কাতার: আর কয়েক ঘণ্টা পরেই এএফসি এশিয়ান কাপে ভারতের প্রথম ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। সাম্প্রতিককালে যা হয়তো কঠিনতম ম্যাচ হতে চলেছে সুনীল ছেত্রীদের। এর পরেও ভারতকে খেলতে হবে আরও দুই শক্তিশালী দল উজবেকিস্তান ও সিরিয়ার বিরুদ্ধে।
১৮ জানুয়ারি ভারতীয় দল তাদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে উজবেকিস্তানের বিরুদ্ধে, রাত আটটায়। প্রথম দুটি ম্যাচই হবে আল রায়ানের আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে। লিগ পর্বে তাদের শেষ ম্যাচ ২৩ জানুয়ারি, বিকেল পাঁচটায়, আল খোরের আল বায়েত স্টেডিয়ামে। ফিফা ক্রমতালিকায় বর্তমানে ১০২ নম্বরে রয়েছে ভারত। অস্ট্রেলিয়া ক্রমতালিকায় রয়েছে ২৫ নম্বরে। তাদের অপর দুই প্রতিপক্ষ সিরিয়া ও উজবেকিস্তান রয়েছে যথাক্রমে ৯১ ও ৬৮ নম্বরে। অর্থাৎ ভারতের কাছে লড়াইটা বেশ কঠিন হতে চলেছে।
তবে ভারতীয় তারকারা দোহায় পৌঁছে ১২ দিন টানা প্রস্তুতি শিবির করার পরে এই টুর্নামেন্টে ভাল ফল করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। এই নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলছে ভারত। গতবার অল্পের জন্য তারা নক আউট পর্বে উঠতে পারেনি। কিন্তু এ বার তারা দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী।
যদিও কঠিন সেই চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এই কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে সাফল্য পাওয়া নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী ভারতীয় দলের ফুটবলাররা। এই দলের ন’জনের আগেও এশিয়ান কাপে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু ১৭ জনের সামনে এই টুর্নামেন্টে প্রথম খেলার সুযোগ। এশিয়ার সর্বোচ্চ স্তরের টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ভারতীয় দলের অভিজ্ঞ-অনভিজ্ঞ একাধিক খেলোয়াড়ই তাঁদের অনুভুতির কথা জানিয়েছেন। জেনে নিন কে কী বলছেন।
সন্দেশ ঝিঙ্গন, সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার
এই টুর্নামেন্টের পরিবেশ একেবারে আলাদা। তবে অসাধারণ। এমন একটা পরিবেশে যে কেউ থাকতে চাইবে। খুবই উপভোগ করছি। কিন্তু যখন আসল মুহূর্তে আসি, তখন অত কিছু অনুভব করি না। কারণ, তখন অন্য রকম একটা মানসিক অবস্থার মধ্যে চলে যাই। ২০১৯-এও একই রকম হয়েছিল। আসল সময়ে অতটা বুঝতে পারিনি। পরে যখন খেলা শেষ হয়ে যায়, তখন মনে হয় কী অসাধারণ ছিল ব্যাপারটা। আমরা এমন একটা সন্মানীয় টুর্নামেন্টে আসতে পেরে কৃতজ্ঞ। চারদিকে পজিটিভ এনার্জি। পুরো অভিযানের সঙ্গে থাকতে পেরে এবং অবশেষে আসল মঞ্চে থাকতে পারাটা খুবই গর্বের ব্যাপার।
গুরপ্রীত সিং সান্ধু, গোলকিপার
এর আগেও একাধিক এএফসি এশিয়ান কাপ খেলেছি। এই নিয়ে আমার তৃতীয় এশিয়ান কাপ এটা। এই কথা ভাবলে গর্ব হয়। এই টুর্নামেন্টটা আমাদের কাছে স্পেশাল। প্রায় বিশ্বকাপের মতোই পরিবেশ পাওয়া যায় এই টুর্নামেন্টে। আমাদের উপভোগ করতে হবে। খুশি এবং আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে। ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে হবে। এ বার আমরা কঠিন গ্রুপে আছি। কিন্তু এমনই হওয়ার কথা। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে খেলে। উজবেকিস্তান ও সিরিয়াও ভাল দল। তবে নিজেদের খারাপ মনে করার কোনও কারণ নেই। আমরা এখানে আমাদের যোগ্যতার কারণেই এসেছি এবং নিজেদের সেরাটা দিয়ে এখান থেকে যথাসম্ভব ভাল ফল করে দেশের ফেরার চেষ্টা করব।
শুভাশিস বোস, ডিফেন্ডার
আমাদের কাছে এশিয়ান কাপই সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট। তাই এই টুর্নামেন্টে খেলার জন্য আমরা সবাই খুবই আগ্রহী। দোহায় এসে আমরা কয়েকটি ট্রেনিং সেশন করেছি। এটুকু বলতে পারি যে, এখানে সবাই নিজেদের সেরাটা দিতে মরিয়া। ম্যাচেও সেটাই হতে চলেছে। যাদের বিরুদ্ধেই খেলি বা ফল যাই হোক, সে সব না ভেবে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দেব আমরা। এই দলের মধ্যে আমাদের যার যার সে বারেও খেলার অভিজ্ঞতা আছে, সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে। আমরা এ বারের দলের তরুণ সদস্যদের সঙ্গে সেই অভিজ্ঞতা ভাগাভাগিও করে নেব, যাতে তা তাদের সাহায্য করবে। আমরা সৌভাগ্যবান যে আমরা ভারতের হয়ে মাঠে নামছি। দেশের বাইরে যেখানেই যাই, গ্যালারিতে আমাদের প্রচুর সমর্থক থাকেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে। এখানে বিমানবন্দরে আমরা দারুন অভ্যর্থনা পেয়েছি। কয়েকশো ভারতীয় এসেছিলেন আমাদের স্বাগত জানাতে। এখন শুনছি, প্রচুর ভারতীয় আমাদের খেলা দেখতে স্টেডিয়ামেও আসবেন। এই ব্যাপারটা আমাদের খুবই উজ্জীবিত করবে। গ্যালারি থেকে যদি সমর্থন পাই, তা হলে তো নিজেদের শক্তি বাড়েই।
লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে, উইঙ্গার
সর্বোচ্চ স্তরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারার খুবই সৌভাগ্যের ব্যাপার। ২০১৯-এর দলে ডাক পাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। তাই এ বার ভারতীয় দলে ডাক পাওয়াটা আমার কাছে স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো। অধীর আগ্রহে মাঠে নামার অপেক্ষায় রয়েছি। গত বছর আমি ভারতীয় দলের সঙ্গে অনেক উঁচু মানের ফুটবল খেলার সুযোগ পেয়েছি। এই স্মৃতিগুলো চিরকাল আমার সঙ্গে থেকে যাবে। আমার সৌভাগ্য যে, এই অভিজ্ঞতাগুলো আমার হয়েছে এবং আমি এশিয়ান কাপের দলে রয়েছি। আমার কাছে এটা বিশাল ব্যাপার। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলেছি বলে আন্দাজ করতে পারি অস্ট্রেলিয়া, উজবেকিস্তান, সিরিয়ার বিরুদ্ধে খেলার তীব্রতা কোন জায়গায় যেতে পারে। আমাদের সামনে কী কী আসতে চলেছে এবং সেগুলো কী ভাবে সামলাতে হবে, তা জানি। মানসিক ভাবে নিজেকে আরও শক্তিশালী মনে হচ্ছে এখন।
নিখিল পূজারি, ডিফেন্ডার
দোহায় আমাদের দলকে যে ভাবে অভ্যর্থনা জানানো হয়, তা অসাধারণ। আমি তো আশাই করিনি এ রকম কিছু হবে। নভেম্বরে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে কুয়েতের বিরুদ্ধে ওদের সমর্থকদের তুমুল চিৎকারের মধ্যে খেলেছিলাম আমরা। এখানেও মনে হচ্ছে সেরকমই অভিজ্ঞতা হবে। এই টুর্নামেন্টটা আমার কাছে খুব স্পেশাল। আমার মতো যাদের এই টুর্নামেন্টে অভিষেক হতে পারে, তাদের কাছেই এটা স্পেশাল। আমাদের কাছে এটা মিনি বিশ্বকাপ। এশিয়ার সব সেরা দল এবং ফুটবলাররা এখানে খেলবে। তাই আমাদের কাছে এটা একটা বিরাট সুযোগ।
রাহুল কেপি, উইঙ্গার
এই দলের সদস্য হতে পেরে আমি গর্বিত। মনে হচ্ছে যেন আমরা দেশের সৈন্য এবং যুদ্ধ করতে যাচ্ছি। ক্লাবে অনেক ভালবাসা পাই ঠিকই। কিন্তু জাতীয় দলে থাকা সবসময়ই স্পেশাল। আমার বাবা-মা তো খুবই খুশি। এ রকম একটা টুর্নামেন্টে ভারতীয় দলে থাকার সুযোগ পাওয়াটা তো অবশ্যই বড় ব্যাপার। এ জন্য ফেডারেশনকে ধন্যবাদ। এই সিস্টেমের মধ্যে প্রায় এক যুগ রয়েছি আমি। প্রায় প্রতিটি জুনিয়র জাতীয় দলের হয়েই খেলেছি আমি। অনেক ভাল অভিজ্ঞতা হয়েছে। এই অভিজ্ঞতাগুলোই আমাকে এই জায়গায় আসতে সাহায্য করেছে।
বিক্রমপ্রতাপ সিং, ফরোয়ার্ড
এশিয়ান কাপের দলে সুযোগ পাওয়াটা আমার এবং আমার পরিবারের কাছে গর্বের বিষয়। খুব ভাল লাগছে এখানে এসে। আশা করি, এখানে দেশের হয়ে প্রথম মাঠে নামার সুযোগ পাব। আশা করি, প্রথম আন্তর্জাতিক গোলও করতে পারব এশিয়ান কাপে। সুনীল ছেত্রীকে দেখে অনেক কিছু শিখি। আমাদের অনুশীলনে যখন ফিনিশিং-এর অনুশীলন হয় এবং সুনীল ভাইকে যখন ফিনিশ করতে দেখি, তখন দারুণ লাগে। বক্সের মধ্যে ওঁর মুভমেন্টও খুব ভাল লাগে।
(সৌজন্যে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন)