করাচি: একদিনের ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্বিশতরান করেছিলেন ভারতের ব্যাটিং কিংবদন্তী সচিন তেন্ডুলকর। ২০১০-এর ২৪ ফেব্রুয়ারি গোয়ালিয়রে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন এই গ্রহের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান সচিন। সচিনের দ্বিশতরানের দিগন্তে পৌঁছনোর ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রাক্তন প্রতিদ্বন্দ্বীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক ইনজামাম উল হক।  সচিনের মতো ক্রিকেটার তিনি কখনও দেখেননি বলেও মন্তব্য করেছেন ইনজামাম।


তাঁর কেরিয়ারে ইনজামামকেও অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবেই মনে করতেন বিশেষজ্ঞরা। সেই ইনজামাম কেন সচিন সর্বকালের সেরা, তার চারটি কারণ জানিয়েছেন।

প্রাক্তন পাক ব্যাটিং তারকা ইনজামামের গলায় ঝরে পড়েছে সচিন সম্পর্কে তাঁর অবিমিশ্র শ্রদ্ধা। একটি ইউটিউব চ্যানেলে তিনি বলেছেন, ও ক্রিকেটের জন্যেই জন্মেছিল।আমার সবসময়ই মনে হয় ক্রিকেট আর সচিন ছিল একে অপরের জন্য।

সচিনের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রথম কারণ হিসেবে ইনজামাম একেবারে কম বসয়ে সেরা বোলারদের বিরুদ্ধে খেলার দক্ষতার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি এখনও অবাক হয়ে যাই, ১৬-১৭ বছর বয়সে  আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর ও এই সব কৃতিত্ব অর্জন করেছিল। এটা অনন্য সাধারণ ক্রিকেটারদের পক্ষেই সম্ভব। আসলে অনন্য সাধারণের থেকে বেশি যদি কিছু থাকে, তাহলে তা হল সচিন।

১৯৮৯-এ সচিনের পাকিস্তানে অভিষেক সফরের কথা স্মরণ করে ইনজামাম  পাকিস্তানের প্রথমসারির লেগ স্পিনার আব্দুল কাদিরের একটি ওভারে চারটি ছয় হাঁকানোর বহুচর্চিত ঘটনার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছেন।

সচিন বলেছেন, এটা মুখে বলা খুব সহজ।  ১৬ বছর বয়সে অভিষেকে ও ওয়াকার ও ওয়াসিমের মতো বোলারদের বিরুদ্ধে খেলেছিল। ওই বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে ও যে ধরনের ক্রিকেট খেলেছিল, তা চমকপ্রদ।

একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ২০০ টেস্ট খেলেছেন সচিন। ৫৩.৭৯ গড়ে তাঁর মোট রান ১৫,৯২১। ৪৬৩ একদিনের ম্যাচে ১৮,৪২৬ রান করেছেন তিনি। বিশ্বের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির মালিক তিনি।

রান করার  ও যেটা অনেকেই ভাবতে পারে না, এমন সব  রেকর্ড ভাঙার দক্ষতাকে সচিনের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় গুণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ইনজামাম। তিনি বলেছেন, ওর দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় গুণ হল ওর রেকর্ড। ওই সময় এত বেশি রান করার ধারণা ছিল না। সেরা প্লেয়াররা আট-সাড়ে আট হাজার রানেই থেমে যেতেন। শুধুমাত্র সুনীল গাওস্কর ১০ হাজার রান করেছিলেন এবং মনে হচ্ছিল, ওই রেকর্ড কখনও ভাঙবে না। কিন্তু সচিন রানের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এখন সচিনের ওই রানের পাহাড়ের রেকর্ড কে ভাঙে, তার অপেক্ষায় রয়েছি।

মানসিক দৃঢ়তাকে সচিনের তৃতীয় বড় গুণ বলে উল্লেখ করেছেন ইনজামাম। তিনি বলেছেন, ও মানসিকভাবে খুবই শক্তিশালী। আমি এমনটা বলছি, কারণ ও যখন ব্যাট করতে নামত, তখন সবসময়ই চাপে থাকত। সচিনের মতো কোনও ক্রিকেটারের এত ফ্যান ফলোয়িং আমি আমি দেখিনি। সারা বিশ্বে ওর ফ্যান ছিল। তাই প্রত্যেক ইনিংসে রান করার চাপ ওর ওপর থাকত।

সচিনের বোলিং দক্ষতাকে তাঁর প্রতিভার আরও একটি প্রমাণ বলে মন্তব্য করেছেন ইনজামাম।

ইনজামাম বলেছেন, ও এমনই প্রতিভাবান ক্রিকেটার যে লেগ স্পিন,অফ স্পিন ও মিডিয়াম পেস করতে পারত। আমি অনেক গ্রেট লেগ স্পিনারকে খেলেছি। কিন্তু তাদের গুললি চিনে নিতে অসুবিধা হয়নি। কিন্তু সচিন আমাকে ঝামেলায় ফেলত এবং বেশ কয়েকবার আমাকে আউট করেছে।

ইনজামাম বলেছেন, ভবিষ্যতে কেউ হয়ত এত বেশি রান করবে, কিন্তুআমি মনে করি ক্রিকেটে সচিনের মতো খেলোয়াড় নেই।

প্রাক্তন পাক অধিনায়ক বলেছেন, সচিনের ক্রিকেট থেকে কখনও অবসর নেওয়া উচিত ছিল না। ওকে খেলতে দেখাটা দারুণ একটা বিষয়। ক্রিকেট থেকে ওপর সরে যাওয়া উচিত ছিল না।

উল্লেখ্য, ২০১৩-তে আন্তর্তাজিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান সচিন।