সন্দীপ সরকার, কলকাতা: মাটির এক চিলতে বাড়ি। এক কামরা। সেখানেই ঠাসাঠাসি করে বাস চারজনের। গৃহকর্তা মিরাজ লস্কর (Miraj Laskar) পেশায় দর্জি। ছোট থেকেই ক্রিকেট অন্ত প্রাণ। আর সেই ক্রিকেট প্রেমের জোরেই ঝাঁ চকচকে গাড়ি জিতে গিয়েছেন মিরাজ। হইচই পড়ে গিয়েছে গোটা গ্রামে। হবে নাই বা কেন! গ্রামে আর কারও নিজস্ব গাড়ি নেই যে।


শুনলে মনে হবে, বাস্তব নয়। যেন সিনেমার চিত্রনাট্য। অনেকটা বলিউডের সিনেমা 'ফেরারি কা সওয়ারি'র মতো অবিশ্বাস্য গল্প। যদিও মিরাজের জীবনে এখন এটাই সত্যি।


সুন্দরবনের বাসন্তী থানা এলাকার ভাঙনখালি গ্রাম। স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে একচিলতে মাটির বাড়িতে বাস করেন মিরাজ। আইপিএলের (IPL 2023) কল্যাণে এখন তিনিই আস্ত একটি গাড়ির মালিক! এবিপি লাইভকে মিরাজ বলছিলেন, 'ছোট থেকেই ক্রিকেট আমার জীবন। ভারতের সব ম্যাচ দেখি। আইপিএলের কোনও ম্যাচ বাদ দিই না। আমি পেশায় দর্জি। অন্যের দোকানে কাজ করি। পোশাক তৈরির ফাঁকেই মোবাইল ফোনে জিও সিনেমায় (Jio Cinema) আইপিএলের ম্যাচ দেখি।'


মিরাজ যোগ করলেন, 'আচমকাই একদিন দেখলাম, জিও সিনেমায় ম্যাচ সম্প্রচারের সময় একটা প্রতিযোগিতা হচ্ছে। জিতো ধন ধনা ধন। সেদিন ছিল পয়লা বৈশাখ। ১৫ এপ্রিল। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের সঙ্গে দিল্লি ক্যাপিটালসের ম্যাচ চলছিল। জিও সিনেমার প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে অনলাইনেই একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিই। তারপরই আমাকে ফোন করে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি সঠিক উত্তর দিয়েছি আমি। পুরস্কার হিসাবে মারুতি সুজুকির ব্যালেনো গাড়ি জিতেছি। মুম্বই থেকে গাড়ি কালীঘাটের শো রুমে আসবে। সেখান থেকেই আমার হাতে তুলে দেওয়া হবে। চালক দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও ওরা করে দেবে।'


বাড়িতে গাড়ি রাখার জায়গা আছে? লাজুক হেসে মিরাজ বললেন, 'খালি জায়গা রয়েছে কিছুটা। সেখানেই রাখা হবে।' পরিবারের সকলে কতটা খুশি? 'দারুণ খুশি। কোনওদিন ভাবতেও পারিনি যে, আমরাও গাড়ি চড়ব। মনে হচ্ছে যেন স্বপ্ন সফল হল। তবে পরিশ্রম করেছি আর সৎপথে থেকেছি। বিশ্বাস ছিল ঈশ্বর একদিন সদয় হবেন।'


আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে সমর্থন করেন। তবে বিরাট কোহলির অন্ধ ভক্ত মিরাজ। বলছিলেন, 'কোহলির খেলা আমার দারুণ লাগে। কেকেআরের সমর্থক হলেও আরসিবির ম্যাচও দেখি। ভাল লাগছে আরসিবি ম্যাচ থেকেই পুরস্কার জিতেছি বলে।'


তাঁর গাড়ি জেতার খবর জানাজানি হতেই গ্রামে উৎসবের আবহ। মিরাজ বলছেন, 'বন্ধুরা, পরিবারের সদস্যরা, আত্মীয়স্বজন সকলে ভীষণ খুশি। সকলে খাওয়ানোর আব্দার করেছিল। সদ্য ঈদ গেল। সকলকে বিরিয়ানি খাইয়েছি। মিষ্টি বিতরণ করেছি গ্রামে।' নিজে গাড়ি চালাতে জানেন না। ৩৪ বছরের মিরাজ দ্রুত গাড়ি চালানো শিখে ড্রাইভিং লাইসেন্স করিয়ে নিতে চান।


মিরাজ-সহ গোটা গ্রাম অধীর অপেক্ষায় রয়েছে। কবে আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। গ্রামে আসবে 'মহার্ঘ' অতিথি।


আরও পড়ুন: ৭ ম্যাচে ৫ ওপেনিং জুটি! বিরাট যুদ্ধের আগে বোলিং নিয়েও উদ্বেগে কেকেআর