সন্দীপ সরকার, কলকাতা: কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) যখন শেষবার আইপিএল (IPL) চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, করোন নামের কোনও রোগের কথা শোনেইনি আমজনতা। মার্কিন মুলুকের মসনদে বারাক ওবামা। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তখন রাজনীতির আঙিনায় নয়, বরং ডব্লিউ ডব্লিউ ই-র (ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেনমেন্ট) রিংয়ে মাঝে মধ্যে দেখা যেত। শাহরুখ খান তখনও পাঠান-জওয়ানের মতো জোড়া ব্লকবাস্টার দেননি। তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র আব্রামের বয়স বছর খানেক। লিওনেল মেসি তখনও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পাননি। দেশের জার্সিতে কোপা জেতাও হয়নি। পেলে-মারাদোনারা জীবিত। বায়ুসেনার পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে কেউ চিনতেনই না।
সেটা ছিল ২০১৪। আর এখন ২০২৪। মাঝে কেটে গিয়েছে দশ-দশটা বছর। আর দীর্ঘ এই এক দশক ট্রফির অপেক্ষায় হা পিত্যেশ করে বসে থেকেছেন নাইট ভক্তরা। ট্রফির দেখা মেলেনি। হাতে থেকে গিয়েছে শুধু পেনসিল।
দীর্ঘ এই অপেক্ষার অবসান ঘটাতে তৎপর কেকেআর কর্তৃপক্ষ। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখতে চাইছে না কেকেআর টিম ম্যানেজমেন্ট। সেই মতো শুরু হয়ে গিয়েছে কেকেআরের অনুশীলনও। তবে ইডেন গার্ডেন্সে নয়, মুম্বইয়ে কেকেআরের অ্যাকাডেমিতে।
আইপিএলের সূচি এখনও ঘোষণা করা হয়নি। তবে বিভিন্ন সূত্র মারফত যা জানা যাচ্ছে, তাতে টুর্নামেন্ট শুরু হতে পারে ২৩ মার্চ। ২৯ মে হতে পারে টুর্নামেন্টের ফাইনাল। মাঝে রয়েছে দু’মাস সময়। আর এই সময়টাকেই কাজে লাগাতে উঠে পড়ে লেগেছে শাহরুখ খান-জুহি চাওলার দল।
মুম্বইয়ে কেকেআরের অ্যাকাডেমিতে জোর কদমে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে নাইট ক্রিকেটারদের। অন্যতম কোচ অভিষেক নায়ারের তত্ত্বাবধানে সেখানে প্র্যাক্টিস শুরু করে দিয়েছেন বরুণ চক্রবর্তী, গতবার আইপিএলে বল হাতে নজর কেড়ে নেওয়া স্পিনার সূয়াশ শর্মা, বিহারের ডানহাতি জোরে বোলার সাকিব হুসেনরা।
অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার, রিঙ্কু সিংহরা ব্যস্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। রেকর্ড দামে কেকেআরে যোগ দেওয়া মিচেল স্টার্ক, মুজিব উর রহমান, রহমানুল্লাহ গুরবাজ়রাও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। নীতীশ রানা, মণীশ পাণ্ডেরা ব্যস্ত ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা টুর্নামেন্ট রঞ্জি ট্রফিতে। কিন্তু যে সমস্ত ক্রিকেটার রঞ্জি খেলছেন না, তাঁদের নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে কেকেআরের।
কলকাতা নাইট রাইডার্স শিবিরের একজন মুম্বই থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে বলছিলেন, ‘বরুণ চক্রবর্তী তামিলনাড়ুর হয়ে সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি ও বিজয় হাজারে ট্রফি খেললেও রঞ্জির দলে নেই। সূয়াশ শর্মাও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দিল্লি দলে থাকলেও রঞ্জিতে নেই। এই রকম ক্রিকেটারদের প্র্যাক্টিসের মধ্যে রাখতেই এত আগেভাগে প্রস্তুতি শিবির শুরু করে দেওয়া হয়েছে। আর পুরোটাই হচ্ছে গৌতম গম্ভীরের পরামর্শে।’
মনে করিয়ে দেওয়া যাক, কেকেআর যে দুবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, ২০১২ ও ২০১৪ – সেই দুই মরশুমেই অধিনায়ক ছিলেন গম্ভীর। পরে অবশ্য তাঁর সঙ্গে কেকেআরের বিচ্ছেদ হয়। তবে এবার ফের দূরত্ব মিটিয়ে লখনউ সুপার জায়ান্টস থেকে তাঁকে ভাঙিয়ে এনেছে কেকেআর। করা হয়েছে দলের মেন্টর। চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত দলের কোচ থাকলেও, বকলমে পুরোটাই দেখছেন গম্ভীরই। ট্রফির দেখা পেতে মরিয়া কেকেআর শিবির কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না। তাই আগাম ঘষামাজা শুরু হয়ে গিয়েছে। সময় মতো বড় তারকারাও যোগ দেবেন সেই শিবিরে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলবে প্রশিক্ষণ শিবির।
কে বলছে আইপিএল শুরু হতে মাস দুয়েক বাকি? নাইটদের জন্য টুর্নামেন্ট যেন শুরুই হয়ে গিয়েছে!