IPL 2020: দ্রাবিড়ের কাছে শৃঙ্খলার পাঠ, লক্ষ্মণ বলেছেন ‘বিন্দাস’ থাকতে, আইপিএলের সেরা চমক হতে পারেন প্রিয়ম

সন্দীপ সরকার Updated at: 15 Sep 2020 12:39 AM (IST)

SRH Priyam Garg Interview IPL 2020: এবিপি আনন্দ-র সঙ্গে দুবাই থেকে জুম কলে কথা বললেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। শৈশবের লড়াই থেকে শুরু করে কেরিয়ারের প্রথম আইপিএল, রাহুল দ্রাবিড়-ভি ভি এস লক্ষ্মণদের ক্লাস, সব বিষয়েই অকপট তরুণ তুর্কি।

NEXT PREV
কলকাতা: উত্তরপ্রদেশের কুইলা পরীক্ষিতগড় থেকে মিরাটে প্র্যাক্টিসে যেতে পাড়ি দিতে হতো ৪০ কিলোমিটার পথ। মাকে হারিয়েছেন মাত্র ১১ বছর বয়সে। সংসার চালাতে বাবাকে চালাতে হয়েছে স্কুলভ্যান। তবে ১৯-এর তরুণের মনে সংকল্পের বীজ বুনে দিয়েছে ক্রিকেটের বাইশ গজ। ধারবাহিক পারফরম্যান্সের জোরে অনূর্ধ্ব ১৯ ভারতীয় দলে সুযোগ, নেতৃত্বের দায়িত্ব। ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকায় আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদে অন্তর্ভুক্তি। প্রিয়ম গর্গ-কে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে ভারতীয় ক্রিকেটমহল। এবিপি আনন্দ-র সঙ্গে দুবাই থেকে জুম কলে কথা বললেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। শৈশবের লড়াই থেকে শুরু করে কেরিয়ারের প্রথম আইপিএল, রাহুল দ্রাবিড়-ভি ভি এস লক্ষ্মণদের ক্লাস, সব বিষয়েই অকপট তরুণ তুর্কি।

দেখুন সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকার



প্রশ্ন: প্রায় ৬ মাসেরও বেশি সময় পর ফের ক্রিকেট মাঠে ফিরেছেন। অনুভূতিটা কীরকম?

প্রিয়ম গর্গ: খুব ভাল লাগছে। মাঝের সময়টা বাড়িতেই কাটিয়েছি। অনেকদিন পর পরিবারের সকলের সঙ্গে এতদিন একসঙ্গে ছিলাম। তবে ক্রিকেট মাঠে ফিরতে পেরে, নেটে প্র্যাক্টিস করতে পেরে খুব ভাল লাগছে।



প্রশ্ন: প্রথমবার আইপিএল খেলবেন। নিজের সামনে কী লক্ষ্য রাখছেন?

প্রিয়ম: আইপিএল থেকে অনেক কিছু শিখতে চাই। দলের জন্য নিজের সেরাটা দেওয়াই লক্ষ্য। সিনিয়র ক্রিকেটারদের কাছ থেকে দেখে, একই ড্রেসিংরুমে সময় কাটিয়ে যতটা শেখা সম্ভব, শিখে নিতে আমি বদ্ধপরিকর।



প্রশ্ন: বরাবর বলেছেন ভারতের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলা আপনার স্বপ্ন। টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি এই ভালবাসা তৈরি হল কীভাবে?

প্রিয়ম: ছোট থেকে সচিন স্যার, রাহুল স্যার, লক্ষ্মণ স্যারকে টেস্ট ম্যাচ খেলতে দেখেছি। সেই থেকেই আমি টেস্ট ক্রিকেটের ভক্ত। বরাবর বিশ্বাস করে এসেছি, ক্রিকেটের বাকি ফর্ম্যাটগুলোর চেয়ে টেস্ট ক্রিকেট অনেক উঁচু দরের। আমার মনে হয়, টেস্ট ক্রিকেটই একজন ক্রিকেটারের দক্ষতার প্রকৃত পরীক্ষা নেয়। তাই আমার স্বপ্ন ভারতের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলা।



প্রশ্ন: আপনি সচিন তেন্ডুলকরের ভক্ত। কোনওদিন দেখা হয়েছে?

প্রিয়ম: (হাসি) না, এখনও দেখা হয়নি। তবে খুব তাড়াতাড়ি দেখা করতে চাই।



প্রশ্ন: দেখা হলে কী জানতে চাইবেন?

প্রিয়ম: সচিন স্যারের কাছে জানতে চাইব, চাপের মুখে কীভাবে নিজেকে শান্ত, সংযত রাখতেন। প্রস্তুতি কীভাবে নিতেন। ম্যাচের আগে মানসিকতা কেমন থাকত। প্রত্যেক টুর্নামেন্টের আগে কীভাবে নিজেকে তৈরি করতেন।



প্রশ্ন: আর এক কিংবদন্তি রাহুল দ্রাবিড়ের প্রশিক্ষণে অনূর্ধ্ব ১৯ ভারতীয় দলে খেলেছেন। ওঁর কাছ থেকে পাওয়া সেরা শিক্ষাটা কী?

প্রিয়ম: রাহুল স্যার সবসময় বলতেন, ক্রিকেটার হিসাবে শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে হবে। নিজের দক্ষতায় আস্থা রাখতে হবে। জীবনে চড়াই-উতরাই থাকে। সেই সব সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য আত্মবিশ্বাস ভীষণ জরুরি। রাহুল স্যার বলতেন, পরিশ্রম করলে সব প্রতিকূলতা জয় করা যায়। আমি সেই মন্ত্র মেনেই চলেছি। মাঠে হোক বা মাঠের বাইরে, শৃঙ্খলাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।



প্রশ্ন: সানরাইজার্স হায়দরাবাদে আরেক মহাতারকা, ভি ভি এস লক্ষ্মণের তত্ত্বাবধানে অনুশীলনের সুযোগ পাচ্ছেন। সেই অভিজ্ঞতা কীরকম?

প্রিয়ম: দারুণ অভিজ্ঞতা। আগে কখনও লক্ষ্মণ স্যারের সঙ্গে দেখা হয়নি। এবারই আলাপ হল। মাঠে, মাঠের বাইরে বেশ কয়েকবার কথা বলেছি। লক্ষ্মণ স্যার সব সময় বলছেন, প্রথমবার আইপিএল খেলছো ভেবে নিজের ওপর বেশি চাপ তৈরি কোরো না। হাল্কা মেজাজে থাকো। বিন্দাস থাকো। আইপিএল উপভোগ করো। লক্ষ্মণ স্যার এ-ও বলেছেন যে, অনূর্ধ্ব ১৯ ভারতীয় দলে বা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যা করেছো, সেটাই অনুসরণ করো। বাড়তি কিছু করতে যেও না। ওঁর এই কথাগুলো আমাকে খুব উৎসাহিত করেছে। অনেক ফুরফুরে লাগছে।

দেখুন সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকার



প্রশ্ন: সানরাইজার্স হায়দরাবাদের এবারের দলে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের দারুণ মিশেল। একদিকে যেমন ডেভিড ওয়ার্নার, কেন উইলিয়ামসন, ভুবনেশ্বর কুমারদের মতো অভিজ্ঞ তারকারা রয়েছেন, সেরকমই আছেন আপনি বা বিরাট সিংহের মতো তরুণ। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা কীরকম দেখছেন?

প্রিয়ম: আমাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খুব ভাল সুযোগ রয়েছে। দল প্রাণশক্তিতে ভরপুর। অভিজ্ঞতাও রয়েছে। সব দিক থেকেই দারুণ ভারসাম্য। আমার বিশ্বাস আমরাই চ্যাম্পিয়ন হব এবার।



প্রশ্ন: এবারের আইপিএলে একটা বিরল অভিজ্ঞতা হবে সকলের। খেলা হবে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে। এতে কি নিজেদের উদ্বুদ্ধ করতে সমস্যা হবে বলে মনে হয়?

প্রিয়ম: মনে হয় না সমস্যা হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ফাঁকা স্টেডিয়ামে খেলেই আমরা অভ্যস্ত। তবে জনতা চিৎকার করে সমর্থন করলে ক্রিকেটারদের ভাল লাগে। তবে এই পরিস্থিতিতে সেটা আমাদের হাতে নেই। শুধু ভাল অনুভূতি হয়, এখন সেরকম ব্যাপার নিয়েই ভাবতে হবে।



প্রশ্ন: শৈশবে দারিদ্যের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। আপনার বাবা স্কুলভ্যান চালিয়ে বা অন্য কোনও ছোটখাট কাজ করে সংসার চালিয়েছেন। ছোটবেলা মাকে হারিয়েছেন। কতটা কঠিন ছিল সেই সময়টা?

প্রিয়ম: যে কোনও মানুষকেই জীবনে এরকম অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হতে পারে। তবে আমার পরিবার পাশে থেকেছে। ১০ বছর বয়সে খেলা শুরু করেছিলাম। প্র্যাক্টিসের জন্য অনেক দূর পথ পাড়ি দিতে হতো। মা যখন মারা যান, আমার বয়স ১১ বছর। ওইটুকু বয়সে মা-কে হারানোটা খুব কঠিন ছিল আমার কাছে। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল যেন। তবে দিদিরা আমাকে আগলে রেখেছিল। বাবা কখনও দারিদ্র্যের আঁচ বুঝতে দেননি। তবে আমি মনে করি প্রত্যেক মানুষেরই উচিত অর্থাভাবটা বোঝা। তাতে কোনটা জরুরি আর কতটা জরুরি উপলব্ধি করা যায়। অল্পতেই খুশি থাকা যায়। কী নেই তা নিয়ে হাহুতাশ করার দরকারই নেই। সকলের কাছে সব কিছু থাকে না। আর ছোটবেলা কষ্টে কাটলে নিজের লক্ষ্যে আরও অবিচল থাকা যায়। নিজেকে নিজে উৎসাহ দেওয়া যায়।

দেখুন সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকার

https://bengali.abplive.com/videos/sports/ipl-exclusive-interview-cricketer-priyam-garg-unplugged-in-abp-live-738285/amp

প্রশ্ন: কখনও ভেবেছিলেন, আইপিএলে কোনও দল আপনাকে ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকায় কিনবে?

প্রিয়ম: না কখনও ভাবিনি (হাসি)। ভাবিনি এত ভাল দলে সুযোগ পাব। নিলামের দিন জাতীয় অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ছিলাম। হোটেলের লিফটে একজন আমাকে খবরটা দেয়। খুব আনন্দ হয়েছিল।



প্রশ্ন: বাবা কতটা খুশি হয়েছিলেন?

প্রিয়ম: খুব খুশি হয়েছিলেন। বাবা আমাকে নিয়ে সব সময়ই খুশি থাকেন।


করোনা পরিস্থিতিতে জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকতে হচ্ছে সকলকে। তাই সময়টা মজা করে কাটানোই ভাল। - প্রিয়ম গর্গ


প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে কোয়ারেন্টিন পর্বে আপনি হোটেলের ঘরে ভাংড়া নেচেছিলেন, যা পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়...

প্রিয়ম: (হাসি) করোনা পরিস্থিতিতে জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকতে হচ্ছে সকলকে। তাই সময়টা মজা করে কাটানোই ভাল। আমি নাচ করতে ভালবাসি। পরিবারের কারও বিয়েতে ভাংড়া নাচি বাড়ির সকলের সঙ্গে। তাই ভাবলাম, একঘেঁয়েমি কাটাতে একটু নাচি।



প্রশ্ন: আইপিএলে একটা মারকাটারি হাফসেঞ্চুরির পর তাহলে আমরা ভাংড়া সেলিব্রেশন দেখছি?

প্রিয়ম: (হাসি) হ্যাঁ, করতেই পারি।



প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে বেশ কিছুদিন প্র্যাক্টিস করেছেন। ওখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে কতটা মানিয়ে নিলেন?

প্রিয়ম: আমি এই প্রথম ইউএই এলাম। তবে সিনিয়র ক্রিকেটারেরা আগেই বলেছে যে, এখানকার উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হয়। প্র্যাক্টিসের পর মনে হয়েছে, উইকেট কিছুটা মন্থর। তবে ভাল ব্যাপার হল, আমরা বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে পৌঁছে গিয়েছি। তাই পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার অনেকটা সময় পেয়েছি। যত তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারব, ততই ভাল। আমরা মানিয়ে নিতে পেরেছি বলেই মনে হয়।

প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অনেক ব্যাটসম্যানই শটের অভিনবত্ব আনার চেষ্টা করে। স্কুপ, সুইচ হিট...। আপনার সেরকম কোনও অস্ত্র দেখা যাবে আইপিএলে?


আমি অনূর্ধ্ব ১৯ পর্বে বা ঘরোয়া ক্রিকেটে যে সমস্ত শটে অভ্যস্ত, সেগুলোই আইপিএলে খেলতে চাই।- প্রিয়ম গর্গ


প্রিয়ম: আমি অনূর্ধ্ব ১৯ পর্বে বা ঘরোয়া ক্রিকেটে যে সমস্ত শটে অভ্যস্ত, সেগুলোই আইপিএলে খেলতে চাই। তবে সব ব্যাটসম্যানদেরই শটে অভিনবত্ব থাকা ভাল। তবে আমি চাই নিজের শক্তি অনুযায়ী, স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলতে।

প্রশ্ন: ভারতের যুব দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা বড় মঞ্চে কতটা সাহায্য করবে?

প্রিয়ম: ঘরোয়া টুর্নামেন্টে অতটা চাপ থাকে না। রাজ্য বা ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের হয়ে খেলার সময় অত দায়িত্বও সামলাতে হয় না, যেটা জাতীয় দলের হয়ে খেলার সময় থাকে। অধিনায়ক হিসাবে অনেক চাপ সামলাতে হয়েছে। কঠিন পরিস্থিতিতে সেই অভিজ্ঞতা কাজে তো লাগবেই। বিপক্ষের অধিনায়ক কখন কী চাল দেবে, প্রতিপক্ষ দলের বোলার বা ব্যাটসম্য়ানরা কী করতে পারে, সব কিছু দ্রুত বুঝে ফেলা যায় দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা থাকলে।

প্রশ্ন: আইপিএলে প্যাট কামিন্স, মহম্মদ শামি, সুনীল নারাইন, কুলদীপ যাদবদের মতো বিশ্বমানের বোলারদের সামলাতে হবে। প্রত্যেকের জন্যই কি আলাদা আলাদা পরিকল্পনা তৈরি থাকে?

প্রিয়ম: না আমার বিশেষ কারও জন্য পরিকল্পনা থাকে না। পুরোটাই মানসিক দৃঢ়তার ব্যাপার। আলাদা কিছু করব না। শুধু পরিবেশ আর ম্যাচের পরিস্থিতির সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে নিজের সহজাত ক্রিকেট খেলব। বিশেষ কিছু পরিবর্তন করতে চাই না।

- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -

© Copyright@2024.ABP Network Private Limited. All rights reserved.