সন্দীপ সরকার, কলকাতা: সোমবারই নাকি বছর চুয়াল্লিশ আগের আবহাওয়ার রেকর্ড স্পর্শ করেছে কলকাতার দাবদাহ। সন্ধ্যায় ইডেনে বসে মনে হচ্ছিল, কেউ কি টাইমমেশিনে করে গোটা শহরকে এক যুগ পিছনে নিয়ে চলে গেলেন!
ইডেন গার্ডেন্সে আইপিএলের (IPL 2024) ম্যাচে বল বনবন ঘুরছে। লাফাচ্ছে। স্পিনারদের সামনে থরহরিকম্প শুরু হয়ে যাচ্ছে ব্যাটারদের... নাহ। অন্তত বছর পাঁচেকের মধ্যে এ দৃশ্য দেখা গিয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না কেউই। কলকাতা নাইট রাইডার্সের স্পিনের ছোবল ক্ষতবিক্ষত করে দিল দিল্লি ক্যাপিটালসকে (KKR vs DC)। প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ১৫৩/৯ স্কোরে আটকে গেলেন ঋষভ পন্থরা।
ইঙ্গিতটা পাওয়া গিয়েছিল দিল্লি ক্যাপিটালস ইনিংসের অষ্টম ওভারে। সুনীল নারাইনের বল পন্থের মিডল-অফ স্টাম্পে পড়ে প্রায় একহাত ঘুরল। লাফালও। চকিতে ব্যাটারের শরীরের দিকে ধেয়ে এল। এতটাই হতচকিত হয়ে পড়লেন পন্থ যে, হাত থেকে ব্যাট খসে পড়ল। নারাইন হাসতে হাসতে গিয়ে তাঁর হাতে ব্যাট তুলে দিয়ে এলেন। সুনীল নারাইনও নাকি হাসছেন। সব সময় যিনি নির্লিপ্ত থাকেন। আসলে ততক্ষণে তিনি বুঝে গিয়েছেন যে, ইডেনের এই পিচ বছর দশেক আগে তাঁর প্রিয় মৃগয়াক্ষেত্র ছিল।
যে উইকেটে স্পিনারদের আক্রমণে আনা মানেই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজ়িক শুরু হয়ে যেত, দুরন্ত ঘূর্ণি, এই লেগেছে পাক... যে বাইশ গজে একটা সময় ১৬০ ছিল আইপিএলে জেতার রান। ১৪০ মানে লড়াকু স্কোর। কেকেআরের জয়ের মন্ত্রই ছিল, প্রথমে ব্যাট করো, বোর্ডে দেড়শো তোলো, আর তারপর এগিয়ে দাও নারাইন-অজন্তা মেন্ডিস-পীযূষ চাওলাদের। বাকি কাজটা তাঁরাই সেরে ফেলবেন।
তবে ২০১৫ সালের পর মাঠের আমূল সংস্কার হতেই বদলে গিয়েছে ইডেন পিচের চরিত্র। এখন এই মাঠে পেসাররাও গতি-বাউন্স পান। আইপিএলে আড়াইশো এখন জলভাত। ২৬১ করেই আগের ম্যাচে হেরে গিয়েছেন নাইটরা।
তবে নাইট মালিক শাহরুখ খানের জোরাজুরিতেই কি না জানা নেই, সোমবারের পিচ সেই পুরনো ইডেনের স্মৃতিকে উস্কে দিল। নারাইনের চকিত টার্ন দিয়ে শুরু। বরুণ চক্রবর্তীর বলও ঘুরল, লাফাল। নাইট স্পিনারদের খেলতেই পারলেন না দিল্লির ব্যাটাররা। এমনিতেই টস জিতে ইডেনে প্রথমে ব্যাট করার এক আজব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পন্থ। যেখানে সব দল রান তাড়া করার পথে হাঁটছে ইডেনে, সেখানে দিল্লি ক্যাপিটালস শিবিরের সিদ্ধান্ত অনেককেই হতবাক করেছে।
তবে দিল্লি ইনিংসকে শুরুর ধাক্কাটা দিলেন নাইট পেসাররা। চোট সারিয়ে ফিরে জেক ফ্রেজার ম্যাকগার্ককে শুরুতেই তুলে নিলেন মিচেল স্টার্ক। যে ম্যাকগার্ক আইপিএলে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে নজর কেড়েছেন। পৃথ্বী শ ও শাই হোপকে তুলে নিলেন বৈভব অরোরা। হর্ষিত রানা ফেরালেন অভিষেক পোড়েলকে। চন্দননগরের ক্রিকেটার অবশ্য উইকেট ছুড়ে দিয়ে এলেন। জোড়া বাউন্ডারি ওএক ছক্কায় ১৮ রান করেছিলেন অভিষেক। হর্ষিতকে দুঃসাহসী স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে গেলেন।
তারপর থেকে শুধুই নাইট স্পিনারদের দাপটের চিত্রনাট্য। বরুণ চক্রবর্তীর বলে ১৮ রানের মাথায় শর্ট থার্ড ম্যানে পন্থের ক্যাচ ফেললেন হর্ষিত। পরে বাউন্ডারি লাইনে কুলদীপ যাদবের একটি ক্যাচ ফেলে সটান ৬ করে দিলেন। পন্থ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। ২০ বলে ২৭ রানে ফিরলেন। তবে কুলদীপ অপরাজিত রইলেন ৩৫ রানে। তাঁর জন্যই দেড়শো পেরল দিল্লির স্কোর।
৪ ওভারে ১৬ রানে ৩ উইকেট বরুণের। ৪ ওভারে ২৪ রানে ১ উইকেট নারাইনের। দুই স্পিনারই শ্বাসরুদ্ধ করে দিল দিল্লির ব্যাটিংয়ের। দুটি করে উইকেট বৈভব ও হর্ষিতের। এক উইকেট পেলেও ৩ ওভারে ৪৩ দিলেন স্টার্ক। কেকেআরের একমাত্র কাঁটা হয়ে রইল হর্ষিতের কুৎসিত ফিল্ডিং। তবু, ম্য়াচ জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী কেকেআর প্রেমীরা।
আরও পড়ুন: রিঙ্কু সিংহ কট শাহরুখ বোল্ড আব্রাম! দেড় ঘণ্টা অন্য ক্রিকেট দেখল ইডেন
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।