কলকাতা: উত্তরপ্রদেশের (Uttarpradesh) সহাসপুরে এক নিতান্ত ছোট্ট গ্রামের ছেলে। ছোট থেকেই ছেলেটার ক্রিকেটের প্রতি অদম্য নেশা। গ্রামের বড় ছেলেদের সঙ্গে খেলতে চলে যেতেন। সেখানে শুধু একটাই লক্ষ্য থাকত তাঁর। যত জোরে পারা যায় বোলিং করা। ধীরে ধীরে বয়স বাড়তে থাকল। খেলার প্রতি নেশা আরও বাড়ল। কিন্তু নিজের রাজ্য দলেই সুযোগ আসছিল না। অবশেষে কলকাতায় পাড়ি জমান। নজরে পড়েছিলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক ও বঙ্গ ক্রিকেটের আইকন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly)। বাংলার হয়ে খেলার সুযোগ চলে আসে। ব্যাস, সেই শুরু...এরপর বাংলার হয়ে রঞ্জি (Ranji Trophy) খেলেছে। খেলেছেন ক্লাব ক্রিকেটে মোহনবাগানের হয়ে। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের জার্সিতে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে অভিষেক ও সবশেষে জাতীয় দলে। ভারতীয় ক্রিকেটে শুরু হল মহম্মদ শামির (Mohammed Shami) পথ চলা...
সহাসপুরে থেকে ক্রিকেট কেরিয়ার গড়তে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। তাই কলকাতায় পাড়ি জমানোর পর প্রথমবার ডালহৌসি ক্লাবের সুমন চক্রবর্তীর অধীনে খেলেছিলেন শামি। সেখান থেকে টাউন ক্লাবের দেবব্রত দাসের নজরে আসেন। এই দেবব্রত দাসই এখন সিএবির সহ সচিব। সেই সময় তাঁর দ্রুত গতির বল কলকাতা ময়দানের বাঘা বাঘা ব্যক্তিত্বদের চমকে দিয়েছিল। নব্বইয়ের রঞ্জি জয়ী বাংলা দলের অধিনায়ক প্রাক্তন ক্রিকেটার সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও শামিকে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। খুব তাড়াতাড়ি বাংলা দলে ডাক চলে আসে তরুণ ডানহাতি পেসারের। লক্ষ্মীরতন শুক্লর অধিনায়কত্বে বাংলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন শামি। আইপিএলে ২০১৩ সালে গৌতম গম্ভীরের নেতৃত্বে কলকাতা নাইট রাইডার্সের জার্সিতে অভিষেক হয়। সেই বছরেই জানুয়ারিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে-তে অভিষেক। নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক।
২০১৪ সালে প্রেমিকা হাসিন জাহানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন শামি। তবে তাঁদের সুখের সংসার বেশিদিন টেকেনি। ৪ বছর বাদেই ২০১৮ সালে শামির বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ আনেন। এছাড়াও শামির দাদার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগও এনেছিলেন। এছাড়াও হাসিনের অভিযোগ ছিল ভারতীয় দলের সঙ্গে বিভিন্ন সফরে থাকাকালীন একাধিক মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন শামি। ভারতীয় পেসারের বিরুদ্ধে ব্যাভিচারিতার অভিযোগ তুলেছেন হাসিন। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই লালবাজার পুলিশ শামির একটি মোবাইল ফোনও বাজেয়াপ্ত করে। শামির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে আলিপুর আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়।
কিন্তু পরবর্তীতে শামি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন এবং সেই আপিলে তাঁর পক্ষেই রায়দান করা হয়। ফলে শামির গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার তো করাই হয়, পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগও খারিজ করা হয়। এরপরেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন হাসিন। কিন্তু হাইকোর্টও একই সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। এবার তাই সরাসরি স্পেশাল পিটিশন লিভের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন হাসিন। মহম্মদ শামি ভারতীয় দলের নিয়মিত সদস্য। তবে এই মামলায় কোনওভাবেই যাতে তারকা হাওয়ার জন্য শামি বাড়তি কোনওরকম সুবিধা না পান, সেই বিষয়টা এই স্পেশাল পিটিশনে উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেটের বোর্ডের বার্ষিক চুক্তি থেকেও একটা সময় শামির নাম ছেঁটে ফেলা হয়েছিল। যদিও মাঠের বাইরে ব্যক্তিগত জীবনের লড়াইয়ের পাশাপাশি নিজের মাঠে ফেরার লড়াই সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছিলেন এই ডানহাতি পেসার। চলতি বিশ্বকাপেই যার ফলও পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে ভারতীয় বোলারদের তালিকায় সর্বাধিক উইকেট শামির দখলেই। চলতি বিশ্বকাপেই মাত্র ৬ ম্যাচ খেলে সর্বাধিক ২৩ উইকেট নিয়ে নিয়েছেন। এখনও ফাইনাল বাকি। ডানহাতি পেসার তাঁর গতি, ইয়র্কারে ও বাউন্সারের ছোবলে রবিবারই যে দাপট দেখাবেন, তা আশা করাই যায়।