মুম্বই: দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জয়ের হাতছানি। বিরাট কোহলির দল কি পারবে? ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে কোন দল হাসিমুখে যবনিকা টানবে, তা সময়ই বলবে। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন আরও ৬টি ম্যাচ রয়েছে যেখানে ম্যাচের শেষ ইনিংস এসে রং পালটে দিয়েছিল ম্যাচের। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেই ম্যাচগুলোর দিকে ---
ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পোর্ট অফ স্পেন, ১৯৭১: লো স্কোরিং এই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের ঘরের মাঠে ৭ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছিল অজিত ওয়াদেকরের ভারত। প্রথমে ব্যাট করে ২১৪ রানে অল আউট হয়ে যায় গ্যারি সোবার্সের দল। ৪ উইকেট নেন এরাপল্লী প্রসন্ন। জবাবে ব্যাট করতে নেমে দিলীপ সরদেশাইয়ের শতরানের ওপর ভর করে ৩৫২ রান বোর্ডে তুলে নেয় ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৬১ রান বোর্ডে তুলেছিল। চতুর্থ ইনিংসে ১২৪ রান তাড়া করতে নেমে ৩ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ জিতে গিয়েছিল ভারতীয় দল।
ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া, অ্যাডিলেড, ১৯৭৮: ৫ ম্যাচের সিরিজের শেষ ম্যাচ। অ্যাডিলেডে সেই ম্যাচে যে জিতবে সেই দলই সিরিজ পকেটে পুরে নিত। অ্যাডিলেডে ৪৭ রানে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল সেবার। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে অজিরা। প্রথম ইনিংসে ৫০৫ রান তোলে তারা। জবাবে প্রথম ইনিংসে ২৬৯ রান করে ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৬ রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। জয়ের জন্য ৪৯৩ রান তাড়া করতে নেমে ৪৪৫ রানে শেষ হয়ে ভারতের ইনিংস।
ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পোর্ট অফ স্পেন, ২০০২: ৫ ম্যাচের সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল। সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে সচিন তেন্ডুলকরের সেঞ্চুরির উপর ভর করে ৩৩৯ রান বোর্ডে তুলে নেয়। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস শেষ হয় ২৪৫ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের হয়ে একমাত্র লড়াকু ইনিংস খেলেন সৌরভ। ৭৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি। ৭৪ করেন ভিভিএস লক্ষ্মণ। ভারত ২১৮ বোর্ডে তুলতে সক্ষম হয়। চতুর্থ ইনিংসে ৩১৩ রান তাড়া করতে নেমে ২৭৫ রানে গুটিয়ে যায় কার্ল হুপারের দলের ইনিংস।
ভারত বনাম ইংল্যান্ড, চেন্নাই, ২০০৮: কেভিন পিটারসনের নেতৃত্বে সেবার ইংল্যান্ড এসেছিল ভারত সফরে। প্রথম টেস্ট ছিল চেন্নাইয়ে। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইংল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে অ্যান্ড্রু স্ট্রসের ১২৩ রানের ওপর ভর করে ৩১৬ রান বোর্ডে তুলে নেয় ব্রিটিশরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২৪১ রানে অল আউট হয়ে যায় ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ উইকেটে ৩১১ রান তুলে ইনিংস ডিক্লেয়ার দিয়ে দেয় ইংল্যান্ড। ভারতের সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮৭। চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেট হারিয়েই সেই জয় হাসিল করে নেয় ভারতীয় দল। সেঞ্চুরি হাঁকান সচিন তেন্ডুলকর। অর্ধশতরান হাঁকান ২ ওপেনার গৌতম গম্ভীর ও বীরেন্দ্র সহবাগ। ম্যাচে ভারতের নেতৃত্বে ছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।
ভারত বনাম ইংল্যান্ড: লর্ডসে রূপকথার জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল ভারত। ইংরেজ প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে ১৫১ রানে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ জিতে নিলেন বিরাট কোহলিরা। সেই সঙ্গে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ১-০ এগিয়ে গিয়েছিল ভারতীয় দল। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে কে এল রাহুলের সেঞ্চুরির উপর ভর করে ৩৬৪ রান বোর্ডে তুলে নেয় ভারত। জবাবে প্রথম ইনিংসে ৩৯১ রান করে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ উইকেটে ২৯৮ তুলে ইনিংস ডিক্লেয়ার দিয়ে দেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। লক্ষ্য ছিল ২৭২ রান। ৮.১ ওভার বাকি থাকা অবস্থায় ইংল্যান্ডকে ১২০ রানে অল আউট করে দেয় ভারত। ৫২তম ওভারে তিন বলের ব্যবধানে বাটলার ও অ্যান্ডারসনকে ফেরান সিরাজ। ইনিংসে তিনি ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। তিনটি উইকেট বুমরার। ইশান্ত শর্মা ২টি ও শামি একটি উইকেট নিয়েছিলেন।
ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া, ব্রিসবেন, ২০২১: গাব্বায় স্টার্ক, কামিন্স, হ্যাজেলউডদের শাসন করে ব্রিসবেনে জয় ছিনিয়ে আনলেন শুভমন গিল-ঋষভ পন্থরা। গাব্বায় চতুর্থ ইনিংস। শেষ দিনে জয় পেটে টার্গেট ৩২৮ রান। রান তাড়া নয়, ম্যাচ বাঁচাতে মাঠ নামবে রাহানে বাহিনী। আর বিশেষজ্ঞদের সেই ধারনায় জল ঢেলে দিলেন পন্থ, ঠাকুর, গিলরা। ৩২ বছর পর ব্রিসবেনের মাঠে টেস্ট ম্যাচ হারল অস্ট্রেলিয়া। রোমাঞ্চকর ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সিরিজ জিতল ভারত। শুভমন গিল, চেতেশ্বর পূজারা, ঋষভ পন্থদের দাপটে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে ৩২৮ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতল ভারত। সেই সঙ্গে চার ম্যাচের সিরিজ ২-১-এ জিতে নিয়েছিল ভারতীয় দল।
আরও পড়ুনঃ ডিআরএস ইস্যুতে বিরাটদেরই সমালোচনা করলেন এই প্রাক্তন ভারতীয় ওপেনারই