কলকাতা: আইপিএলে টানা দুই ম্যাচ জিতল কলকাতা নাইট রাইডার্স। রয়্য়াল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরকে হারাল ৭ উইকেটে। মাঠে একে অপরকে আলিঙ্গন করলেন বিরাট কোহলি ও গৌতম গম্ভীর। বরফ গলল? খেলার দুনিয়ার সারাদিন।


নাইটদের অশ্বমেধ ছুটছে


জিতেই চলেছে কেকেআর। প্রথম ম্যাচে ঘরের মাঠে হারিয়েছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে। দ্বিতীয় ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের ডেরায় গিয়ে হারিয়ে দিল আরসিবি-কে। হারিয়ে দিল বললেও হয়তো কম লেখা হয়। লেখা উচিত, উড়িয়ে দিল। একটা পরিসংখ্যান থেকেই নাইটদের দাপট পরিষ্কার হয়ে যায়। ১৮৩ রান তাড়া করতে নেমে ম্যাচে একটা সময় এমন পরিস্থিতি দাঁড়াল যে, শেষ ৫ ওভারে ১৬ রান তুলতে হবে। হাতে সাত উইকেট!


আরসিবি ইনিংসকে টেনেছিলেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। ওপেন করতে নেমে ৫৯ বলে অপরাজিত ৮৩ রানের ইনিংস খেলেন কোহলি। সঙ্গে কখনও ক্যামেরন গ্রিন (২১ বলে ৩৩ রান), কখনও দীনেশ কার্তিক (৮ বলে ২০ রান)। স্টার্ককে সাধারণের স্তরে নামিয়ে এনেছিলেন। কেকেআর বোলারদের মধ্যে নজর কাড়লেন হর্ষিত রানা ও আন্দ্রে রাসেল। দুজনই তুলে নিলেন দুটি করে উইকেট। ১৮২/৬ তুলেছিল আরসিবি।


জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৩.১ ওভার বাকি থাকতে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেল কেকেআর। আগের ম্যাচে রান না পেলেও, এই ম্যাচেও নারাইনকে দিয়েই ইনিংস ওপেন করিয়েছিল কেকেআর। ২২ বলে ৪৭ রান করে কেকেআরের রান তাড়া করার ভিত তৈরি করে দিলেন নারাইনই। ফিল সল্ট ২০ বলে করলেন ৩০ রান। সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ৩০ বলে ৫০ রান করলেন বেঙ্কটেশ আইয়ার। ২৪ বলে ৩৯ রানে অপরাজিত রইলেন শ্রেয়স আইয়ার। মাত্র ১৬.৫ ওভারে লক্ষ্যপূরণ কেকেআরের। ছক্কা মেরে দলকে জেতালেন শ্রেয়স।


ঝামেলা মিটল?


শুক্রবার চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ও কলকাতা নাইট রাইডার্স। সেই ম্যাচের অনেক আগে থেকেই আলোচনা চলছিল, কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) ডাগ আউটের দিকে তাকালে কি বাড়তি উৎসাহ পাবেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)? সেখানে যে বসে থাকবেন গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir)। দুই তারকার সম্পর্ক নিয়ে কম কাণ্ড হয়নি। গত আইপিএলেই (IPL 2024) লখনউ সুপার জায়ান্টস বনাম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ম্যাচে গম্ভীর-কোহলি মাঠেই বচসায় জড়িয়েছিলেন। একে অন্যের দিকে তেড়েও গিয়েছিলেন।


শুক্রবার ব্যাটে রান পেলেন কোহলি। কেকেআরের বিরুদ্ধে তিনিই দলের সর্বোচ্চ স্কোরার। গম্ভীর দর্শনের জন্যই কি না জানা না গেলেও, ঘরের মাঠে সাবলীল ব্যাটিং করলেন কোহলি। মাত্র ৩৬ বলে হাফসেঞ্চুরি। ৫৯ বলে ৮৩ রান করে অপরাজিত রইলেন কোহলি। তবে ব্যাটিং ছাপিয়ে উঠে এল কোহলি-গম্ভীর আলিঙ্গন নিয়ে আলোচনা।


আরসিবি ইনিংসের ১৬তম ওভার তখন সবে শেষ হয়েছে। স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউট। মাঠে ক্রিকেটারেরা জল পান করে নিচ্ছিলেন। ক্রিজে তখন কোহলি। মাঠে ঢোকেন কেকেআরের মেন্টর গম্ভীর। স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউটের আড়াই মিনিট সময় যে রণকৌশল ঠিক করে নেওয়ার মাহেন্দ্রক্ষণ।


গম্ভীরকে দেখে এগিয়ে যান কোহলি। দুজনকে দেখা যায় একে অপরকে আলিঙ্গন করছেন। হাসিমুখে কথা বলেন দুই তারকা। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। দুজনের সম্পর্কের বরফও যেন গলার ইঙ্গিত। ম্যাচে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক রবি শাস্ত্রী। যিনি কোহলি ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। মজা করে শাস্ত্রী বলে ফেললেন, 'দারুণ স্পিরিট দেখাল দু'জন। দর্শকেরা হয়তো এই দৃশ্য দেখে খুব একটা খুশি হবেন না।' যেন বোঝাতে চাইলেন, কোহলি-গম্ভীর দ্বৈরথ ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল।


কলকাতা পুলিশের পোস্ট


এমন ছবির অপেক্ষা কেউ করেছিলেন কি না জানা নেই। কারণ আইপিএলে (IPL 2024) মাঠে হোক বা মাঠের বাইরে বারবার ২ জনে শিরোনামে উঠে এসেছেন, নিজেদের ঝামেলায় জড়ানোর জন্য। গতবার তো হাতাহাতির পর্যায়েও পৌঁছে গিয়েছিল গৌতম গম্ভীর ও বিরাট কোহলির লড়াই। কিন্তু শুক্রবার চিন্নাস্বামী দেখল একেবারে অন্য় ছবি। বলা যেতে পারে একেবারে বিরল মুহূর্তের ছবি। গম্ভীর ও বিরাট দু জনে একে অপরের পাশে দাঁড়ালেন, হাত মেলালেন। জড়িয়ে ধরলেন দুজন দুজনকে। হাসিমুখে সারাক্ষণ কথা বললেন। এরপর দু জন দুজনের দিকে থাম্ব দেখিয়ে চলে গেলেন। ২২ গজে আরসিবি বনাম কেকেআর ম্য়াচের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মাঝেও এই টুকরো ছবি যেন বুঝিয়ে গিল যে সম্পর্কের বরফ গলেছে ২ তারকার। 


আর এই ছবিটি নজর এড়ায়নি কলকাতা পুলিশেরও। বরাবরই সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সক্রিয় কলকাতা পুলিশ। খেলার মাঠের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি নিয়ে মিম বানিয়ে সচেতনতামূলক বার্তা দিতে দেখা গিয়েছে তাদের। এবার কোহলি ও গম্ভীরের এমন সুন্দর ছবিটিও পোস্ট করে কলকাতা পুলিশের তরফে লেখা হয়েছে, ''সমস্যা গম্ভীর হোক বা বিরাট, সমাধান করতে ডায়াল করুন ১০০ নম্বরে''। অর্থাৎ ২ ক্রিকেটারের নামকে সুন্দরভাবে ব্য়বহার করে এখানে জনসচেতনামূলক বার্তা দিতে চেয়েছে কলকাতা পুলিশ। 


মাহির মন্ত্র


গুজরাত টাইটান্সের (GT) বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে তখন বিধ্বংসী ইনিংস খেলছেন শিবম দুবে। টিভি ক্যামেরা ধরল মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে (MS Dhoni)। ব্যাট-প্যাড নিয়ে অপেক্ষা করছেন। চিপক গ্যালারি চিৎকারে ফেটে পড়ল। এই বুঝি ব্যাট করতে নেমে পড়লেন মাহি।


কিন্তু ধোনি নন। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে যিনি চেন্নাই সুপার কিংসের জার্সিতে ব্যাট করতে নেমেছিলেন, তিনি সমীর রিজভি (Sameer Rizvi)। ডেথ ওভারে সেই সময়ে স্পিনাররা বল করছিলেন। রিজভি নিজেই বলেছেন, '১৯তম ওভারে রশিদ বল করতে আসার পর কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং বলেন, একটা উইকেট পড়লে তুমি নামবে। তখন থেকেই ভাবছিলাম যে, ১৯তম ওভারে একটা উইকেট পড়া মানে ক্রিজে গেলেই সকলে প্রত্যাশা করবে বাউন্ডারি মারি। আমার মাথায় একটা জিনিসই ঘুরছিল। পরিষ্কার করে নিয়েছিলাম, মাঠে গিয়ে বড় শট মারতেই হবে।'


টুর্নামেন্টে নিজের খেলা প্রথম বলেই রশিদ খানকে স্যুইপ করে ছক্কা মেরেছেন সমীর। সেই ওভারেই লং অফের ওপর দিয়ে রশিদকে ফের একটি ছক্কা মারেন। প্রথম সুযোগেই নজর কেড়ে নিয়েছেন সমীর। তাঁর কথায়, 'আমার আগের ম্যাচগুলি দেখলে বুঝবেন, আমি সর্বদাই স্পিনের বিরুদ্ধে ভাল খেলি। নেটেও স্পিনারদের বলে ভাল খেলেছি। আমি যখন ছোট ছিলাম, কাকা তনকিব আখতার স্পিনের বিরুদ্ধে ব্য়াটিং করাতেন। উনি নিজেই টেনিস বলে বল করতেন। একটা ৩০ গজের বৃত্ত টেনে দিয়ে বলতেন, তার বাইরে মারলেই ছক্কা। এভাবেই বছরের পর বছর প্র্যাক্টিস করে গিয়েছি।'


নিলামের টেবিলে ঝড় তুলেছিলেন সমীর। গুজরাট টাইটান্স ও দিল্লি ক্যাপিটালসের সঙ্গে লড়াই করে ৮ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা খরচ করে সমীরকে নেয় চেন্নাই। এত চড়া দাম পাওয়ার পর থেকেই রিজভিকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়। সমীর বলছেন, 'আমার ওপর কোনও চাপ ছিল না। খেলোয়াড়ের কাছে তার দাম কখনও চাপ হতে পারে না। আমি কেমন পারফর্ম করলাম বা কত রান করলাম সেটাই আসল। এমএস ভাই (ধোনি) আমাকে বলেছেন দাম নিয়ে না ভেবে খেলায় মনোযোগ দিতে। কারণ, প্রত্যেকের দাম আলাদা। আসল হল কেমন পারফর্ম করছি আর চাপ সামলাচ্ছি।'


কোহলির সান্ত্বনা


আইপিএলে দুরন্ত ছন্দে বিরাট কোহলি। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যিনি দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে ছিলেন। পুত্রসন্তান হওয়ার জন্য ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে খেলেননি। তবে আইপিএল গ্রহে পা রেখেই উজ্জ্বল কিংগ কোহলি। শুক্রবার তাঁর দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ঘরের মাঠে হেরে গিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছে। তবু, ম্যাচের শেষে কোহলি পেয়েছেন সান্ত্বনা পুরস্কার।


সপ্তদশ আইপিএলের প্রথম সপ্তাহেই ব্যতিক্রমী কিছু ব্যাটিং বিস্ফোরণ দেখা গিয়েছে। ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens) কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল (Andre Russell) বিধ্বংসী হাফসেঞ্চুরি করে দলের জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন। শিবম দুবে চেন্নাই সুপার কিংসের জার্সিতে গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে ২৩ বলে ৫১ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেছিলেন। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের (SRH) জার্সিতে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা হেনরিখ ক্লাসেন (Heinrich Klaasen)। আইপিএলের অরেঞ্জ ক্যাপও ছিল ক্লাসেনের দখলে। শুক্রবার তা ছিনিয়ে নিলেন কোহলি