কলকাতা: করোনা আবহে বদলে গিয়েছে ক্রিকেট। দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে হচ্ছে খেলা। লালা দিয়ে বল পালিশ বন্ধ। সেলিব্রেশনেও মানতে হচ্ছে সুরক্ষাবিধি। তবে শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও বদলে যেতে চলেছে ক্রিকেট। যার ছাপ পড়তে চলেছে আইপিএলেও।

কীরকম? ক্রিকেটারদের রুম শেয়ারিং বন্ধ। ম্যাচ না থাকলে সন্ধ্যায় নিজেদের মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখার জন্য টিম হোটেলে কোনও একজনের ঘরে প্লে স্টেশনে ডুবে যাওয়া ক্রিকেটারদের অন্যতম পছন্দের বিষয়। তবে এবারের আইপিএলে সেই ছবি আর দেখা যাবে না। কারণ, করোনা-কাঁটা থেকে সুরক্ষার জন্য আইপিএলের দলগুলোকে এক গুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছে বোর্ড। এবং সেগুলি কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে।

কী সেই নির্দেশ? কলকাতা নাইট রাইডার্সের এক শীর্ষকর্তা মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে বললেন, ‘আগে এক শহরে দুটো দলের খেলা থাকলে সাধারণ একই হোটেলে থাকত। তবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে প্রত্যেক দলকে আলাদা আলাদা হোটেলে থাকার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি হোটেলে আইসোলেশন রুম রাখতে বলা হয়েছে। টুর্নামেন্ট চলাকালীন যদি কোনও ক্রিকেটার বা সাপোর্ট স্টাফ করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েন, তাহলে তাঁকে সেই ঘরে স্থানান্তরিত করা হবে। পাশাপাশি রুম শেয়ারিং বন্ধ করতে বলা হয়েছে। কেকেআর ক্রিকেটারদের সাধারণত রুম শেয়ার করতে হয় না। তবে এবার সেই ব্যাপারে আরও কড়াকড়ি হচ্ছে। একমাত্র পরিবারের সদস্যরা গেলে তবেই রুম শেয়ার করা যাবে। তাছাড়া কোনও ক্রিকেটারের ঘরে যে আড্ডা বসে, সেসব এবার আর হবে না। জৈব সুরক্ষা বলয়ের নিয়ম সকলকে মেনে চলতে হবে।’

কেকেআর সূত্রে খবর, আবু ধাবিতে বেস ক্য়াম্প করতে চাইছে তারা। সেখানেই প্রস্তুতি শিবির হবে। টিম ম্যানেজমেন্টের কেউ কেউ বলছেন, ২০১৪ সালে আবু ধাবিতেই বেস করেছিল কেকেআর। সেবার চ্যাম্পিয়নও হয় নাইটরা। বলা হচ্ছে, টিম মালিক শাহরুখ খান নিজে এইসব ব্যাপার খুব মানেন। সাফল্য আসছিল না বলে যে কারণে জার্সির রং বদলে দিয়েছিলেন কিং খান। এবারও তাই ‘পয়া’ আবু ধাবিতে বেস ক্যাম্প করতে চাইছে কেকেআর। টিম ম্যানেজমেন্টের একজন এবিপি আনন্দকে জানালেন, আবু ধাবির একটি রিসর্টে দলকে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাতে পারস্পরিক দূরত্ববিধি মানতে সুবিধা হবে বলেই ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা।

কেকেআর শিবির থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, দলের বিদেশি ক্রিকেটারেরা সরাসরি আমিরশাহিতে পৌঁছবেন। ভারতীয় ক্রিকেটারেরা এখান থেকে যাবেন আমিরশাহি। দলের এক কর্তা বললেন, ‘আমাদের সবচেয়ে স্বস্তি দিচ্ছে যে, দলের প্রধান দুই অস্ত্র সুনীল নারাইন ও আন্দ্রে রাসেল দুদিন আগে প্র্য়াক্টিস শুরু করে দিয়েছে। দুজনই ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) খেলে আইপিএলে নামবে। সিপিএলে নারাইন খেলে শাহরুখ খানেরই দল ত্রিনিবাগো নাইট রাইডার্সে। রাসেল খেলে জামাইকা তালওয়াসের হয়ে। দুজনই নেট প্র্যাক্টিসে নেমে পড়েছে। পর্যাপ্ত ম্যাচ প্র্যাক্টিস পাবে ওরা। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেটের মধ্যে রয়েছে অইন মর্গ্যানও। ইংল্যান্ডের হয়ে দারুণ ফর্মে রয়েছে। সেঞ্চুরিও করছে।’

তবে ভারতীয় ক্রিকেটারেরা বেশ কিছুদিন খেলার বাইরে। আইপিএল শুরুর আগে তাঁদের প্রস্তুতিতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে নাইট কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। যদিও, অগাস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহের আগে আমিরশাহি যাওয়া সম্ভবত হচ্ছে না নাইটদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন বললেন, ‘বোর্ড থেকে প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছে ২০ অগাস্টের আগে যাওয়া যাবে না। আমরা সেই মতোই এগোচ্ছি। তবে একটাই সুবিধা। অন্য দেশ থেকে ভারতে এলে যেমন ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক, সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে ততটা কড়াকড়ি নেই। করোনা টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ এলে এক সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে থেকে তারপরই প্র্যাক্টিসে নেমে পড়তে পারবে ক্রিকেটারেরা। আশা করছি অন্তত ২০ দিনের প্রস্তুতি শিবির করতে পারব আমরা।’

তবে টুর্নামেন্টের আগে একাধিকবার করোনা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফদের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুবার করোনা পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তবেই আমিরশাহির বিমানে উঠতে পারবেন ক্রিকেটার বা সাপোর্ট স্টাফেরা। কারও রিপোর্ট পজিটিভ এলে তাঁকে ভারতে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে কাটাতে হবে। তারপর ফের দুবার করোনা পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তবেই তিনি আমিরশাহিতে দলের সঙ্গে যোগ দিতে পারবেন। আমিরশাহি পৌঁছে বিমানবন্দরে ফের একবার করোনা পরীক্ষা হবে সকলের।

আমিরশাহিতে এক সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে থাকাকালীন তিনবার করোনা পরীক্ষা হবে ক্রিকেটারদের। সেই রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তবেই মাঠে নামার সুযোগ। পাশাপাশি প্রত্যেক সপ্তাহের পঞ্চম দিন সকলের করোনা পরীক্ষা হবে। কেউ পজিটিভ হওয়া মাত্রই তাঁকে হোটেলে বরাদ্দ আইসোলেশন রুমে ঢুকে পড়তে হবে।

নাইট শিবিরের খবর, ক্রিকেটারদের সকলকে ঘরের বাইরে বেরলেই মাস্ক পরতে বলা হবে। শুধুমাত্র এক্স রে বা কোনও চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল রুমে যেতে হলেই নিজের ঘর ছেড়ে অন্য ঘরে যেতে পারবেন ক্রিকেটারেরা। দলের সঙ্গে একজন করোনা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে রাখতে বলা হয়েছে। কেকেআর-এর এক কর্তার কথায়, ‘দর্শকশূন্য মাঠে আইপিএল নতুন অভিজ্ঞতা হলে মাঠের বাইরের বিধিনিষেধও সম্পূর্ণ অন্যরকম হতে চলেছে।’