কুন্তল চক্রবর্তী, নয়াদিল্লি: আইপিএলে প্রথম ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে জয় দিয়ে এবারের টুর্নামেন্টে অভিযান শুরু করেছিল তিনবারের চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু পরের দুটি ম্যাচে হারের মুখ দেখতে হয়েছে তাদের। সবচেয়ে বড় কথা , সামনে চলে এসেছে দলের হতশ্রী চেহারাটা। প্রতিপক্ষের সামনে তেমন কোনও লড়াই তুলে ধরতেও ব্যর্থ হয়েছে এমএস ধোনির নেতৃত্বাধীন দল।

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, রায়নার অভাব কতটা অনুভূত হচ্ছে সিএসকে-র ড্রেসিংরুমে। এবারের টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই অবশ্য ধাক্কা খেয়েছিল চেন্নাই শিবির। সুরেশ রায়না দেশে ফিরে এসেছিলেন। হরভজন সিংহও এবার আইপিএলে না খেলার কথা জানিয়ে দেন।

বিগত আইপিএল গুলিতে দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় ছিলেন বাঁহাতি রায়না। শুধু চেন্নাই-ই নয়, আইপিএলের খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম সেরা ছিলেন রায়না। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলে ৫,০০০ রান সংগ্রহের কৃতিত্ব তাঁরই।  আইপিএলে চার হাজার রানের পাশাপাশি ২০-বেশি উইকেট নিয়েছেন, এমন ক্রিকেটার নেই। ১৯৩ টি ম্যাচ খেলেছেন। এরমধ্যে পরপর ১৫০ ম্যাচ খেলেছেন। ১০০-র বেশি ক্যাচ, ৩৮ টা হাফসেঞ্চুরি রয়েছে তাঁর। আইপিএলে যে কোনও ব্যাটসম্যানের পক্ষে সর্বোচ্চ। স্বাভাবিকভাবেই এমন আত্মবিশ্বাসী খেলোয়াড়কে তো যে কোনও দলই মিস করবেই।

ওপেন থেকে শুরু করে তিন নম্বর, মিডল অর্ডার  যে কোনও পজিশনেই ব্যাট করে দিতে পারেন রায়না। পাওয়ার প্লে-তে তো বটেই ফিনিসারের ভূমিকাও নিতে পারেন। এজন্য ব্যাটিং অর্ডারে রায়না যে ফ্লেক্সিবিলিটি দিচ্ছিলেন, তার অভাব নিঃসন্দেহে অনুভব করছে চেন্নাই সুপার কিংস।

তাছাড়া সিএসকে দলের যাঁরা নিউক্লিয়াস তাঁদের গড় বয়স বেড়েছে। শেন ওয়াটসন রিটায়ার্ড ক্রিকেটার। সারা বছর খেলেন না, শুধু টি ২০ টুর্নামেন্টগুলিতে খেলেন। ধোনিও ১৫ মাস পরে বাইশ গজে ফিরেছেন। সবমিলিয়ে রায়নার অভাব আরও বেশি করে অনুভূত হচ্ছে।  এছাড়াও ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও রায়নার ভূমিকার কথা বলতে হয়। তিনি দুরন্ত ফিল্ডার। তুলনামূলকভাবে তাঁর বয়স কম। ৩২ বছর। দারুণ ফিট-ও। কভার বা পয়েন্টে ফিল্ডিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকেন।

রায়নার বিকল্প হিসেবে নিজেকে মেলে ধরার ক্ষমতা রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের নেই। একজন ক্রিকেটারের থাকা বা না থাকাটা টি ২০ ক্রিকেটে অনেক ফারাক গড়ে দেয়। এর নুমনা দেখা যাচ্ছে, সঞ্জু স্যামসন ও কেএল রাহুলের মতো ক্রিকেটারদের মধ্যে। কারণ, এটা তো ৫০ ওভারের খেলা নয়, যে একজনকে একটা লম্বা সময় ক্রিজে টিকে থাকতে হবে। টি ২০-তে কোনও ব্যাটসম্যান ৮-৯ ওভার ভালো খেলে দিলে ম্যাচের রঙই বদলে যায়। গত ম্যাচে দেখা গিয়েছে দিল্লির বিরুদ্ধে চেন্নাইয়ের রান ৩৬। সেখান থেকে পরের তিন ওভারে আসে মাত্র ৮ রান। এর ফলে রান তাড়া করার মতো পরিস্থিতিতেই ছিল না সিএসকে। টি ২০ এ ধরনের পরিস্থিতিতে কোনও একজন ক্রিকেটারের থাকা, না থাকাটা বড় বিষয় হয়ে ওঠে, বিশেষ করে সেই খেলোয়াড় যদি রায়না হন।

এবারের টুর্নামেন্টে রায়না থাকবেন না বলে চেন্নাই জানিয়ে দিয়েছে। বিকল্প খেলোয়াড় নিলেও রায়নার জায়গা নেওয়াটা খুবই কঠিন। তাঁর আইপিএলে রেকর্ড, ম্যাচ উইনিং দক্ষতা-এটা তো একদিনে আসেনি। ২০০৮ থেকে ২০১৪- টানা সাত বছর- প্রতিবারে ৪০০-বেশি করে রান করেছেন রায়না।

আইপিএলের সেরা ক্রিকেটারদের অন্যতম রায়না। সেজন্য তাঁর না থাকাটা চেন্নাইয়ের কাছে একটা বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দিয়েছে সিএসকে-র কাছে।