সিডনি: ক্রমাগত বেজে চলেছে চিন মিউজিক। প্যাট কামিন্স, জস হ্যাজেলউড ও মিচেল স্টার্কের আগুনে পেসের সব গোলাগুলি ঠিক কানের পাশ ঘেঁষে বেরিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যেই সেগুলো সোজা এসে আঘাত হানছে দেহে। হাত-কাঁধ-বুক-পেটে আছড়ে পড়ছে একের পর এক বাউন্সার। টেস্টের পঞ্চম দিনে ঠিক এরকমই পরিস্থিতির সামনে সিংহহৃদয় লড়াই মেলে ধরলেন হনুমা বিহারি, রবিচন্দ্রন অশ্বিনরা। না হারার মানসিকতা নিয়ে খেলতে নেমে কার্যত হারা বাজি বাঁচিয়ে নিল ভারত।


চতুর্থ ইনিংসে ১৩১ ওভার লড়াই করে সিডনি টেস্ট ড্র করল ভারত। ক্রিকেটের দীর্ঘতম ফর্ম্যাটে যা চতুর্থ দীর্ঘতম। শেষপর্বের হনুমা ১৬১ বল ও অশ্বিন ১২৮ টি বল খেলেন। পঞ্চম উইকেটে হনুমা-অশ্বিন অবিচ্ছেদ্য ৬২ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। ৪২.৪ ওভার তথা ২৫৯ বল ধরে তাদের দাঁতে দাঁত চেপে ক্রিজ আগলে পড়া থাকা লড়াই স্থান করে নেবে ইতিহাসের পাতায়। শেষপর্যন্ত ভারতের স্কোর ৫ উইকেটে ৩৩৪।



সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ইতিহাসে লেখা থাকবে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির তৃতীয় টেস্ট ড্র হওয়ার কথা। কিন্তু ক্রিকেটভক্তরা মনে রাখবেন ভারতীয় ক্রিকেটারদের সিংহহৃদয় লড়াই। দিনের শুরুতে যে লড়াইটা শুরু করেছিলেন ঋষভ পন্থ ও চেতেশ্বর পূজারা। পূজারা একদিক ধরে রেখেছিলেন স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে। আর পন্থ শুরু করেছিলেন কাউন্টার পাঞ্চ।

উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান যখন ক্রিজে ছিলেন তখন মনে হচ্ছিল হয়তো ম্যাচ বেরও করে নিতে পারে ভারত। দিনের শুরুতে দ্রুত অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে ফিরে যাওয়ার পর প্রথম ইনিংসে ব্যাট করার সময় চোট পাওয়া পন্থকে নামায় টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে পন্থ (৯৭) ও তাঁর কিছুটা পরে পূজারা (৭৭) ফিরে যেতে প্রচণ্ড কঠিন হয়ে পড়ে মঞ্চ। সেই অবস্থায় দলের হাল ধরে হনুমা-অশ্বিন জুটি।



নতুন জুটিকে ক্রিজে পেয়ে প্রত্যাশিতভাবে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ায় অজিরা। নতুন বল নিয়ে পেসারদের ফেরৎ নিয়ে আসেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক টিম পেইন। টেস্ট ক্রিকেটের এক নম্বর বোলার কামিন্স নতুন অস্ত্র পেয়েই শুরু করেন চিন মিউজিক বাজাতে। তাঁকে সঙ্গত দিতে শুরু করেন হ্যাজেলউড-স্টার্ক। তবে একাধিকবার দেহে আঘাত সামলে তাদের রুখে দেয় হনুমা-অশ্বিন জুটি।

পরে স্পিনার নাথান লায়নকে এনে মরিয়া চেষ্টা বাড়ালেও ভারতীয়দের জমাট রক্ষণ ভাঙা যায়নি। শেষপর্বে একটা দুটো ব্যাটের কানায় খোঁচা লেগে উইকেট নেওয়ার সুযোগও ফসকায় অস্ট্রেলিয়া। কারণ, ততক্ষণে চিন মিউজিকের যাবতীয় তাণ্ডব শুষে নিয়ে অজিদের আত্মবিশ্বাসকেই বেসুরো তালে বইয়ে দিয়েছিলেন হনুমা-অশ্বিন জুটি।