কলকাতা: কাঠফাটা রোদ। তীব্র দাবদাহ। পারদ ঘোরাফেরা করছে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে। চোখেমুখে জ্বালা ধরাচ্ছে শুকনো হাওয়া। আর তার মাঝেই চলবে বাইশ গজে ধুন্ধুমার লড়াই। আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যুদ্ধ।

করোনা পরিস্থিতিতে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে আয়োজিত হতে চলেছে ত্রয়োদশ আইপিএল। কতটা কঠিন হবে মরুশহরে ক্রিকেটীয় লড়াই? কাদের হাতে থাকবে টুর্নামেন্টের চাবিকাঠি? দাবদাহকে হার মানানোর উপায়ই বা কী? এবিপি আনন্দ-র সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন বাংলার তিন ক্রিকেটার। দেবব্রত দাস, সায়নশেখর মণ্ডল ও বীরপ্রতাপ সিংহ। তিনজনই কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রাক্তনী। ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়ন কেকেআর দলের সদস্য। আর মরুদেশের পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াকিবহাল। কারণ, ৬ বছর আগে শাহরুখ খানের দল শেষ যেবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, সেবারও টুর্নামেন্টের প্রথম অর্ধ খেলা হয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতেই।



“ভীষণ গরম থাকবে ইউএই-তে। সবচেয়ে বড় কথা, শুকনো, গরম হাওয়া চোখেমুখে ঝাপ্টা মারে। যেটার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া বেশ কষ্টকর। ২০১৪ সালে ইউএই পৌঁছে আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমাদের বেশ কয়েকদিন সময় লেগেছিল,” বলছিলেন দেবব্রত। বাংলার ক্রিকেটার আইপিএলে কেকেআরের জার্সিতে ৩১টি ম্যাচ খেলেছেন। পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও নজর কেড়েছিলেন। সেরা ক্যাচের জন্য পুরস্কৃতও হয়েছেন। মরুদেশে পিচ কেমন হবে? দেবব্রত বলছেন, “উইকেট মন্থর হবে। বল থমকে আসবে। আইপিএল তিনটি মাঠে খেলা হয়। শারজার পিচ তুলনামূলকভাবে ভাল। তবে দুবাই ও আবু ধাবির উইকেট ভীষণ স্লো। রোল কম হয়। জলও কম দেওয়া হয়। ওই ধরনের পিচে স্পিনাররা খুব সাহায্য পাবে। স্পিনারদের হাতেই চাবিকাঠি থাকবে।”

একই সুর শোনা গেল সায়নশেখরের গলায়। বাংলার অলরাউন্ডার ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য। বললেন, “উইকেট থেকে সাহায্য পাবে স্পিনাররা। স্পিন বোলিংই লিখে দেবে ম্যাচের ভাগ্য।” যোগ করলেন, “সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে স্টেডিয়ামগুলো বেশ অদ্ভুত। মাঠের বাউন্ডারি লাইন পর্যন্ত পুরু ঘাস। তারপর থেকে বালি। স্টেডিয়ামের চারপাশে ধু ধু বালি। তবে পরিকাঠামো দুর্দান্ত।” পাশাপাশি তিনি মনে করিয়ে দিলেন, “খাওয়াদাওয়ার সমস্যা হবে কিছুটা। টিমহোটেলে ভারতীয় খাবার পাওয়া যেত না। আমরা বাইরে গিয়ে কোনও ভারতীয় রেস্তোরাঁয় খেতাম বা খাবার আনিয়ে নিতাম। এবার করোনা পরিস্থিতিতে তো সেসব সম্ভব হবে না।”



কেকেআরের ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়ন দলের হয়ে মরুদেশে গিয়েছিলেন বীরপ্রতাপও। বাংলার পেসার বললেন, “ইউএইতে উইকেট শুরুর দিকে ব্যাটসম্যানদের সাহায্য করবে। পরের দিকে স্পিনাররা সাহায্য পাবে। উইকেট থেকে গ্রিপ পাবে স্পিনাররা। বল ঘুরবে। পেসারদের জন্য বেশি কার্যকরী হবে ইয়র্কার। কারণ স্লোয়ার বল ব্যাটসম্যানরা আগাম বুঝে যেতে পারে। মন্থর উইকেটে স্লোয়ার কার্যকরীও হবে না বড় একটা।”

তিনজনই মেনে নিচ্ছেন, ইউএই-র গরমই হবে ক্রিকেটারদের প্রধান প্রতিপক্ষ। দাবদাহ থেকে বাঁচতে কী করতে হবে? দেবব্রত বলছেন, “এত শুকনো আবহাওয়া যে, ডিহাইড্রেশনের ভয় থাকে। তাই প্রচুর ওআরএস খেতে হবে। আমরাও তাই করেছি। তবে ম্যাচগুলো সন্ধ্যার পরে হবে বলে কিছুটা সুবিধা। দুপুরে মাঠে নামাই কষ্টকর। আমাদের প্রথম কয়েকদিন প্র্যাক্টিস দুপুরে হয়েছিল। তারপর সন্ধ্যায় হতো।” সায়ন বলছেন, “গরমের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা কঠিন। আমরা টুর্নামেন্ট শুরুর ১০-১২ দিন আগে পৌঁছে গিয়েছিলাম শুধুমাত্র আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য। ম্যাচের মধ্যে টাইম আউট থাকবে। তার পাশাপাশি ক্রিকেটারেরা যতবার খুশি ড্রিঙ্কস নিতে পারবে। সেই ছাড় দেওয়া হয়। ব্যাটসম্যানেরা লম্বা ব্যাটিং করলে কলারে আইস প্যাক বেঁধে নিতে হয়। যাতে ক্লান্তি কাবু না করে ফেলে।” আর বীরপ্রতাপ বলছেন, “গরমের কথা মাথায় রেখে প্র্যাক্টিসে অনেক ছাড় দেওয়া হয়। পেসারদের যেমন নেটে বেশি বল করানো হয় না। ম্যাচে যাতে তরতাজা হয়ে নামতে পারে। রোজ রাতে প্রচুর ওআরএস মিশ্রিত জল খেতে হতো আমাদের।”

৬ বছর আগে নাইট শিবিরে বীর-সায়নরা।

কেকেআর-এর স্পিন বিভাগ শক্তিশালী হওয়ায় ইউএই-তে সুবিধা হবে বলে মনে করেন প্রাক্তন নাইটরা। দেবব্রত বলছেন, “২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়ন দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে সুনীল নারাইন, আন্দ্রে রাসেল, কুলদীপ যাদব ও প্যাট কামিন্স এবারও আছে। মরুদেশে খেলার অভিজ্ঞতা ওদের সাহায্য করবে। নারাইন ও কুলদীপ ভীষণ কার্যকরী ভূমিকা নেবে। পাশাপাশি কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামও ইউএই-তে আইপিএল খেলেছে। ওর অভিজ্ঞতাও সুবিধা দেবে কেকেআরকে।”

যদিও আগেরবার ইউএই পর্বে কেকেআরের পারফরম্যান্স ভাল ছিল না। ৫টি ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে হেরেছিল শাহরুখ-জুহি চাওলার দল। পরে দেশের মাটিতে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় অর্ধে ফাইনাল-সহ টানা ৯টি ম্যাচ জিতে ট্রফি ঘরে তোলেন গৌতম গম্ভীররা। ইউএই পর্বে কী মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়েছিল? দেবব্রত-সায়ন-বীরপ্রতাপরা অবশ্য সেরকম মনে করেন না। দেবব্রত বলছেন, “ইউএই পর্বে কয়েকটা ম্যাচ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে হেরে গিয়েছিলাম। রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ম্যাচটা টাই হয়েছিল। সুপার ওভারে হেরেছিলাম আমরা।” সায়ন বলছেন, “টিম কম্বিনেশন নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা হচ্ছিল শুরুর দিকে। ওপেনিং নিয়েও পরীক্ষা হচ্ছিল। সঠিক কম্বিনেশন তৈরি হতে সময় লেগেছিল।”



কী স্ট্র্যাটেজি নিয়ে সেবার সফল হয়েছিলেন ক্যাপ্টেন গম্ভীর-কোচ ট্রেভর বেলিসরা? বীরপ্রতাপ বলছেন, “আমাদের টিমমিটিংয়ে বলা হয়েছিল, পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভারে উইকেট হারালে চলবে না। বিনা উইকেটে ৪০ রান হোক, তাও ঠিক আছে। বা বড় জোর একটু মারতে গিয়ে ২ উইকেটে ৬০। হাতে উইকেট থাকলে ডেথ ওভারে ব্যাটে ঝড় তোলা সম্ভব। এই মন্ত্রেই সাফল্য এসেছিল।” ট্রফি ফিরুক কেকেআর শিবিরে, চাইছেন প্রাক্তন নাইটরা।