সৌরাশিস লাহিড়ী


কলকাতা: আইপিএলে (IPL) একদিকে যেমন চেন্নাই সুপার কিংস, মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মতো পাঁচবার করে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দল রয়েছে, আর একদিকে রয়েছে এমন কয়েকটি শিবির, যারা ভাল দল গড়েও ট্রফি থেকে দূরেই থেকেছে বরাবর। যেমন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর, দিল্লি ক্যাপিটালস। সেই তালিকায় আর একটি নামও রয়েছে। পাঞ্জাব কিংস (Punjab Kings)। গত ১৬টি আইপিএলে যারা একবার মাত্র ফাইনালে উঠেছে। ২০১৪ সালের সেই ফাইনালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল পাঞ্জাবের। তারপর থেকে আর ট্রফির ধারেকাছে যায়নি পাঞ্জাব। ভাগ্য ফেরাতে দলের নাম কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব থেকে বদলে পাঞ্জাব কিংস করা হয়েছে। বদলে ফেলা হয়েছে জার্সির রঙ। তাও ট্রফির দেখা মেলেনি। এবার কী হবে? 


শক্তি


পাঞ্জাব কিংসের সবচেয়ে বড় শক্তি হল ওদের দলের বিদেশি ক্রিকেটারেরা। ক্রিস ওকস। নাথান এলিস। স্যাম কারান। জনি বেয়ারস্টো। কাগিসো রাবাডা। রাইলি রুসো। লিয়াম লিভিংস্টোন। সিকন্দর রাজা। এক ঝাঁক বড় নাম। স্যাম কারান দুর্দান্ত অলরাউন্ডার। প্রথম ম্যাচেই যার প্রমাণ দিল। ইংল্যান্ডের হয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভাল পারফর্ম করেছে কারান। আইপিএলের নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচে চার বিদেশি ক্রিকেটারকে খেলানো যায়। প্রত্যেক দলই বিদেশি ক্রিকেটারদের দিয়ে বাজিমাত করতে চায়। এবারের আইপিএলে রেকর্ড দাম পেয়েছে, সেও তো দুই বিদেশি ক্রিকেটার। মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স। পাঞ্জাব কিংসের সাফল্য কিন্তু অনেকটাই নির্ভার করে রয়েছে ওদের বিদেশি ক্রিকেটারদের ওপর। 


কারান বা লিভিংস্টোন একা হাতে ম্যাচ বার করে দিতে পারে। কারানের বলটাও খুব কার্যকরী। স্যুইং রয়েছে, গতি রয়েছে। রাবাডার কথাও না বললে নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে দারুণ সব স্পেল করেছে। আইপিএলেও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।


দুর্বলতা


পাঞ্জাব কিংস দলটিকে দেখে খাতায় কলমে অন্তত খুব একটা ভারাসাম্য রয়েছে বলে মনে হয় না। কেকেআর যেমন প্রত্যেক বিভাগে দক্ষ ক্রিকেটারদের নিয়েছে। হাতে রয়েছে বিকল্প। পাঞ্জাবকে সেখানে দেখলে কোনওভাবেই মনে হয় না যে, টুর্নামেন্ট জেতার মতো দল। অন্তত সিএসকে, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বা কেকেআরের পাশে কিছুটা ফিকে তো বটেই।


শিখর ধবনের মতো নাম রয়েছে পাঞ্জাব কিংসে। কিন্তু ধবন এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে। ও কখনওই যশস্বী জয়সওয়ালের মতো তরুণের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে বলে মনে হয় না। অবশ্য সকলের ক্ষেত্রেই এই নিয়ম প্রযোজ্য। ধোনিকে কি আমরা ক্রিকেটার হিসাবে আগের মতো করে পাই আর? ধবনও তাই। ধবন দুর্দান্ত ক্রিকেটার। কিন্তু তাই বলে আইপিএলে ধারাবাহিকতা দেখানো সহজ হবে না।


পাঞ্জাব দলে ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে বড় নাম নেই। যারা রয়েছে, সেই আশুতোষ শর্মা, হরপ্রীত সিংহ, বিশ্বনাথ সিংহ, শিবম সিংহ, শশাঙ্ক সিংহ, হরপ্রীত ব্রার-রা বড় মঞ্চে প্রমাণিত নয়। তরুণদের হয়তো দক্ষতা রয়েছে। কিন্তু আরসিবি, চেন্নাই সুপার কিংস, কেকেআর বা মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে যেমন বড় ম্যাচে খেলার মতো ভারতীয় ক্রিকেটার রয়েছে, পাঞ্জাব কিংসে নেই। আইপিএলকে তরুণরা নিজেদের প্রমাণ করার মঞ্চ হিসাবে দেখলে আলাদা কথা। পাঞ্জাব দলের জন্য সেটাই ভাল। আইপিএল লম্বা টুর্নামেন্ট। ভাল শুরু হলে আত্মবিশ্বাসটা ভাল থাকে। পাঞ্জাব কিংসের শুরুটাও ভাল হয়েছে।


গেমচেঞ্জার


পাঞ্জাব কিংসে এমন কয়েকজন ক্রিকেটার রয়েছে, যারা নিজের দিনে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। যেমন লিয়াম লিভিংস্টোন, কাগিসো রাবাডা, জিতেশ শর্মা ও অর্শদীপ সিংহ। প্রতিপক্ষ শিবিরে অতর্কিত আক্রমণ করে ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে তুলে নিতে দক্ষ এরা প্রত্যেকেই।


এক্স ফ্যাক্টর


এই পাঞ্জাব কিংস দলে দুজন এক্স ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। জিতেশ শর্মা ও লিভিংস্টোন। জিতেশ ভারতীয় দলেও খেলে ফেলেছে। বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়েই নামবে এবারের আইপিএলে। লিভিংস্টোন ইতিমধ্যেই প্রমাণিত।


প্রীতি জিন্টার পাঞ্জাব কিংস কোনওদিন আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়নি। এবারও খাতায় কলমে ফেভারিট নয় তারা। তবে ক্রিকেটে কখন যে কী হয়, কে বলতে পারে?


আরও পড়ুন: KKR 2024: স্পিন ত্রিফলা বিপক্ষের ত্রাস, কেকেআরের সেরা অস্ত্র ব্যাটিং গভীরতা, দশ বছর পর কাপ ফিরবে?


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে