ব্রিসবেন: বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির আগের তিন টেস্টে যে পথ ধরেছিল ভারত, সেই চেনা রাস্তা ধরল না টিম ম্যানেজমেন্ট। একাধিক ক্রিকেটার চোট-জর্জরিত, তাই ভারতের প্রথম একাদশ কী হতে চলেছে তা নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহ ছিল অস্ট্রেলিয়া দল সহ বিভিন্ন মহলের। কিন্তু তাঁদের ধোঁয়াশার মধ্যে রাখতে সিরিজের শেষ তথা নির্ণায়ক টেস্টের আগের দিন চেনা পথে প্রথম একাদশ ঘোযণা করল না ভারত।


বরং সিডনি টেস্টে কার্যত হারের মতো জায়গা থেকে ড্র ছিনিয়ে আনার পর অজিদের যে শেষ টেস্টেও চোখে চোখে রেখেই লড়াই করবে ভারতীয় দল, সেই বার্তাই দেওয়া হল। অজি মিডিয়া দলের এত চোট-আঘাতের মাঝেও কীভাবে এমন আত্মবিশ্বাসী টিম ইন্ডিয়া জানতে চেয়েছিল ভারতের ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠৌরের কাছে।

যে প্রশ্নের উত্তরে চোয়াল শক্ত রেখেই বিক্রম বলেছেন, 'মানসিক কাঠিন্য আসে প্রস্তুতি থেকে। শুধু এই সিরিজের জন্য়ই নয়, গত বেশ কয়েক বছর ধরে ছেলেরা দারুণ খাটছে। ওদের দক্ষতার উপর যথেষ্ট আস্থা রয়েছে আমাদের। সিডনি টেস্টের পরও সেই বিষয়টাই কোচিং স্টাফদের পক্ষ থেকে ছেলেদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তোমরা নিজেদের ছন্দেই প্রস্তুত হও। আর একটা ইনিংস কখনই একটা দলের পরিচয় হতে পারে না।'



ভারতের ব্যাটিং কোচের কথাতেই পরিষ্কার, তিনি সিরিজের প্রথম টেস্টে অ্যাডিলেডে ভারতের ৩৬ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনেছেন। যে ম্যাচের পর তো অনেকেই সিরিজের সম্ভাবনা থেকে মুছে দেওয়ার পাশাপাশি অজিদের পক্ষে ৪-০ হওয়ার পক্ষেও ভবিষ্যৎবাণী পর্যন্ত করে ফেলেছিলেন। কিন্তু পরের মেলবোর্ন টেস্টেই সেই সম্ভাবনাকে প্রশান্ত মহাসাগরের ডুবিয়ে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছিল ভারত। তাও অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে ছাড়াই। তৃতীয় টেস্টে আবার সিংহহৃদয় লড়াইয়ে টেস্ট ড্র। আপাতত মেলবোর্নে জিততে পারলেই বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিও থাকবে ভারতেরই দখলে।

তৃতীয় টেস্টের পর চোট-আঘাতে জর্জরিত হয়ে কার্যত মিনি হাসপাতাল ভারতীয় শিবির। জসপ্রীত বুমরাহ, হনুমা বিহারী, রবীন্দ্র জাদেজা, মায়াঙ্ক আগারওয়ালরা নেই। আগেই চোটের জেরে ছিটকে গিয়েছেন উমেশ যাদব, মহম্মদ সামিও। এর মাঝেই আবার চিন্তা রবীচন্দ্রন অশ্বিন, ঋষভ পন্থের ফিটনেস নিয়েও। কিন্তু এক মাঝেও অজিদের উদ্দেশ্যে লড়াইয়ের বার্তা দিতে পিছপা হচ্ছে না ভারতীয় শিবির।

গাব্বায় ত্রয়োদশ অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে কেরিয়ারের শততম টেস্ট খেলতে নামা নাথান লিওন তাই সতীর্থদের সতর্ক  করে বলে রেখেছেন, 'এগিয়ে থেকে অজিরা টেস্ট খেলতে নামছে, এমন ধারণার কোনও অবকাশ নেই। ভারতীয় দলের বেশ কিছু ক্রিকেটার চোট পেলেও ওদের স্কোয়াডে একাধিক প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছে।'

পরিসংখ্যানের খাতা বলছে, ব্রিসবেনে খেলা ৫৫ টেস্টের মধ্যে ৩৩টিতেই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া, ড্র করেছে ১৩টিতে, আর হেরেছে মাত্র ৮টিতে। বাউন্সে ভরা গতিময় যে উইকেটে অজি পেসাররা যে আগের টেস্টগুলোর মতোই বাউন্সার বর্ষণের ধারা বজায় রাখবেন তা বলাই যায়, তার মাঝে ভারতীয় দলে নেই একাধিক ক্রিকেটার।

খাতায়-কলমের বিচারে অজিরা এগিয়ে থাকলেও মোমেন্টাম বা ভালো ক্রিকেটের রেশ কিন্তু রয়েছে রাহানে ব্রিগেডের পক্ষেই। সঙ্গে ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখ সিরিজ নির্ধারক গাব্বা টেস্টে টি নটরাজনের টেস্ট অভিষেক হয় কি না, সেটা দেখার দিকেও।