কলকাতা: বিপক্ষ দলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্বের সেরা বোলার। যাঁর স্পিন খেলতে সমস্যায় পড়ে যান তাবড় ব্যাটসম্যানরা। অথচ সেই রশিদ খানকে নির্বিষ করে ছেড়েছেন। আফগান লেগস্পিনারের ১২ বলে ১২ রান নিয়েছেন। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ১৪২ রান তাড়া করতে নেমে ৬২ বলে অপরাজিত ৭০ রান করে ম্যাচের সেরা হয়েছেন শুবমান গিল। ত্রয়োদশ আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে দিয়েছেন প্রথম জয়ের স্বাদ।

শুবমানের পারফরম্যান্স দেখে উচ্ছ্বসিত তাঁর বাবা তথা শৈশবের কোচ লখবিন্দর গিল। কেকেআরের জয়ের পরের দিন চণ্ডীগড় থেকে ‘এবিপি আনন্দ’-কে মোবাইল ফোনে গর্বিত পিতা বললেন, ‘হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে কেকেআরের পুরো দলই ভাল খেলেছে। শুবমান দারুণ মনঃসংযোগ দেখিয়েছে। একটা সময়ে ৫৩ রানে তিন উইকেট পড়ে গিয়েছিল। সেই সময় একটা ভুল শট দলকে চাপে ফেলতে পারত। তবে ও ধৈর্য ধরে ব্যাট করেছে। ম্যাচ শেষ করে ফিরেছে। এটাই বাড়তি আনন্দের।’



করোনা-কালে ৬ মাসেরও বেশি সময় কাটাতে হয়েছে মাঠের বাইরে। আইপিএলের শিবিরে যোগ দেওয়ার আগে বাড়িতে প্রস্তুতি কীরকম নিয়েছিলেন শুবমান? লখবিন্দর বললেন, ‘নেট প্র্যাক্টিস তো করতে পারেনি। তবে ফিটনেস নিয়ে খুব পরিশ্রম করেছিল। সে জন্য ওকে প্রথম ম্যাচ থেকে এত ফিট দেখাচ্ছে।’



শনিবার আবু ধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামের পিচ খুব একটা ব্যাটিং সহায়ক ছিল না। বল থমকে ব্যাটে এসেছে। শট খেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন ডেভিড ওয়ার্নারের মতো ব্যাটসম্যানও। অথচ শুবমানকে দেখে মনে হয়নি যে, বাইশ গজ ব্যাটিংয়ের পক্ষে কঠিন। লখবিন্দর বলছেন, ‘পিচ কঠিন ছিল। তবে দারুণ টেম্পারামেন্ট দেখিয়েছে শুবমান। সেটা খুব ভাল লেগেছে। অনেক সময় কম রান তাড়া করতে নামলে একটা স্বস্তিবোধ কাজ করে আর তাতে বিপর্যয় নেমে আসে। শুবমান তা হতে দেয়নি। নিজের সহজাত ক্রিকেটটা খেলেছে। আলগা বলে শট খেলেছে। তবে শট নির্বাচনে দৃঢ়তা দেখিয়েছে। সাবলীলভাবে খেলেছে। আস্কিং রেট কখনও নাগালের বাইরে যেতে দেয়নি।’ যোগ করলেন, ‘মহম্মদ নবি আর রশিদকে খুব ভাল খেলেছে। রশিদকে দারুণ রিড করেছে শুবমান। ওর গুগলি বিষাক্ত। সেই গুগলিগুলো লেগ সাইডে খেলেছে, লেগ ব্রেক ডেলিভারি মিড অফে খেলেছে। সোজা ব্যাটে মিড অন-মিড অফে বেশিরভাগ শট খেলেছে।’



ম্যাচের পর ছেলের সঙ্গে কথা হল? ‘অনেক রাতে ম্যাচ শেষ হয়েছে। বিশ্রাম নিক। সুবিধামতো ফোন করবে,’ বললেন লখবিন্দর। কী বলবেন ছেলেকে? ‘শুবমানকে বলব, যে কোনওভাবে ম্যাচ জিততে হবে। সব দিন এক যাবে না। সব ম্যাচে ব্যাটে রান পাবে না। তবে দলের হয়ে তোমার অবদান যেন থাকে। প্রয়োজনে ফিল্ডিংয়ে নিজেকে উজাড় করে দাও। একটা দারুণ ক্যাচ বা দুর্দান্ত ডাইভে কয়েকটা রান বাঁচিয়ে দেওয়াও ম্যাচ জেতাতে পারে,’ বলছিলেন লখবিন্দর। যিনি ছেলের ক্রিকেটের বড় সমালোচকও।



পঞ্জাবের ২১ বছরের ক্রিকেটারকে ভারতীয় ক্রিকেটের ‘নেক্সট বিগ থিং’ বলা হচ্ছে। আর শুবমানের সেই ক্রিকেট সফরে নাবিকের ভূমিকা পালন করেছেন লখবিন্দর। মোবাইল ফোনে বাবার নম্বর ‘গড’ নামে সেভ করে রেখেছেন শুবমান। যা নিয়ে প্রশ্ন করায় হাসলেন লখবিন্দর। বললেন, ‘ছোট থেকে আমার নিজের ক্রিকেট খেলার শখ ছিল। তবে পেশাদার ক্রিকেটার হতে পারিনি। সেই আক্ষেপটা শুবমানের মধ্যে দিয়ে মেটাতে চেয়েছি। ওর সাফল্যের জন্য যা প্রয়োজন সব করেছি। পাশে থেকেছি। ও পরিশ্রম করছে। তারই পুরস্কার পাচ্ছে।’