কলকাতা: চলতি মরসুমের মতো এ বারের হিরো আইএসএলও তেমন ভাল ভাবে শুরু করতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল এফসি (Emami East Bengal FC)। গত শুক্রবার প্রথম ম্যাচেই কেরালা ব্লাস্টার্সের (Kerala Blastars) বিরুদ্ধে মাঠে নেমে হারের মুখে দেখে লাল-হলুদ বাহিনী। প্রতিপক্ষের ঘরের মাঠে খুব একটা সাহসী হওয়ার সুযোগও পায়নি তারা।


কেরালা ব্লাস্টার্স ঘরের মাঠে সে দিন যতটা আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছিল, তার প্রায় কিছুই ছিল না ইস্টবেঙ্গল এফসি-র পারফরম্যান্সে। আক্রমণে ধারের অভাব, অগোছালো মাঝমাঠ এবং রক্ষণে বোঝাপড়ার অভাব সে দিন লাল-হলুদ ডিফেন্সকে ডুবিয়ে দেয়। গোলকিপার কমলজিৎ সিং এ দিন অন্তত হাফ ডজন গোল সেভ করেন। তাঁর এই দক্ষতা স্টিফেন কনস্টান্টাইনের দলকে আরও বড় ব্যবধানে হারের হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয়।


কিন্তু রোজই কি গোলকিপার বাঁচাবেন তাদের? এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুধবার ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে সে দিনের ভুলগুলি শুধরে নিয়ে খেলতে না পারলে জেতা কঠিন হয়ে উঠতে পারে লাল-হলুদ শিবিরের। কারণ, গতবারের ব্যর্থতা কাটিয়ে এ বার এফসি গোয়া নতুন ভাবে শুরুর মন্ত্র নিয়ে হিরো আইএসএলে নামছে। তাই তারাও প্রতিপক্ষ হিসেবে খুব একটা সহজ হবে না। জিততে গেলে গত ম্যাচের চেয়ে ভাল পারফরম্যান্স দেখাতেই হবে ক্লেটন সিলভাকে।


পারফরম্যান্সের খতিয়ান


গতবার ইস্টবেঙ্গল লিগ তালিকায় একেবারে নীচে ছিল। কুড়িটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জিতেছিল তারা। এ মরসুমের শুরুটাও খুব একটা ভাল করতে পারেনি স্টিফেন কনস্টান্টাইনের লাল-হলুদ বাহিনী। কিন্তু ভবিষ্যতে ভাল পারফরম্যান্সের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে মরসুমের উদ্বোধনী টুর্নামেন্ট ডুরান্ড কাপে। চারটি ম্যাচ খেলে একটিতে জেতে তারা ও দুটিতে ড্র করে। হারে মাত্র একটিতে। চার গোল দিয়ে চার গোল খায়।


রানার্স-আপ মুম্বই সিটি এফসি-কে শেষে গ্রুপ ম্যাচে ৪-৩-এ হারায় তারা। সেই ম্যাচেই এ মরসুমে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয় ইস্টবেঙ্গল এফসি। তবে ডুরান্ড যে জায়গায় শেষ করেছিল লাল-হলুদ বাহিনী, সেই জায়গা থেকে হিরো আইএসএল শুরু করতে পারেনি। গত শুক্রবার ৭২ মিনিট পর্যন্ত গোলশূন্য থাকার পর আদ্রিয়ান লুনার গোলে এগিয়ে যায় কেরালা ব্লাস্টার্স। কিন্তু ম্যাচের একেবারে শেষে আট মিনিটের মধ্যে তিনটি গোলেই ম্যাচের ফয়সালা হয়। ৮২ মিনিটে গোল পান ব্লাস্টার্সের ইউক্রেনিয়ান মিডফিল্ডার ইভান কালিউঝনি। এর সাত মিনিট পরে আবার এক অসাধারণ গোল পান তিনি। এর মাঝে ৮৮ মিনিটের মাথায় ইস্টবেঙ্গলের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার অ্যালেক্স লিমা একটি গোল শোধ করলেও এর বেশি এগোতে পারেনি তারা।


গত হিরো আইএসএলে লিগ তালিকার নয় নম্বরে থেকে শেষ করে গোয়ার দল। এই লিগের ইতিহাসে এত খারাপ ফল আর কখনও হয়নি তাদের। ২০১৬-য় একেবারে নীচে আট নম্বরে ছিল তারা। কিন্তু তার পর থেকে নিজেদের শুধরে নিয়ে পরপর চার বছর প্রথম চারেই ছিল। কিন্তু গতবার এই ভরাডুবির পর ফের সাফল্যে ফিরে আসার পরীক্ষা তাদের সামনে। কিন্তু ডুরান্ড কাপেও ভাল কিছু করতে পারেনি এফসি গোয়া। গ্রপ পর্বে তারা মহমেডান স্পোর্টিংয়ের কাছে ১-৩-এ হারে, চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে ২-২ ড্র করে ও জামশেদপুর এফসি-কে ১-০-য় হারায়। তবে নক আউটে উঠতে পারেনি।


এ বার যে বিদেশি ফুটবলাররা ইস্টবেঙ্গল এফসি-তে সই করেছেন, তাঁরা আগের দুই মরসুমে বিদেশিদের চেয়ে ভাল পারফরম্যান্স দেখাবেন, এমনই আশা সমর্থকদের। কারণ, এঁদের অনেকেই হিরো আইএসএলে পরীক্ষিত। যেমন ক্লেটন সিলভা, অ্যালেক্স লিমা, ইভান গঞ্জালেজ। দেশীয় ফুটবলারদের মধ্যে থেকেও এমন খেলোয়াড়দের নেওয়া হয়েছে, যাঁদের এই লিগে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। যেমন মোবাশির রহমান, অনিকেত যাদব, ভিপি সুহের, কমলজিৎ সিং, জেরি লালরিনজুয়ালা, শৌভিক চক্রবর্তী। কিন্তু ডুরান্ড কাপ ও আইএসএলের প্রথম ম্যাচে নিজেদের ধারাবাহিক ভাবে মেলে ধরতে পারছেন না তাঁরা। প্রথম ম্যাচে দেখা গিয়েছে, কোচ স্টিফেন সামনে ক্লেটন সিলভা ও সুহেরকে রেখে তাঁদের পিছনে  সুমিত, শৌভিক, লিমা, তুহীনকে রেখে দল সাজিয়েছিলেন। রক্ষণ সামলাতে তিনি মূলত ভরসা করেন অঙ্কিত মুখার্জি, লালুচুঙনুঙ্গা, ইভান গঞ্জালেজ ও কিরিয়াকুর ওপর। বুধবার হয়তো অমরজিৎ সিং কিয়াম, জর্ডন ডোহার্টি, এলিয়ান্দ্রো, জেরি লালরিনজুয়ালাদের প্রথম দলে দেখা যেতে পারে।