কলকাতা: বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। একটা নাম, হাজারো আবেগ। ঠিক যেমন ছিলেন একটা সময় সুনীল গাওস্কর (Sunil Gavaskar), ঠিক যেমন ছিলেন একটা সময় মহম্মদ আজহারউদ্দিন, ঠিক যেমন ছিলেন মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkar)। তাঁদের মতই বিরাটও ভারতীয় ক্রিকেটে (Indian Cricket) গত ১৫ বছরে গুল্ম থেকে মহীরুহ হয়ে ওঠা এক নাম। একটা ব্র্যান্ড, যিনি নীল জার্সি পরে মাঠে নামলে ১৩০ কোটি ভারতবাসী বিরাট বিরাট..বলে চেঁচিয়ে ওঠেন। ২০০৮ সালে যেদিন প্রথম জাতীয় দলের অন্দরমহলে পা রেখেছিলেন সেদিন তাঁরই আইকন সচিন তেন্ডুলকরের পা ছুঁয়েছিলেন। ওয়াংখেড়েতে সেই সচিনের সামনেই ওয়ান ডে ফর্ম্যাটে পুরুষদের ক্রিকেটে সচিনকে টপকে বিশ্বের সর্বাধিক সেঞ্চুরির মালিক হয়ে গেলেন বিরাট। 


তবে এই বিরাট থেকে কিং কোহলি হয়ে ওঠার পথটা কিন্তু একেবারেই সহজ ছিল না। প্রতিটা সেঞ্চুরির পর বিরাট আকাশের দিকে তাকান। তিনি তাঁর প্রয়াত বাবাকে উৎসর্গ করেন এই শতরানগুলো। সেমিফাইনালে সেঞ্চুরির পর তো মাঠেই বসে পড়েছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে একবার বিরাট বলেছিলেন যে তাঁর বাবাও ক্রিকেট ভালবাসতেন। তবে ছেলের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত সাফল্য দেখে যেতে পারেননি। আঠারো বছর বয়সে রঞ্জি খেলার সময় বাবার মৃত্যু। সেই শোক নিয়েই পরের দিন মাঠে নেমে রাজ্য দল দিল্লিকে হারের মুখ থেকে বাঁচিয়েছিলেন। খেলেছিলেন ৯০ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। ছোটবেলা থেকেই সচিনকে আইকন মানতেন। বাবর মৃত্যু ও সেই শোক নিয়ে ক্রিকেট মাঠে দাপট, এই ছবিটাও যেন মিলে গিয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের অতীত ও বর্তমানের।


২০০৮ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন। সেই বছরই জাতীয় দলের জার্সিতে একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল বিরাট কোহলির। তবে প্রথম সেঞ্চুরির জন্য অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ ১ বছর। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলকতার ইডেন গার্ডেন্সে সেই শতরানের পরই চেস মাস্টারের ট্যাগ লেগে যায়। ২০১১ সালে বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন। এরপর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মহেন্দ্র সিং ধোনির অবসরের পর টেস্ট ক্রিকেটের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পান বিরাট। তার তিন বছর পর সব ফর্ম্য়াটে অধিনায়ক হন। সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জনকারী ক্রীড়াবিদ হিসেবে ফোবর্সে নাম ওঠা থেকে শুরু করে গুচ্ছ গুচ্ছ রেকর্ড। অর্জুন পুরস্কার, পদ্মশ্রী, মেজর ধ্যানচাঁদ খেলরত্ন সম্মানে সম্মানিত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে লর্ডসে কোহলির মূর্তি উন্মোচন করে মাদাম তুসো জাদুঘর।


আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোট ৮০টি সেঞ্চুরি, ২৬ হাজার ৪৭৮ রান। ২০১৭-১৮ মরসুমে প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে বিশ্বকাপ জয় থেকে একধাপ দূরে থেমে যেতে হয়েছিল। সেবার অধিনায়ক ছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিলেন। এবার নেতৃত্বের ব্যাটন নেই। কিন্তু ব্যাটার বিরাট টুর্নামেন্টে যেন আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন। ফাইনালে নিজের ৫১ তম ওয়ান ডে সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারবেন বিরাট? কী মনে হয় আপনার?