কলকাতা: আইপিএল মানেই চার-ছক্কার বন্যা। গুচ্ছ গুচ্ছ রানের ফুলঝুরি। মাত্র ১২০ বলে ইনিংস। কিন্তু সেখানেও আড়াইশোর বেশি রান বোর্ডে তুলে দিচ্ছেন ব্য়াটাররা। সত্যি, এমনটাও সম্ভব!? একটা সময় ছিল, যখন পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটেও আড়াইশো রান বোর্ডে তুলে ফেলা মানে বিশাল লক্ষ্যমাত্রা ছিল দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা দলের সামনে। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। টেস্ট-ওয়ানডের পর গুটি গুটি পায়ে বিশ্ব ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটের জনপ্রিয়তাও বেড়েছে। একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হচ্ছে চারিদিকে। ধ্রুপদী ঘরানার ক্রিকেটীয় শটের বাইরে গিয়েও নতুন নতুন একাধিক শটের আবিষ্কার হয়েছে। সর্বােপরি কুড়ির ফর্ম্য়াটে ব্যাটাররাই রাজত্ব করছেন এখন। এবারের আইপিএলেও দেখা যাচ্ছে যার নিদর্শন। গতকালের ম্যাচই ধরুন। পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৫৭ রান বোর্ডে তুলে ফেলেছিল লখনউ সুপারজায়ান্টস। এবারের টুর্নামেন্টে যে কোনও দলের করা সর্বাধিক স্কোর। আর আইপিএল ইতিহাসে দ্বিতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছে লখনউয়ের ইনিংসটি। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক টুর্নামেন্টে গত ১৬ বছরে ইনিংসে সর্বাধিক স্কোরের তালিকায় রয়েছে কোন কোন ম্যাচ -
প্রথম স্থানে রয়েছে ২০১৩ সালে আরসিবি বনাম পুণে ওয়ারিয়র্স ম্যাচ। সেই ম্যাচে পুণের বিরুদ্ধে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৬৩ রান বোর্ডে তুলেছিলেন বিরাট-গেলরা। জবাবে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৩ রানই বোর্ডে তুলতে পারে অ্যারন ফিঞ্চের নেতৃত্বাধীন পুণে। সেই ম্য়াচেই আইপিএলের ইতিহাসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ অপরাজিত ১৭৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ক্রিস গেল। ৬৬ বলের ইনিংসে ১৩টি বাউন্ডারি ও ১৭টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন তিনি। বুঝতেই পারছেন সেদিন গ্যালারিতে থাকা দর্শকদের উন্মাদনা কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে।
গতকালের ম্য়াচে লখনউ সুপারজায়ান্টসের বিরুদ্ধে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পাঞ্জাব অধিনায়ক শিখর ধবন। ম্যাচের পর নিজের সিদ্ধান্তের জন্য হাত কামড়েছেন কি না তা অবশ্য জানা নেই। ব্যাট করতে নেমে কাইল মায়ের্স ২৪ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন। হাঁকান ৭টি বাউন্ডারি ও ৪টি ছক্কা। মার্কাস স্টোইনিস তাঁর ৪০ বলে ৭২ রানের ইনিংসে ৬টি বাউন্ডারি ও ৫টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। এছাড়াও তরুণ আয়ুশ বাদোনি ২৪ বলে ৪৩ ও নিকোলাস পুরান ১৯ বলে ৪৫ রান করেন। পাঞ্জাব বোলারদের কি দৈন্যদশা হয়েছিল তা গতকাল যারা টিভির সামনে বা গ্যালারিতে ছিলেন তাঁরাই বুঝতে পারবেন। ২৫৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ১৯.৫ ওভারে ২০১ রানে অল আউট হয়ে যায় প্রীতি জিন্টার ফ্র্যাঞ্চাইজি।
তালিকায় তৃতীয় স্থানে ফের আরসিবি। এবার প্রতিপক্ষ গুজরাত লায়ন্স। ২০১৬ সালে ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৪৮ রান বোর্ডে তুলেছিল সেই ম্য়াচে বিরাটের দল। ৫২ বলে অপরাজিত ১২৯ রান করেছিলেন এবি ডিভিলিয়ার্স। প্রাক্তন প্রোটিয়া তারকার ইনিংস সাজানো ছিল ১০টি বাউন্ডারি ও ১২টি ছক্কায়। শতরান হাঁকিয়েছিলেন বিরাট কোহলিও। ৫৫ বলে ১০৯ রানের ইনিংসটিতে ছিল ৫টি বাউন্ডারি ও ৮টি ছক্কা। রান তাড়া করতে নেমে ১০৪ রানে অল আউট হয়ে যায় গুজরাত লায়ন্স।
তালিকায় চতুর্থ স্থানে ২০১০ সালে চেন্নাই সুপার কিংস বনাম রাজস্থান রয়্যালস দ্বৈরথ। সেই ম্যাচে ধোনির দল প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রান করেছিল। লোয়ার অর্ডারে নেমে ৫৬ বলে ১২৭ রান করে ম্য়াচের সেরা হয়েছিলেন মুরলি বিজয়। তাঁর ইনিংসটি সাজানো ছিল ৮টি বাউন্ডারি ও ১১টি ছক্কায়। এলবি মর্কেল ৬২ রান করেছিলেন। জবাবে রান তাড়া করতে নেমে লড়াই করলেও ৫ উইকেট হারিয়ে ২২৩ রানই বোর্ডে তুলতে পারে রাজস্থান। নমন ওঝা ৫৫ বলে ৯৪ রান করে অপরাজিত থেকে যান।
প্রথম পাঁচের সবার শেষে কলকাতা নাইট রাইডার্সের একটি ইনিংসও রয়েছে। ২০১৮ সালে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৪৫ রান বোর্ডে তুলেছিল কেকেআর। ওপেনে নেমে ৯টি বাউন্ডারি ও ৪টি ছক্কার সাহায্যে ৩৬ বলে ৭৫ রান করেছিলেন সুনীল নারাইন। দীনেশ কার্তিক ২৩ বলে ৫০ করেছিলেন। আন্দ্রে রাসেলের ব্যাট থেকে এসেছিল ১৪ বলে ৩১ রানের ঝোড়ো ইনিংস। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ২১৪ রানেই থেমে যায় পাঞ্জাবের ইনিংস।
এমন দুশোর গণ্ডি পেরোনো আইপিএল ইনিংস আরও রয়েছে। তবে আমরা প্রথম পাঁচটি ইনিংস নিয়েই আজ আলোচনা করলাম। আগামীতে হয়ত এই টুর্নামেন্টে আরও অনেক রেকর্ড ভাঙবে-গড়বে। আর তার সক্ষী থাকবে গোটা ক্রিকেটবিশ্ব।