জাকার্তা: শুক্রবার সন্ধ্যায় মারডেকা কাপ সেমিফাইনালে হেরে বিদায় নিতে হয় ভারতকে। ৪-২-এ জিতে ফাইনালে তাজিকিস্তানের মুখোমুখি হতে চলেছে আয়োজক মালয়েশিয়া। এই ম্যাচে শুধু যে প্রতিপক্ষের এগারোজন ফুটবলারের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে সুনীলদের, তা নয়। গ্যালারির অন্তত হাজার পঞ্চাশ দর্শকের চিৎকারও সহ্য করে ম্যাচে মনোনিবেশ করতে হয় তাদের।


ভারতীয় কোচ এ দিন রক্ষণে আনোয়ার আলি ও শুভাশিস বোস এবং মাঝমাঠে অনিরুদ্ধ থাপাকে খেলাতে পারেননি তাঁদের চোটের জন্য। তাও ভারত এই ম্যাচে যথেষ্ট আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে। কিন্তু একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করায় শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি মুখে নিয়ে মাঠ ছাড়া হল না তাদের। 


ম্যাচের পরে কোচ স্টিমাচ বলেন, “কখনও কখনও আমরা ঠিক সময়ে বল বক্সে ফেলতে পারছিলাম না। অনেক অপেক্ষা করছিলাম এবং তার ফলে আমাদের ক্রসগুলোকে ওরা ব্লক করে দিচ্ছিল। শট নিতেও দেরী করছিলাম আমরা। ফুটবলে প্রতিপক্ষের বক্সের কাছাকাছি এলেই ভেবে নিতে হয় কত তাড়াতাড়ি গোল করবে। আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও উন্নতি করতে হবে”।  


ম্যাচের সাত মিনিটের মাথায় গোল করে দলকে এগিয়ে দেন মালয়েশিয়ার ডিয়নজন কুলস্। ১৪ মিনিটের মাথায় সেই গোল শোধ করেন নাওরেম মহেশ সিং। প্রথমার্ধে ভারতীয় রক্ষণের ভুল কাজে লাগিয়ে আরও দুটি গোল করে এগিয়ে যায় আয়োজকরা। ২০ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করেন আরিফ আইমান ও ৪২ মিনিটে ফয়জল হালিম ব্যবধান আরও বাড়ান। দ্বিতীয়ার্ধে, ৫১ মিনিটের মাথায় ব্যবধান কমান ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। কিন্তু তার পরেও, ৬১ মিনিটের মাথায় শেষ গোলটি করেন কোরবিন লরেন্স। 


থাইল্যান্ডের রেফারির একাধিক ভুল সিদ্ধান্তেরও শিকার হতে হয় ভারতীয় দলকে। এমনকী একশো শতাংশ ন্যায্য গোলও দেওয়া হয়নি তাদের। এই গোলটি দিলে ভারত ৩-৩ করে ম্যাচের ছবিটাই পাল্টে দিতে পারত। কিন্তু সে সুযোগ পায়নি তারা। 


দ্বিতীয়ার্ধে বক্সের ডানদিক থেকে ছাঙতের গোলমুখী শট গোলকিপারের গায়ে লেগে গোললাইন পার করে যাওয়ার পর তা ডিয়নজোহান ক্লিয়ার করেন। রেফারি কিন্তু গোলের বাঁশি বাজাননি! বারবার টিভি রিপ্লে দেখার অনুরোধ করেন ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। কিন্তু তাতেও কর্ণপাত করেননি রেফারি। পেনাল্টি, অফসাইড, ফ্রি কিক নিয়ে অনেক বিতর্ক হয় ঠিকই। কিন্তু গোললাইন পার করে যাওয়ার পরেও গোল না দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিরল। যা এদিন করে দেখান থাইল্যান্ডের রেফারি মোঙ্কোলচাই পেছরি। এ ছাড়াও রেফারির একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ভারতের বিরুদ্ধে গিয়েছে এই ম্যাচে।   


রেফারির এই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারতীয় অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী বলেন, “রেফারির সিদ্ধান্ত আমাদের পক্ষে গেলে কী হত, তা নিয়ে ভাবা ঠিক নয়। তবে ওই গোলটা পেলে আমরা যদি ৩-৩ করতে পারতাম, তা হলে সব কিছু অন্যরকম হত”। 


একশো শতাংশ ন্যায্য গোল না পেয়ে হতাশ ভারতীয়রা যখন খেলায় ফের মনোনিবেশ করার চেষ্টা শুরু করছিলেন, তখনই মালয়েশিয়া তাদের চতুর্থ গোলটি পেয়ে যায়। রক্ষণের ভুলেই গোললাইনের সামনে থেকে জালে বল জড়িয়ে দেন কোরবিন লরেন্স। 


ফিফা ক্রমতালিকায় তাদের চেয়ে ৩২ ধাপ পিছনে থাকা মালয়েশিয়ার এই চতুর্থ গোলটি আটকানো উচিত ছিল বলে মনে করেন সুনীল। বলেন, “নিজেদেরই দোষ দেব আমি। যখন আমাদের রক্ষণের আরও মজবুত হওয়া উচিত ছিল, ঠিক সেই সময় ওদের চতুর্থ গোলটি করতে দিই আমরা। এই ব্যাপারটা অন্তত আমাদের হাতে ছিল। তখন আমরা ছন্দে ছিলাম। দ্বিতীয়ার্ধে আমরাই নিয়ন্ত্রণ করছিলাম। কিন্তু চার নম্বর গোলটাই সব শেষ করে দিল”।  


জানুয়ারিতে এএফসি এশিয়ান কাপের মূলপর্বে নামার আগে ভারতের সামনে আরও পরীক্ষা রয়েছে। নভেম্বরে ভারতীয় দল পরপর দুটি ম্যাচ খেলবে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে। ১৬ নভেম্বর তারা কুয়েতে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলবে এবং ২১ নভেম্বর তারা কাতারের বিরুদ্ধে হোম ম্যাচ খেলবে। 


তার পরে তারা এশিয়ান কাপের গ্রুপ ‘বি’-র লড়াইয়ে নামবে ১৩ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়া, ১৮ জানুয়ারি উজবেকিস্তান ও ২৩ জানুয়ারি সিরিয়ার বিরুদ্ধে। তার আগে এই হারের পরেও দলের মধ্যে লড়াই করার ইচ্ছা ও প্রবণতা দেখে আশাবাদী কোচ ও অধিনায়ক।