কলম্বো: ম্য়াচের সেরার পুরস্কার নেওয়ার সময় দীপক চাহার বলছিলেন, 'ক্রিকেট খেলা শুরু করার সময় এরকম একটি ইনিংস খেলার স্বপ্ন দেখতাম। হয়তো সব ক্রিকেটারই এরকম ইনিংস খেলে দলকে জেতানোর স্বপ্ন দেখে।'
স্বপ্নের ইনিংসই বটে। শ্রীলঙ্কার ২৭৫ রান তাড়া করতে নেমে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের অন্য়তম ভরসা সূর্যকুমার যাদব তখন আউট হয়ে ফিরছেন। ঝোড়ো ৫৩ রান করে। মাঠে প্রবেশ করলেন দীপক চাহার। আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের জার্সিতে গত দুই মরসুমে ডেথ ওভারে দুরন্ত বোলিং করে যিনি জাতীয় দলের নির্বাচকদের নজরে পড়েছেন। এবং ডেথ ওভার স্পেশালিস্ট হিসাবেই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সীমিত ওভারের ক্রিকেট সিরিজে সুযোগ পেয়েছেন। সেই চাহার কি না ভারতকে ম্যাচ জেতালেন ব্যাট হাতে!
মঙ্গলবার চাহার যখন নামলেন, স্কোরবোর্ডে জ্বলজ্বল করছে ভারত ১৬০/৬। ম্যাচ জিততে তখনও ২৩ ওভারে প্রয়োজন ১১৬ রান। কিছু পরে আউট হয়ে ফিরলেন ব্যাটিংয়ের শেষ ভরসা ক্রুণাল পাণ্ড্যও। বঢোদরার অলরাউন্ডার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে এরকম চাপের পরিস্থিতিতে অনেক ঝোড়ো ইনিংস খেলেছেন। সেই ক্রুণাল আউট হওয়ার পরে কার্যত ম্যাচ জয়ের আশা ভারতীয় সমর্থকদের সকলে ছেড়েই দিয়েছিলেন। ধরেই নিয়েছিলেন যে, সিরিজ নির্ণায়ক ম্যাচ হতে চলেছে তৃতীয় ওয়ান ডে।
তবে অন্য়রকম ভেবেছিলেন দীপক। ব্যাট হাতে পাল্টা লড়াই শুরু করেন তিনি। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেন ভুবনেশ্বর কুমার। দুই মিডিয়াম পেসার ব্যাট হাতে অষ্টম উইকেটে নাছোড় লড়াই করেন। অবিচ্ছেদ্য অষ্টম উইকেটে দুজনে ৮০ বলে ৮০ রান যোগ করে নাটকীয়ভাবে ম্যাচ জিতিয়ে দিলেন। ৮২ বলে ৬৯ রান করে ক্রিজে ছিলেন দীপক। লিস্ট এ-তে তাঁর প্রথম হাফসেঞ্চুরি। আর সেই হাফসেঞ্চুরি দলকে ম্যাচ ও সিরিজ জেতাল। ভুবনেশ্বর অপরাজিত রইলেন ২৮ বলে ১৯ রান করে। একসময় হারতে বসা ম্যাচ ৫ বল বাকি থাকতে জিতে নিল ভারত। এই নিয়ে টানা ৯টি দ্বিপাক্ষিক ওয়ান ডে সিরিজ জিতল ভারত।
মঙ্গলবার টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা তুলল ২৭৫/৯। তাদের হয়ে সর্বোচ্চ স্কোর করেন চারিথ আসালঙ্কা। ৬৮ বলে ৬৫ রান করেন তিনি। কভারের ওপর দিয়ে কুলদীপ যাদবের বল বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে ওয়ান ডে কেরিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি সম্পূর্ণ করেন আসালঙ্কা। তাঁর ১ ঘণ্টা ৪২ মিনিটের ইনিংসে ছিল ৬টি বাউন্ডারি। শেষ পর্যন্ত ভুবনেশ্বর কুমারের বলে পরিবর্ত হিসাবে ফিল্ডিং করতে নামা দেবদত্ত পড়িক্কলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার সময় শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকা বলেছিলেন যে, আগের ম্য়াচের চেয়েও এই ম্য়াচে পিচ দেখে বেশি রানের খেলা হবে বলে মনে হচ্ছে তাঁর। শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার ভাল শুরু করেছিলেন। ১৩.২ ওভারে ৭৭ রান যোগ করেন আবিষ্কা ফার্নান্দো ও মিনোদ ভানুকা। তবে চোদ্দোতম ওভারে পরপর দু'বলে মিনোদ ভানুকা ও ভানুকা রাজাপক্ষেকে ফিরিয়ে দিয়ে শ্রীলঙ্কা শিবিরে ধাক্কা দেন লেগস্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল। বিনা উইকেটে ৭৭ থেকে আচমকাই ৭৭/২ হয়ে যায় দ্বীপরাষ্ট্রের দল।
তবে ব্যাট হাতে পাল্টা লড়াই শুরু করেন আবিষ্কা ও চার নম্বরে নামা ধনঞ্জয় ডি'সিলভা। হাফসেঞ্চুরি করে ভুবনেশ্বর কুমারের বলে আউট হন আবিষ্কা (৭১ বলে ৫০ রান)। ধনঞ্জয়কে ফেরান দীপক চাহার। এরপর লঙ্কা ইনিংসের হাল ধরেন আসালাঙ্কা। আগের ম্যাচের মতোই শেষ দিকে চালিয়ে খেলে চামিকা করুণারত্নে ৩৩ বলে ৪৪ রান করেন। শ্রীলঙ্কা ৫০ ওভারে তোলে ৯ উইকেটে ২৭৫।