কলকাতা: নিলামে দুজনই ছিলেন অবিক্রিত। বেস প্রাইস ছিল ২০ লক্ষ টাকা। তবে কোনও দলই আগ্রহ দেখায়নি। একজনের সঙ্গে তো আবার এক ফ্র্যাঞ্চাইজির কথাবার্তা অনেকটা এগিয়ে গেলেও শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা থেকে বাদ পড়েন। বাংলার সেই দুই পেসার – আকাশ দীপ ও সায়ন ঘোষ ব্যাগ গুছোতে শুরু করে দিয়েছেন! আচমকাই তাঁদের সামনে খুলে গিয়েছে আইপিএলের দরজা। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি রওনা হওয়ার প্রহর গুণছেন আকাশ ও সায়ন।


সায়ন নেট বোলার হিসাবে সুযোগ পেয়েছেন কিংস ইলেভেন পঞ্জাবে। আকাশ নেট বোলার হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন রাজস্থান রয়্যালসে। দুই দলের ব্যাটসম্যানদের নেটে বল করবেন দুই তরুণ পেসার। সায়ন-আকাশের খবর পেয়ে আশায় বুক বাঁধছে বাংলার ময়দানও। অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এক সময় কলকাতা নাইট রাইডার্সের নেটে বল করে রিকি পন্টিংদের মুগ্ধ করে দিয়েছিলেন অশোক ডিন্ডা। আকাশ-সায়নও যদি বল হাতে নজর কাড়তে পারেন, খুলে যেতে পারে প্রথম দলের দরজা। কীভাবে? দলের কেউ চোটের কারণে ছিটকে গেলে পরিবর্ত হিসাবে সুযোগ পেতে পারেন বঙ্গ পেসাররা।

“হ্যাঁ জানি দলের কেউ চোট পেলে সুযোগ পেতে পারি। আমি তৈরিই থাকব। তবে প্রধান লক্ষ্য হবে নেটে নিজের সর্বস্ব নিংড়ে দেওয়া। দলের প্রয়োজনে অবদান রাখতে চাই। টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে যোগ্য মনে করলে আর পরবর্তী সময়ে সেরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে দলে সুযোগ পেতে পারি,” বিহারের সাসারাম থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে বলছিলেন আকাশ দীপ। বিহার ছেড়ে যিনি খেলতে এসেছিলেন কলকাতার ময়দানে। বিভিন্ন বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকভাবে ভাল বল করে বাংলার সিনিয়র নির্বাচকদের নজরে পড়েন। তারপর বাংলার অনূর্ধ্ব ২৩ দলে ডাক। সেখানে সফল হওয়ায় গত মরসুমে সিনিয়র দলে সুযোগ। আর অরুণ লালের প্রশিক্ষণে নিজেকে মেলে ধরা।

গত রঞ্জি ট্রফিতে ৯টি ম্যাচে ৩৫ উইকেট নিয়ে বাংলার অন্যতম সেরা বোলার ছিলেন আকাশ। দলকে রঞ্জি ফাইনালে তোলার নেপথ্যেও অন্যতম কারিগর ছিলেন ২৩ বছরের পেসার। করোনা আবহে আপাতত বিহারেই আটকে পড়েছেন। তবে প্রস্তুতিতে খামতি রাখতে চান না। বলছিলেন, “এখানে নেটে বোলিং শুরু করেছি। অনেকদিন ক্রিকেটের বাইরে ছিলাম। নেটে বল করে কিছুটা ছন্দ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছি।” আকাশ যোগ করলেন, “রাজস্থান রয়্যালসে স্টিভ স্মিথ-বেন স্টোকসদের বল করার সুযোগ পাব। অনেক কিছু শিখতে পারব। আমি মুখিয়ে রয়েছি।”

সায়নের গলাতেও কার্যত একই সুর। স্লিঙ্গিং অ্যাকশনের জন্য নদিয়ার চাকদহের ক্রিকেটারকে ‘ময়দানের মালিঙ্গা’ বলা হয়। এর আগে ২০১৭ সালের আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও ২০১৮ সালে দিল্লি ক্যাপিটালসে ছিলেন। তবে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। সায়ন বলছেন, “কিংস ইলেভেন পঞ্জাবে ক্রিস গেইল, কে এল রাহুল, মায়ঙ্ক অগ্রবালদের বল করার সুযোগ পাব ভেবে আমি রোমাঞ্চিত। নিজের একশো শতাংশ দেব নেটে।” প্রীতি জিন্টার দলে সায়ন সতীর্থ হিসাবে পাবেন বাংলার মহম্মদ শামি ও ঈশান পোড়েলকে। “শামি ভাই ও ঈশান থাকায় খুব সুবিধা হবে। অনেক কিছু শিখতে যেমন পারব, কোনও সমস্যা হলে ভাগ করে নিতেও পারব,” বলছিলেন সায়ন। যোগ করলেন, “অনিল কুম্বলের বড় ভক্ত আমি। কোচ হিসাবে কুম্বলে স্যারকে পাব। ওঁর কাছে মানসিক দৃঢ়তার ব্যাপারে জানতে চাইব। ভাঙা চোয়াল নিয়ে ওঁর সেই ঐতিহাসিক বোলিং আমার কাছে প্রেরণা হয়ে রয়েছে।”

তবে আকাশের মতো প্র্যাক্টিস করতে পারছেন না সায়ন। বলছেন, “শুধু ফিটনেস ট্রেনিং করছি। করোনা পরিস্থিতিতে এখানে আর নেটে কীভাবে বল করব। ইউএই-তে গিয়ে দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে।” নিলামে আকাশ ও সায়ন, দুজনেরই বেস প্রাইস ছিল ২০ লক্ষ টাকা। রাজস্থান ও পঞ্জাব দলের পক্ষ থেকে তাঁদের বেস প্রাইসের পঞ্চাশ শতাংশ অর্থাৎ, ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হতে পারে। যদিও চুক্তির অঙ্ক নিয়ে ভাবছেন না দুই তরুণ। দুজনই বলছেন, “নিলামে অবিক্রিত থাকার হতাশা গ্রাস করেছিল। টাকার অঙ্ক বড় কথা নয়। একটা সুযোগ পেয়েছি। সেটাকে সম্পূর্ণ কাজে লাগাতে চাই।”