কুন্তল চক্রবর্তী, নয়াদিল্লি: এবার আইপিএল শুরুর আগেই ধাক্কা খেয়েছে গতবারের রানার্স আপ চেন্নাই সুপার কিংস। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে দলের সঙ্গে গিয়েও দেশে ফিরে এসেছেন সুরেশ রায়না। আর হরভজন সিংহ ব্যক্তিগত কারণে এবার খেলছেন না। দুই অভিজ্ঞ প্লেয়ারের দলে না থাকাটা নিঃসন্দেহে একটা বড় ধাক্কা। তাহলেও মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বাধীন দলের শক্তি আদৌ হেলাফেলার মতো নয়। আর যে দলের অধিনায়ক ধোনি, সেই দল তো সহজেই প্রতিপক্ষের সমীহ আদায় করে নেবে, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়াও, দলে এমন অনেক ক্রিকেটারই রয়েছেন, যাঁরা যে কোনও মুহূর্তে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন একার হাতে। বিশেষ করে স্পিন ডিপার্টমেন্টের কথা না বললেই নয়।
দলে অধিনায়ক ধোনির পাশাপাশি রয়েছেন আম্বাতি রায়ডু, কেদার যাদব, রবীন্দ্র জাডেজা, মুরলী বিজয়, অজি পেসার জস হ্যাজেলউড , লেগ স্পিনার কর্ণ শর্মা । ঘরোয়া ক্রিকেটে কর্ণর রেকর্ড বেশ ভালো। হাতে ফ্লিপারও রয়েছে তাঁর। রয়েছেন পিযুষ চাওলা, যিনি স্লো উইকেটে খুবই কার্যকরী বোলার। ইমরান তাহিরের আইপিএলে রেকর্ড উল্লেখযোগ্য। দীপক চাহার। ভালো ফাস্ট বোলার। সিএসকে-র হয়ে আইপিএলে তাঁর সামগ্রিক রেকর্ড কিন্তু নজরকাড়ার মতো। ফাফ ডুপ্লেসি-কতটা ভালো ব্যাটসম্যান, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শার্দুল ঠাকুর, ভারতীয় দলের পেসার টি ২০-র খুবই কার্যকরী বোলার। মিচেল স্যান্টনার-শুধু ভালো স্পিনারই নন, লোয়ার অর্ডারে ভালো ব্যাট করতে পারেন। ডোয়েন ব্র্যাভো-ম্যাচ উইনার অলরাউন্ডার। স্যাম ক্যারনের দিকে এবার নজর থাকবে।
ঋতুরাজ গায়কোয়াড় প্রথম ম্যাচে খেলতে পারবেন না, কারণ করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। রিপোর্ট এখনও নেগেটিভ আসেনি।


চেন্নাইয়ের সবচেয়ে বড় শক্তি বলা যায়-স্পিন অ্যাটাক। রবীন্দ্র জাডেজা, পিযুষ চাওলা, মিচেল স্যান্টনারদের নিয়ে গড়া স্পিন অ্যাটাক খুব শক্তিশালী। খেলা চলাকালে পিচ যখন কিছুটা স্লো হয়ে যাবে, এদিক-ওদিক হবে..তখন এই তিনি স্পিনার বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন। এই তিন স্পিনারেরই অভিজ্ঞতা প্রচুর। ইমরান তাহিরও স্পিন বোলিং আক্রমণের শক্তি বাড়িয়েছেন। আইপিএলে এর আগেও ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই স্পিনার। সেই হিসেবে স্পিন অ্যাটাক খুবই শক্তিশালী।
দলের খেলোয়াড়দের গড় বয়স বেশি। কিন্তু আইপিএলে এটা খুব বড় সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। ২০ ওভারের খেলা। এই ফরম্যাটে অনেক ক্ষেত্রেই তারুণ্যকে টেক্কা দিয়েছে অভিজ্ঞতা। যেখানে চার ওভার বল করতে হবে বা চার-পাঁচ ওভার ভালো ব্যাট করে দিলে ম্য়াচের গতিপ্রকৃতি বদলে যাবে, সেখানে ধোনি-ওয়াটসন, চাওলা, ব্র্যাভোদের মতো খেলোয়াড়রা যে কোনও তরুণ তারকা ক্রিকেটারদের মতোই ভয়ঙ্কর।
রায়না ছাড়াও এবার হরভজনকেও পাচ্ছে না চেন্নাই। রায়না দলের প্রয়োজনে মিডল অর্ডারেই শুধু নন, ওপরের দিকেও ব্যাট করে দিতে পারেন তিনি। অন্যদিকে, আইপিএলে যাঁরা ওভার পিছু কম রান দিয়েছেন, সে রকম স্পিনারদের মধ্যে অন্যতম হরভজন। আইপিএলে তাঁর ১৫০ উইকেট রয়েছে। সিএসকে-র হয়ে ২৩ ম্যাচে ২৪ উইকেট রয়েছে তাঁর। সুতরাং চেন্নাইয়ের হয়ে তাঁর রেকর্ড খুবই ভালো। এবার সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে যে ধরনের পিচে খেলা হবে, সেখানে এ রকম অভিজ্ঞ স্পিনারদের দরকার হবে। আইপিএলে অনেক সময় দেখা গেছে যে, অভিজ্ঞতা ছাপিয়ে গিয়েছে তারুণ্যকে। ফলে রায়না ও ভাজ্জির না থাকাটা অবশ্যই একটা বড় ফ্যাক্টর।

চেন্নাই কতটা তৈরি দল, তা জেনে নেওয়ার আগে দেখে নেওয়া যাক , সব ক্রিকেটার ফিট থাকলে প্রথম ম্যাচে ১৯ সেপ্টেম্বর মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে তাদের প্রথম একাদশ কেমন হতে পারে।

চেন্নাই দলে রয়েছেন বেশ কয়েকজন তারকা বিদেশি ক্রিকেটার। বিদেশিদের তালিকা অবশ্যই ভালো। কিন্তু মনে রাখতে হবে-প্রথম একাদশে চার বিদেশি ক্রিকেটারকেই খেলানো যেতে পারে। শেন ওয়াটসন, ডোয়েন ব্র্যাভো, ফাফ ডুপ্লেসি, মিচেল স্যান্টনার-এই চার বিদেশীকে নিয়ে নামতে পারে সিএসকে। বাকি ক্রিকেটাররা হতে পারেন, ধোনি, রায়ডু, কেদার যাদব, জাডেজা, চাওলা, দীপক, শার্দুল।
চেন্নাই সুপার কিংসের সবচেয়ে বড় শক্তি অবশ্যই অধিনায়ক ধোনি। যে পিচে উইনিং স্কোর বা কত রান তাড়া করাটা সহজ বা কঠিন হবে, তার হিসেবনিকেশের ক্ষেত্রে ধোনির জুড়ি মেলা ভার। খেলার সময় ম্যাচের আগের হিসেবনিকেশ তো কাজ করে না। খেলা চলাকালে ক্রমাগত বদলে যাওয়া সমীকরণের সঙ্গে তালমিলিয়ে দ্রুত পরিকল্পনা ছকে ফেলতে সিদ্ধহস্ত ধোনি। তাঁর ওপর এবার চাপও কম থাকবে। কারণ, সদ্যই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। এখন শুধু ফ্র্যাঞ্জাইজির হয়ে খেলা। ফলে অনেক খোলা মনে খেলতে পারবেন ক্যাপ্টেন কুল। সর্বোপরি এন শ্রীনিবাসনের মতো দলের মালিকদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে তাঁর ওপর।
দুর্বলতা
চেন্নাইয়ের শুরুর দিকে শেন ওয়াটসনের ওপর বেশি করে পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য নির্ভর করতে হবে। পাওয়ার হিটিং একটা বড় সমস্যা হতে পারে সিএসকে-র। কেদার, রায়ডু, ডুপ্লেসি-র মতো ভালো ব্যাটসম্যান থাকলেও বড় শট খেলার জন্য ওয়াটসনের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে। ফাফ ডুপ্লেসিকে অনেক সময় স্লো উইকেটে আটকে পড়তে দেখা গিয়েছে। ফলে অনেক সময় চাপ গিয়ে পড়ে মিডল অর্ডারে। মাঝের দিকে 'পুরানো ঘোড়া' ধোনি, ব্র্যাভো, জাডেজার মতো ব্যাটসম্যানদের ওপর নির্ভর করে থাকতে হবে। এ কারণে শুরুর দিকে চাপ থাকবে ওয়াটসনের ওপর। আগের সিজনগুলিতে দেখা গিয়েছে, অনেক ম্যাচেই শুরুটা খারাপ হলেও সামলে দিয়েছে মিডল অর্ডার। ধোনি, ব্র্যাভো-দের সঙ্গে ছিলেন রায়নার মতো ব্যাটসম্যান। রায়নাকে তিনি এমন একজন ব্যাটসম্যান, যিনি বিভিন্ন পজিশনে খেলে দলের ইনিংস এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। এবার রায়নার না থাকাটা অবশ্যই একটা বড় ধাক্কা।