করাচি: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন ধূমকেতুর মত। যুব দলের হয়ে একটি ম্যাচ ৯ উইকেট তুলে নিয়েই নির্বাচকদের নজরে চলে আসেন। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে মাত্র ১৯ বছর বয়সে টেস্টে অভিষেক। গিলক্রিস্ট, হেডেনদের মত বিশ্বমানের ব্য়াটারদের সামনে সমান সাবলীল ছিলেন বাচ্চা ছেলেটি। শুরু থেকেই তাঁর বোলিংয়ে ইনস্যুইং ও আউটস্যুইং সব ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছিল। বিদেশি ব্যাটসম্যানদের পক্ষে ইরফান পাঠানের (Irfan Pathan) বল খেলা রীতিমত দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছিল। এহেন ইরফানের (Irfan Pathan) জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্তটি আসে ২০০৬ সালে পাকিস্তান সফরে। দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে টেস্টে হ্যাটট্রিক করেছিলেন সেই সিরিজের করাচি টেস্টে। আমাদের ওস্তাদের মার সিরিজে ইরফান পাঠানের সেই স্পেল নিয়েই আজকের প্রতিবেদন -


পাঠানের হ্যাটট্রিক করাচি টেস্টে



পাকিস্তানের বিরুদ্ধে করাচিতে চলছিল তৃতীয় টেস্ট। ভারত টসে জিতে পাকিস্তানকে ব্যাট করতে পাঠায় আর রাহুল দ্রাবিড় প্রথম ওভারে বল করা দায়িত্ব দেন ইরফান পাঠান কে। প্রথম ওভারেই তিনি কামাল করে দেন। পর পর তিন বলে তিন পাকিস্তানি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন প্যাভিলিয়নে। টেস্টে ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ওভারে হ্যাটট্রিক করা বিশ্বের একমাত্র বোলার পাঠান। প্রথম বলে সালমান বাটকে ফিরিয়ে দেন গুজরাতের এই বাঁহাতি পেসার। আউটস্যুইংয়ের কোনও কূলকিনারা পাননি বাট। দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। সেটি ছিল ওভারের চতুর্থ বল।


পঞ্চম বলে ব্যাট করতে আসেন ইউনিস খান। পাঠানে ইনস্যুইং এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে তা সামলাতেই পারেননি ইউনিস। বল প্য়াডে লাগে। আর ইউনিসের পা স্ট্যাম্পের সামনে পড়ে যায়। ওভারের শেষ বলে পাঠানের শিকার হন সেই সময়ের সেরা পাক ব্য়াটার ইউসুফ ইউহানা (পরবর্তীতে মহম্মদ ইউসুফ হয়েছিলেন)। ইংস্যুইংয়ের কিনারা না পেয়ে বোল্ড হয়ে যান তারকা পাক ব্যাটার। 


মিয়াঁদাদের বক্তব্যের যোগ্য জবাব


হরভজন সিংহের পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে টেস্টে হ্যাটট্রিক করেন পাঠান। তবে তার থেকেও বড় কথা প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াঁদাদের বক্তব্যের যোগ্য জবাবও দিয়ে দেন পাকিস্তানের মাটিতেই হ্যাটট্রিক করে। ২০০৪ সালে পাঠান যখন প্রথমবার জাতীয় দলের জার্সিতে পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন, তখন মিয়াঁদাদ তাঁকে দেখে মন্তব্য করেছিলেন, ''এরকম বোলার পাকিস্তানের গলিতে গলিতে জন্মায়।'' সেই সময় কথাটি শুনে খুব খারাপ লেগেছিল পাঠানের বাবারও। তিনি না কি পাকিস্তানেও উড়ে গিয়েছিলেন মিয়াঁদাদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে। নিজের মধ্যেই হয়ত জেদ চেপে রেখেছিলেন পাঠান। তাই ২ বছর বাদে মিয়াঁদাদের দেশে গিয়ে তাঁরই দেশের বিরুদ্ধে ইতিহাস গড়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে ওস্তাদের মার শেষ রাতে। 


যদিও এই ম্যাচটি ভারতকে হারতে হয়েছিল ৩৪১ রানে। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে ২৪৫ রান বোর্ডে তুলেছিল পাকিস্তান। জবাবে ভারতীয় দলের ইনিংস শেষ হয়ে যায় ২৩৯ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেট হারিয়ে ৫৯৯ রান বোর্ডে তুলে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেয় পাক দল। বিশাল লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ২৬৫ রানেই শেষ হয়ে যায় টিম ইন্ডিয়ার দ্বিতীয় ইনিংস। প্রথম দুটি টেস্ট ড্র হলেও এই টেস্টে ভারতকে ৩৪১ রানে হারিয়ে পাকিস্তান ১-০ তে সিরিজ জিতে যায়। তবে সিরিজ পাক দল জিতলেও হৃদয় জিতে নেন ইরফান।