সন্দীপ সরকার, কলকাতা: প্রত্যেক ম্যাচেই তিনি ইনিংসের শুরুটা ভাল করছিলেন। কিন্তু বড় রান আসছিল না। কোনও ম্যাচে ১০, তো কোনও ম্যাচে ৩২ বা ৩৮ রান করে উইকেট ছুড়ে দিয়েছেন। টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের (PBKS vs MI) পরপর দুই পরাজয়ের পরেও অনেকে আঙুল তুলেছিলেন ঈশান কিষাণের (Ishan Kishan) ব্যর্থতার দিকে।
বুধবারের মোহালিতে যেন নবজন্ম হল ঝাড়খণ্ডের তরুণ উইকেটকিপার ব্যাটারের। মাথার ওপর ২১৪ রানের বোঝা। তার ওপর বিপক্ষে অর্শদীপ সিংহ, স্যাম কারানের মতো পেসার। যাঁরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও বেশ পরিচিত নাম। এক কথায় অগ্নিপরীক্ষা। ঈশান জবাব দিলেন সাতটি চার ও চার ছক্কায়। মাত্র ৪১ বলে ৭৫ রান। স্ট্রাইক রেট প্রায় ১৮৩। সূর্যকুমার যাদবের সঙ্গে জুটি বেঁধে পাঞ্জাব কিংসের মুঠো থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিলেন বাঁহাতি ব্যাটার। ম্যাচের সেরাও হলেন ঈশান।
ছাত্রের সাফল্যে গর্বিত কোচ উত্তম মজুমদার (Uttam Mazumdar)। যিনি অভিজ্ঞ স্বর্ণকারের মতো গড়ে তুলেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ অলঙ্কার। নয়াদিল্লি থেকে মোবাইল ফোনে উত্তম বলছিলেন, 'সামনে দেশের মাটিতে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ। তার আগে ঈশানের ফর্মে ফেরা ভীষণ জরুরি ছিল। দারুণ ইনিংস খেলেছে। দলকে ম্যাচ জিতিয়েছে। আমি খুব খুশি।'
সমস্যাটা কোথায় হচ্ছিল? উত্তম বলছেন, 'ওর প্রত্যেক ইনিংসের শুরুটা ভাল করছিল। তারপর আউট হয়ে যাচ্ছিল। বড় ইনিংসে পরিণত করতে পারছিল না। সব ক্রিকেটারের কেরিয়ারেই এরকম সময় আসে।' সেখান থেকে কোন মন্ত্রে ঘুরে দাঁড়ালেন ঈশান, জানিয়েছেন উত্তম। বলেছেন, 'দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলতে যখন ও এখানে এসেছিল, ঈশানের সঙ্গে প্রায় ঘণ্টাচারেক কথা বলেছিলাম। ওকে বলেছিলাম, ক্রিজে গিয়ে নিজেকে সময় দাও। অন্তত ৪০ বল খেলতে হবে, এরকম লক্ষ্য নিয়ে নামো। ওর হাতে যা শটের বৈচিত্র্য, তাতেই বড় রান আসবে। মন দিয়ে সেই কথাগুলো শুনেছিল। পরের ম্যাচেই কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে ঝোড়ো হাফসেঞ্চুরি করে।'
প্রত্যেক খেলোয়াড়ের কেরিয়ারেই উত্থান-পতন থাকে। খারাপ সময় কাটিয়ে ওঠার জন্য ঈশানকে কোন মন্ত্রে দীক্ষা দিয়েছেন? 'আমি ওকে বলেছিলাম, ডায়েরি লিখতে। রোজ সমস্ত ঘটনা সংক্ষেপে লিখে রাখতে। সেই থেকে বেশ কয়েক বছর ধরে ডায়েরি লেখে ঈশান। নিজের সাফল্যের কথা লেখে। ব্যর্থতার কথাও। কোথায় ভুল হচ্ছে, কোন শটটা খেলা উচিত হয়নি, সব লিপিবদ্ধ করে রাখে। এটাই ওকে আত্মবিশ্লেষণে সাহায্য করেছে। ঘুরে দাঁড়িয়েছে ঈশান,' বলছিলেন ঈশানের বাঙালি কোচ।
আরও পড়ুন: রাহুলের আইপিএল অভিযান কি শেষ? টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নামা নিয়েও প্রশ্ন
অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ভারতের মাটিতে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ। ঋষভ পন্থ না থাকায় বিশ্বকাপের ভারতীয় দলে ঈশানের জন্যও দরজা খুলে যেতে পারে। আশাবাদী উত্তম। বলছেন, 'আইপিএলের এই পর্বে ধারাবাহিকভাবে ভাল ইনিংস খেলতে পারলে বিশ্বকাপের দলে ওকে দেখা যাওয়াই উচিত।'