিয়ান গেমস। চ্যাম্পিয়ন দল সরাসরি প্যারিস অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন করবে। তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট। অনেকে অবশ্য এশিয়ান গেমসের ঠিক আগে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কেউ কেউ বলছেন, এতে করে ভারতের স্ট্র্যাটেজি বিপক্ষের ল্যাপটপে সেভ হয়ে যাবে। কেউ কেউ আবার বলছেন, অতিরিক্ত খেলার ধকলে এশিয়ান গেমসের আগে না সকলে ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
বিখ্যাত ড্র্যাগফ্লিকার রূপিন্দর অবশ্য বিষয়টাকে সেভাবে দেখছেন না। বলছেন, 'অনেক বলছেন বটে যে, ভারতের খেলার কৌশল সব দল জেনে যাবে। তাঁদের বলব, উল্টোটাও তো সত্যি। ভারতীয় দলও তো অন্য প্রতিপক্ষদের কৌশলের হদিশ পাবে। তাতে সুবিধাই হবে। আমরা নিজেদের শক্তিগুলো আরও শানিয়ে নিতে পারব আর দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সংশোধন করতে পারব। আর এখনকার প্লেয়াররা অনেক বেশি ফিট। খেলার ধকল কীভাবে কাটিয়ে উঠতে হয়, ওরা জানে।'
টোকিও অলিম্পিক্সে ৪১ বছর পর হকিতে পদক জিতেছিল ভারত। ব্রোঞ্জ জয়ী সেই দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন বিখ্যাত ড্র্যাগ ফ্লিকার রূপিন্দর। সামনের বছর প্যারিসের মাটিতে অলিম্পিক্সে ভারতের সম্ভাবনা কেমন দেখছেন? রূপিন্দর বলছেন, ‘এখন থেকে ফেভারিট বেছে নেওয়া বা সম্ভাবনা বলা কঠিন। আমাদের প্রস্তুতিতে জোর দিতে হবে। এক একটা ম্যাচ ধরে হিসেব কষে এগতে হবে। প্রতিপক্ষ অনুযায়ী স্ট্র্যাটেজি সাজাতে হবে। শুরুতেই পদকের কথা ভাবলে হবে না। দল হিসাবে খেলতে হবে। ব্যক্তিগত নৈপুণ্য দিয়ে হবে না।’
ভুবনেশ্বরে এসেছেন খুদে হকি খেলোয়াড়দের তালিম দিতে। কীভাবে নিপুণ দক্ষতায় ড্র্যাগফ্লিক মারা যায়, সেই কর্মশালায়। কেমন হল শিবির? রূপিন্দর বলছেন, 'ওড়িশার শিবির খুব ভাল হয়েছে। মোট ৩১ জন খুদে খেলোয়াড়কে নিয়ে শিবির করেছি। ২২ জন ছেলে ছিল ও ৯ জন মেয়ে। এখানকার পরিকাঠামো দুর্দান্ত। ভারতে এত সুযোগ সুবিধা আর কোথাও নেই।' যোগ করছেন, 'ভুবনেশ্বরে হকি হাই পারফরম্যান্স সেন্টারে যা সুযোগ সুবিধা, তা আন্তর্জাতিক মানের। জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা এরকম পরিকাঠামো পেয়ে থাকে। মনেই হয়নি অ্যাকাডেমি। মনে হচ্ছিল জাতীয় দলের শিবিরে এসেছি।'
তাঁর বয়স ৩২ বছর। তবে বেশ কিছুদিন জাতীয় দলের বাইরে। অবসরের কথা ভাবছেন? রূপিন্দর বলছেন, 'এই মুহূর্তে ভারতীয় দলে ফেরা নিয়ে ভাবছি না। ক্লাব হকি খেলছি। বিদেশের লিগে খেলছি। সেপ্টেম্বরে বিদেশে লিগ খেলতে যাচ্ছি। আরও কয়েক বছর খেলতে পারব। এখনই অবসরের ভাবনা নেই। পাশাপাশি কোচিং শুরু করেছি। তৃণমূল স্তরে কাজ করছি। খুদে খেলোয়াড়দের পরামর্শ দিচ্ছি।'