কুন্তল চক্রবর্তী, নয়াদিল্লি: সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে ১৯ সেপ্টেম্বর শুরু হচ্ছে ক্রিকেট বিনোদনের মেগা ইভেন্ট আইপিএল। দর্শকশূন্য স্ডেডিয়ামে খেলা হবে এবারের আইপিএল। টি ২০ ক্রিকেটের এই লড়াইয়ের সুযোগ নিতে মুখিয়ে থাকতে পারে জুয়াড়িরা। আর ৮০-র দশক থেকেই শারজার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ বারেবারেই উঠেছে।
শারজায় একটা সময় নিয়মিত খেলা হত ভারত ও পাকিস্তানের। সেই সময় গ্যালারিতে বসে ম্যাচ চলাকালে ল্যান্ড লাইনে কথা বলছে দাউদ ইব্রাহিম। এমন ছবি বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছিল।
ওই সময় শারজায় ম্যাচে আম্পায়ারিং নিয়ে বারেবারেই প্রশ্ন উঠেছে। সেইসঙ্গে খেলাও চলত বছরের পর বছর। জিততেই থাকত পাকিস্তান, আর ভারত হারতেই থাকত।
অনেকবার তো প্রশ্ন উঠেছে, ভারতীয় খেলোয়াড়রা কি শারজায় ভয়ে ভয়ে খেলেন?

বেশ কয়েক বছর পর দিলীপ বেঙ্গসরকার একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন যে, ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুমেও একবার পৌঁছে গিয়েছিল দাউদ। কপিল দেব তাকে বাইরে বেরিয়ে যেতে বলেছিলেন।
৯০-এর দশকে কয়েক বছর খেলার পর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড আমিরশাহীতে ক্রিকেট না খেলার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই থেকে শারজা কাপে খেলা বন্ধ করে দেয় ভারতীয় দল।
আমিরশাহি থেকে  বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাট্টা কারবার ও আন্ডারওয়ার্ল্ড চালায় ডি-কোম্পানি-এটা কোনও নতুন কথা নয়।
করোনাভাইরাসজনিত সংকটের সময় সারা বিশ্বেই খেলাধূলো বন্ধ ছিল। এতে জুয়াড়িরা পড়েছিল মহা মুশকিলে। তাদের বহু কোটি টাকার লোকসান গুণতে হয়েছে। কারণ, ম্যাচ বন্ধ থাকলেও ম্যাচ ফিক্সিংয়ের ধান্দাও তো বন্ধ।
বিগত কিছুদনি আগে ২২ গজে ক্রিকেট ফিরেছে। কিন্তু আইপিএল এমন এক টুর্নামেন্ট যার সম্পর্কে ক্রিকেট অনুরাগীদের আকর্ষণ প্রচুর। আর এটাই অর্থ রোজগারের সুযোগ জুয়াড়িদের কাছেও।
প্রতিটি বলেই বাজি। একটা মেডেন ওভার ম্যাচের সমীকরণ বদলে দেবে। পরপর তিনটি ছয় ম্যাচের রঙ পাল্টে দেয়। এমন একটা টুর্নামেন্টে জুয়া খেলার সুযোগ তুলতে জুয়াড়িরা মুখিয়ে থাকে।

জুয়াড়িদের স্বর্গরাজ্যে এবারের আইপিএল। এজন্য বিসিসিআই অতিরিক্ত সতর্ক। বোর্ডের দুর্নীতি দমন শাখার ৮ সদস্য ইতিমধ্যেই দুবাই পৌঁছে গিয়েছেন। বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন পর্বের পর তাঁরা খেলোয়াড়দের সচেতন করতে অনলাইন 'ক্লাস' শুরু করবেন।
রাজস্থান পুলিশের প্রাক্তন ডিজি তথা বোর্ডের দুর্নীতি দমন শাখার প্রধান অজিত সিংহ এবিপি আনন্দকে বলেছেন, শীঘ্রই তারা খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু করতে পারেন। এ ব্যাপারে অনলাইনেই ক্লাস নেওয়া হবে।
বোর্ডের এক সূত্র এবিপি আনন্দকে জানিয়েছে, প্রায় মাস দুয়েক খেলোয়াড়দের আমিরশাহিতে থাকতে হবে। বায়ো-বাবলে থেকে খেলোয়াড়রা সোশ্যাল মিডিয়ায় যে কোনও কারুর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বুকি ও ম্যাচ ফিক্সাররা খেলোয়াড়দের ভুল পথে চালিত করতে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল কাজে লাগাতে পারে। দুর্নীতি দমন শাখার আধিকারিকরা আট দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে পৃথক পৃথক ভাবে কথা বলবেন এবং জুয়াড়িদের কাছ থেকে কীভাবে সুরক্ষিত থাকা যায়, সেই পরামর্শ দেবেন।
দাউদের অন্ধকার জগত যেখান থেকে চলে, সেই আমিরশাহিতে এবার আইপিএল হচ্ছে। এজন্য বোর্ডের দুর্নীতি দমন শাখার ভূমিকা এবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।