ব্রিস্টল: কেরিয়ারে অনেক খারাপ সময় এসেছে। চোট-আঘাত, অফফর্ম সবকিছুর সঙ্গেই সাবলীলভাবে লড়েছেন। বিশ্বের ১ নম্বর ব্যাটার তো আর এমনি এমনি হওয়া যায় না। কিন্তু সেবারের লড়াইটা একবারে অন্যরকম ছিল। লড়াইটা ছিল মাঠের বাইরের। ২২ গজে দায়িত্ব সামলানোয় সিদ্ধহস্ত ক্রিকেটের মাস্টার ব্লাস্টারের বাবা তখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। শরীর মাঠে থাকলেও, মন তো বাবার কাছেই। চেষ্টা করছিলেন বাবাকে বাঁচাতে। কিন্তু পারেননি। আর তা হয়ত জেদ হয়ে প্রতিফলিত হয়েছিল বিশ্বকাপের মঞ্চেই। সদ্য প্রয়াত বাবার স্মৃতি সঙ্গী করেই কেনিয়ার বিরুদ্ধে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে অপরাজিত ১৪০ হাঁকালেন। শুধু সেই বছরেরই নয়, আন্তর্জাতিক ওয়ান ডে ক্রিকেটের ইতিহাসে যে ইনিংস আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। আজকের ওস্তাদের মার সিরিজে আমাদের প্রতিবেদন সেই ইনিংস নিয়েই ---
সারাজীবন নিজের আগে দেশকে রেখেছেন। আর তাই অসুস্থ বাবার জোরাজুরিতেই বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলেন। ভাবতেও পারেননি যে আর কোনোদিন দেখা হবে না বাবার সঙ্গে, কথা বলা হবে না। ইংল্যান্ডের মাটিতে সেবার বসেছিল বিশ্বকাপের আসর। প্রতিদিনের মতই অনুশীলন সেরে এসে হোটেল রুমে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আচমকা রিসেপশন থেকে জানানো হয় যে বাড়ি থেকে ফোন এসেছে। স্ত্রী অঞ্জলি ফোনের ওপারে ছিলেন। তাঁর কাছ থেকেই পেলেন জীবনের সবচেয়ে খারাপ খবরটা। বাবা আর নেই...। তড়িঘড়ি দেশে ফিরলেন। ওদিকে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ হেরে বসল ভারতীয় দল। পরের ৩ ম্যাচ জিততেই হত। দলের স্বার্থে পেশাদার বর্ম গায়ে চাপিয়ে সচিন ফিরে এলেন ইংল্যান্ড। ১৯ মে বাবার মৃত্যু খবর পেয়েছিলেন। আর ২৩ মে কিনিয়ার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। বুকে পাথর রেখে ৪ দিন পর মাঠে নামলেন। বাকিটা ইতিহাস। ব্রিস্টলের কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সেদিন সচিন সচিন শব্দব্রহ্ম। ১০১ বলে অপরাজিত ১৪০ রান করেছিলেন সচিন। ৩টি ছক্কা এবং ১৬টি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন ইনিংসে। পরে বহুবার ইন্টারভিউতে জানিয়েছেন ওই বিশেষ দিনটির কথা। প্রতিটা বলে বাবার কথা চিন্তা করছিলেন। বুঝতে পারছিলেন প্রতিটা মুহূর্তে বাবা সঙ্গে আছেন। সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বাবাকে স্মরণ, যে ছবি পরের এক দশকেও বারবার দেখেছে সবাই।
সেদিন টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে হয়েছিল মহম্মদ আজহারউদ্দিনের ভারতকে। ২ ওপেনার সদগোপন রমেশ (৪৪) ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (১৩) দ্রুত ফিরলেও ইনিংসের রাশ ধরেন সচিন। পাশে পেয়েছিলেন রাহুল দ্রাবিড়কেও। তিনিও সেদিন অপরাজিত ১০৪ রানের ইনিংস খেলেন। ৫০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে বোর্ডে ৩২৯ রান তুলে নিয়েছিল ভারত। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৩৫ রানই তুলতে পেরেছিল কিনিয়া। ভারতও সেই ম্যাচ জিতে যায় ৯৪ রানে।