ভুবনেশ্বর: বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজোর সপ্তমীর সন্ধ্যায় ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ম্যাচ খেলতে নামছে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। তবে তা কলকাতায় নয়, ভুবনেশ্বরের মাঠে। হোম ম্যাচ হলেও তা প্রতিবেশী রাজ্যের শহরে খেলতে হচ্ছে তাদের, এই নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও কলকাতায় এই সময় প্রশাসনিক সমস্যা থাকায় শনিবারের ম্যাচ সরানো ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। আর এ জন্য সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেন ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত (Carles Cuadrat)।


ভুবনেশ্বরে রওনা হওয়ার আগে কলকাতায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “সমর্থকদের জন্য আমার খুবই খারাপ লাগছে। এই ম্যাচটা ঘরের মাঠে খেলতে পারছি না আমরা। ঘরের মাঠে আমাদের প্রতিটি ম্যাচেই সমর্থকেরা আমাদের বাড়তি শক্তি জোগায়। কিন্তু ক্লাবের ভালর জন্যও তো আমাদের কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়”। 


ভুবনেশ্বরে হোম ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়ে কুয়াদ্রাত বলেন, “ভুবনেশ্বরে খেলার সিদ্ধান্তটা আমার। কারণ, এই সিদ্ধান্ত না নিলে আমাদের এর পরে (ডিসেম্বরে) মুম্বই ও ওড়িশা ম্যাচের মাঝখানে পড়ত ম্যাচটা। সেক্ষেত্রে ছ’দিনে তিনটে ম্যাচ খেলতে হতো। সেক্ষেত্রে প্রথম ম্যাচে কোনও খেলোয়াড় চোট পেলে, তাকে হয়তো তিনটি ম্যাচেই পাওয়া যেত না। এটা তো কোনও সঠিক সমাধান নয়। সে জন্যই সমর্থকদের জন্য আমি দুঃখিত। আর একটা বিকল্প ছিল শিলিগুড়ি। কিন্তু পুজোর জন্য সেটাও সম্ভব নয়। ভুবনেশ্বরে গিয়ে আমরা নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করার চেষ্টা করব”। 


টানা দু’টি ম্যাচে জিতে আসা প্রতিপক্ষ এফসি গোয়া যে দক্ষতার শীর্ষে রয়েছে, তা কার্যত স্বীকার করেই নিলেন কুয়াদ্রাত। গত মরশুম পর্যন্ত হায়দরাবাদের কোচ হিসেবে কাজ করা আর এক স্প্যানিশ কোচ মানোলো মার্কেজের নতুন দল এফসি গোয়া, যারা চলতি লিগের প্রথম দুই ম্যাচেই জিতে ইস্টবেঙ্গলের মুখোমুখি হচ্ছে। তাদের সম্পর্কে লাল-হলুদ কোচের বক্তব্য, “এফসি গোয়া প্রথম দুটো ম্যাচেই জিতে ছ’পয়েন্ট পেয়েছে। ওরা ওদের একশো শতাংশ দক্ষতা দিয়ে খেলছে। ডুরান্ড কাপে ওরা মোহনবাগানের কাছে হেরে সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে গিয়েছিল রেফারির ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে। ওরা ভবিষ্যতের জন্য একটা ভাল দল গড়ছে”।


এ রকম এক শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে খেলার জন্য তারা তৈরি বলেই দাবি করেন আইএসএল খেতাব জয়ী কোচ। কুয়াদ্রাতের মতে, “বেঙ্গালুরুতে শেষ ম্যাচে আমরা যথেষ্ট ভাল খেলেছি। নিঃসন্দেহে আমরা সেই ম্যাচে ওদের চেয়ে ভাল খেলেছিলাম। তা সত্ত্বেও আমরা হারি, কিছু সিদ্ধান্ত আমাদের বিরুদ্ধে যাওয়ায়। তবে কোনও অজুহাত দেব না। সেই হার থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি। প্রতি ম্যাচে আমাদের শুধু ভাল ফুটবল খেললে চলবে না, পয়েন্টও অর্জন করতে হবে। অনেক সুযোগ তৈরি করা বা প্রতিপক্ষকে কম সুযোগ দেওয়াই যথেষ্ট নয়। আমাদের প্রতিপক্ষকে শেষ করে দিতে হবে। আইএসএল-এর ওয়েবসাইটে সম্প্রতি প্রত্যাশিত গোলের যে পার্থক্যের তালিকা দেওয়া হয়েছে, সেই তালিকায় আমরা রয়েছি চার নম্বরে। আমার মনে হয় লিগ তালিকাতেও আমাদের এই জায়গাতেই থাকার কথা ছিল। প্রথম তিন ম্যাচ থেকে আমাদের ৬-৭ পয়েন্ট পাওয়ার কথা ছিল”।  


গত ৪ অক্টোবর বেঙ্গালুরুতে খেলে আসার পর শনিবার তারা নামছে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে। মাঝখানে ভারতীয় দলের খেলা থাকায় দু’সপ্তাহেরও বেশি বিশ্রাম পেয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের বেশির ভাগ ফুটবলার। এই বিরতিতে নেরোকার বিরুদ্ধে একটি প্রস্তুতি ম্যাাচও খেলে এবং ২-৩-এ হারে তারা। জর্ডন থেকে নবাগত ডিফেন্ডার হিজাজি মাহের সেই ম্যাচে প্রথম লাল-হলুদ জার্সি গায়ে মাঠে নামেন। 


কুয়াদ্রাত বলছেন, “দীর্ঘ ছুটির সময় আমরা ভারতীয় দলে খেলা আমাদের তিনজন ফুটবলারকে পাইনি। ওরা তিন দিন আগে অনুশীলনে যোগ দিয়েছে। এই সময়ে আমরা হিজাজি (মাহের)-কে ফিট করে তুলেছি। নেরোকার বিরুদ্ধে আমরা একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি। এই ম্যাচে আমরা মোবাশির, ভিপি-র (সুহের) মতো সেই সব ফুটবলারকে খেলিয়েছি, যারা ম্যাচে কম সময় পেয়েছে। সময়টাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। লম্বা ছুটি থাকলে সেই সময়টাকে বিভিন্ন ভাবে কাজে লাগানো যায়। নতুন কৌশল পরখ করে দেখা যায়। ফুটবলারদের শারীরিক উন্নতি ঘটানো যায়। গোয়ার মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে খেলতে হবে আমাদের। দীর্ঘ বিশ্রামের পর ছেলেরা আশা করি, এরকম একটা কঠিন ম্যাচে খেলার মতো শারীরিক জায়গায় থাকবে। তবে সারা মাসে এই একটাই ম্যাচ খেলছি আমরা, এটাই অদ্ভূত লাগছে। যদিও আমাদের নিজেদের কাজ করে যেতে হবে।" 


দলের মণিপুরী উইঙ্গার মহেশ সিং মারডেকা কাপে ভারতীয় দলের হয়ে যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন, তার প্রশংসা করে তাঁর ক্লাব কোচ বলেন, “মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে খুবই ভাল খেলেছে মহেশ। ভারতীয় দলের মতো ওকে আমরাও আক্রমণাত্মক ভূমিকাতেই খেলাই। লিগের ম্যাচেও সেই ভূমিকাতেই থাকবে ও।"   


দলের নবাগত জর্ডনিয়ান ডিফেন্ডার হিজাজি মাহের সম্পর্কে তিনি বলেন, “ও তো অনুশীলনে ভাল খেলছে। ফিট হয়ে উঠেছে। নেরোকার বিরুদ্ধে ৭০ মিনিট খেলেছে। ও ম্যাচে নামার জন্য তৈরি হচ্ছে”। কোচের কথায় হিজাজির শনিবার মাঠে নামার ইঙ্গিত রয়েছে যথেষ্ট।  


প্রচুর আক্রমণ করলেও প্রতিপক্ষের গোলের সামনে গিয়ে যে খেই হারিয়ে ফেলছেন ইস্টবেঙ্গল তারকারা, তা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই কুয়াদ্রাতের। তবে তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত দেখাচ্ছে না তাঁকে। বার্সেলোনার পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ট লেয়নডস্কির উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “গোলের সামনে ফিনিশ করা নিয়ে সমস্যা শুধু আমাদের নেই, সারা বিশ্বে সব দলেরই আছে। অনুশীলনে সব কিছুই করানো হয়। কিন্তু অনুশীলনে করা আর মাঠে করা এক জিনিস নয়। এর ফলে অবশ্য এই বিষয়ে উন্নতি হয়। আমাদের ছেলেরাও উন্নতি করছে। (রবার্ট) লেয়নডস্কির মতো ফুটবলারেরও এই সমস্যা হয়। আবারা দেখা যায় টানা পাঁচ ম্যাচে সে গোল করছে। আমরা অনেক সুযোগ তৈরি করছি। গোলও পাব”।


আরও পড়ুন: সম্পূর্ণ ফিট, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের একাদশে দেখা যেতে পারে স্টোকসকে


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial