ভাস্কো: দুর্দান্ত এক ফাইনালের মাধ্যমে শেষ হল হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগের অসাধারণ এক মjসুম। বিশেষজ্ঞরা যাকে সবচেয়ে কঠিন লড়াইয়ের মরসুম বলে মন্তব্য করেছেন। জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে থেকে সারাটা মরসুম কাটানোর জন্য শুধু নয়, সে তো গত মরসুমেও ছিল। এ বারে জৈব সুরক্ষা বলয়ের দুর্ভেদ্য দেওয়াল ভেদ করে কোভিড হানা দেয় একাধিক দলের শিবিরে। ফলে ফুটবলাররা অনেকেই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েন এবং তাদের সুস্থ হতে সময়ও লাগে।


এ বারের মরশুমকে সবচেয়ে কঠিন বলা হচ্ছে অবশ্য অন্য কারণে। যে মানের ফুটবল হয়েছে এ বার। প্রতিটি দল যে ভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। যে ভাবে বেশিরভাগ ম্যাচেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছে দলগুলি, তাতে প্রায় প্রত্যেক কোচই স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন, প্রতিযোগিতার তীব্রতার দিক থেকে ভারতের এক নম্বর ফুটবল লিগকে এখন বিশ্বের সেরা লিগগুলির সঙ্গে তুলনা করা যায়।


হিরো অফ দ্য লিগগ্রেগ স্টুয়ার্ট




সেরার মুকুট মাথায় তোলার মতোই মরসুম কাটিয়েছেন এই স্কটিশ তারকা স্ট্রাইকার, যিনি জামশেদপুর এফসি-র প্রধান ভরসা হয়ে ওঠেন। দলের ৪৩টি গোলের মধ্যে ২০টিতে তাঁর প্রত্যক্ষ অবদান ছিল। দশটি গোল তিনি নিজে করেন, দশটি গোল করতে প্রত্যক্ষ সাহায্য করেন। এর বাইরে ৬৩টি শট নিয়েছেন এবং ৭৩টি ক্রস দিয়েছেন সতীর্থদের। লিগশিল্ড জেতার নেপথ্যে স্টুয়ার্টের অবদান ছিল যথেষ্ট। দল তাঁকে ধরে রাখতে পারলে আগামী মরসুমে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ অভিযানে অন্যতম প্রধান ভরসা হয়ে উঠতে পারেন তিনি। মোট ১৬জন বিশেষজ্ঞকে মরসুমের সেরা ফুটবলার বাছার অনুরোধ করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ১৪জনই ভোট দিয়েছেন স্টুয়ার্টকে। বার্থোলোমিউ ওগবেচে, পিটার হার্টলেরা এই দৌড়ে থাকলেও স্টুয়ার্টের থেকে তাঁরা বহু যোজন দূরে থেকে এই দৌড় শেষ করেন।




গোল্ডেন গ্লাভপ্রভসুখন গিল




কেরালা ব্লাস্টার্স ফাইনালে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেও শেষ পর্যন্ত টাই ব্রেকারে হেরে গেলেও তাদের গোলকিপার প্রভসুখন জিতে নিলেন সেরা গোলকিপারের খেতাব। কেরালার দলের গোলপ্রহরী গিল এ বার সাতটি ম্যাচে একটিও গোল খাননি। যে কৃতিত্ব আর কোনও গোলকিপার অর্জন করতে পারেনি। আরও বড় ব্যাপার হল, এই সাতটি ম্যাচেই তাঁর দল পুরো তিন পয়েন্ট করে ঘরে তোলে। সারা মরসুমে মোট ৪৭টি গোল বাঁচিয়েছেন এই তরুণ গোলরক্ষক, যাঁর সেভ পার্সেন্টেজ প্রায় ৭০ শতাংশ। কিন্তু কথায় বলে যার শেষ ভাল, তার সব ভাল। কিন্তু গিল তাঁর এই অর্জিত সন্মান তেমন ভাবে উপভোগ করতে পারলেন না ফাইনালে তাঁর প্রতিদ্বন্দী গোলকিপার লক্ষ্মীকান্ত কাট্টিমণির নায়কোচিত পারফরম্যান্সের জন্য। আসলে ফুটবল এমনই। মাঝে মাঝে সে খুব নির্দয় হয়ে ওঠে।


গোল্ডেন বুটবার্থোলোমিউ ওগবেচে 




বিপক্ষের রক্ষণ ও গোলকিপারদের কাছে যিনি এ বার ত্রাস হয়ে ওঠেন, তাঁর নাম ওগবেচে। নাইজেরিয়ার এই প্রাক্তন বিশ্বকাপার ও প্যারিস সঁ জারমেইনের প্রাক্তন ফুটবলার প্রায় প্রতি ম্যাচে গোল করেছেন। গত তিন মরসুম ধরেই অবশ্য বিপক্ষের গোল এরিয়ায় ভীতির সঞ্চার করে চলেছেন এই অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার। তবে এ বার সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে এই মরশুমে ২২টি ম্যাচ খেলেছেন ওগবেচে। গোল করেছেন ১৮টি। সর্বোচ্চ স্কোরারদের তালিকায় তিনি তো এক নম্বরে ছিলেনই, তার ওপর আবার তাঁর ধারেকাছেও কেউ থাকতে পারেননি এ বার। ওগবেচের ধারাবাহিকতা তাঁকে এই জায়গায় এনে পৌঁছে দেয়। দ্বিতীয় স্থানে যিনি ছিলেন, সেই মুম্বই সিটি এফসি-র ইগর অ্যাঙ্গুলোর মোট গোলসংখ্যা ছিল ১০। গ্রেগ স্টুয়ার্টও দশ গোল করেন। কিন্তু ওগবেচেকে ছোঁয়ার মতো কেউ ছিলেন না। ফলে অনেক আগে থেকেই সবাই বুঝে নেয়, এ বার গোল্ডেন বুট তাঁর হাতেই উঠবে।   -- তথ্য সংগ্রহ আইএসএল মিডিয়া