চেন্নাই: প্রথম ওভারে তখন রান আপ মাপছেন মিচেল স্টার্ক। ট্র্যাভিস হেডকে দেখা গেল, নন স্ট্রাইকিং এন্ডে দাঁড়িয়ে পড়লেন। স্ট্রাইক নিলেন অভিষেক শর্মা (Abhishek Sharma)। সেখানেই কি সানরাইজার্স হায়দরাবাদ (KKR vs SRH) বুঝিয়ে দিল যে, মানসিকভাবে চাপে রয়েছে তারা?
সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে প্রত্যেক ম্যাচে প্রথম বল ফেস করেন ট্র্যাভিস হেড (Travis Head)। নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকেন অভিষেক। এমনিতেই গোটা আইপিএলে (IPL Final) এই ওপেনিং জুটি ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালাচ্ছেন। এমনই সেই প্রলয়লীলা যে, প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের ত্রাস হয়ে উঠেছেন। এই জুটিকে ডাকা হচ্ছিল ট্র্যাভিষেক নামে।
কিন্তু কলকাতা নাইট রাইডার্সের পেসাররা সাধারণের স্তরে নামিয়ে এনেছেন ট্র্যাভিষেককে। কোয়ালিফায়ারে মাথা তুলে দাঁড়াতেই দেননি এই জুটিকে। স্টার্কের স্বপ্নের ডেলিভারিতে কোনও রান না করেই বোল্ড হয়েছিলেন হেড। এদিন প্রথম ওভারে স্টার্কের আগুন সামলাতে হয়নি হেডকে। তবে অস্ট্রেলীয় পেসারের গতির আঁচে পুড়লেন অভিষেক। প্রথম ওভারের পঞ্চম বল। ফের স্টার্কের হাত থেকে বেরল অবিশ্বাস্য এক ডেলিভারি। বল মিডল স্টাম্পের ওপর গুড লেংথ স্পটে পড়ে সামান্য বাইরে বেরিয়ে অভিষেকের অফস্টাম্প ভেঙে দিল।
নিস্তার পেলেন না হেডও। দ্বিতীয় ওভারে বৈভব অরোরার স্যুইংয়ের হদিশ না পেয়ে কট বিহাইন্ড হলেন। নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ০। শেষ চার ইনিংসের মধ্যে তিনটি শূন্য অস্ট্রেলীয় তারকার। দেখে কে বলবে যে, এই মাঠেই গত নভেম্বরে ওয়ান ডে বিশ্বকাপের ফাইনালে কার্যত একা হাতে ভারতের স্বপ্ন দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছিলেন হেড।
শুরুর দু'ওভারে জোড়া ধাক্কায় নিজামের শহর এমন খোলসে ঢুকে গেল যে, গোটা ইনিংসে তা থেকে আর বেরতেই পারল না। স্টার্কের আগুনের তখনও শেষ হয়নি। আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার। ২৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকায় তাঁকে কিনেছিল কেকেআর। শুরুর দিকে যখন দেদার রান খরচ করছিলেন, প্রত্যেক মুহূর্তে সমালোচনায় রক্তাক্ত করা হচ্ছিল বাঁহাতি পেসারকে। তবে তিনি যে তিন-তিনটি বিশ্বকাপ, টেস্টে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য, আর তার জন্য যে তাঁকে গোটা বিশ্ব কুর্নিশ করে, টুর্নামেন্ট যত এগিয়েছে, প্রমাণ করে দিয়েছেন স্টার্ক। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই তিনি তুলে নেন রাহুল ত্রিপাঠিকে। প্রাক্তন নাইট কোয়ালিফায়ার ওয়ানে ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে লড়াই করেছিলেন। রবিবার সেই জায়গাও দিলেন না স্টার্ক।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভারের শেষে হায়দরাবাদের স্কোর দাঁড়ায় ৪০/৩। সেখানেই যেন ইনিংসের ভাগ্য লেখা হয়ে গিয়েছিল। চলতি আইপিএলে পাওয়ার প্লে-তে এটা হায়দরাবাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর।
শুরুর সেই ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারল না হায়দরাবাদ। ৯ বল বাকি থাকতে মাত্র ১১৩ রানে শেষ হয়ে গেল হায়দরাবাদ। আইপিএল ফাইনালে যা সর্বনিম্ন স্কোর। ম্যাচ জিতে তৃতীয় আইপিএল ট্রফি ঘরে তুলতে মাত্র ১১৪ রান তুলতে হবে কেকেআরকে।
অসুস্থতা সামান্য কমতেই মাঠে এসেছিলেন শাহরুখ খান। সঙ্গে স্ত্রী গৌরী, মেয়ে সুহানা, ছোট ছেলে আব্রাম। ছিলেন জুহি চাওলাও। তাঁদের সামনে জ্বলে উঠলেন কেকেআর বোলাররা। সবচেয়ে বেশি ৩ উইকেট নিলেন আন্দ্রে রাসেল। এবারের টুর্নামেন্টে অলরাউন্ডার রাসেলের পুনর্জন্ম হল যেন। প্রত্যেক ম্যাচে নিয়ম করে উইকেট তুললেন। ২টি করে উইকেট স্টার্ক ও হর্ষিতের। বৈভব, সুনীল নারাইন ও বরুণ চক্রবর্তী নিলেন একটি করে উইকেট। প্রথম আইপিএল জয়ের মাঠে তৃতীয় খেতাব জেতা যেন সময়ের অপেক্ষা কেকেআরের।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।