কলকাতা: বুধবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে (Yuvabharati Stadium) ম্যাচে যত না লড়াই মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এবং কেরল ব্লাস্টার্সের (MBSG vs Kerala Blasters) মধ্যে, ততটা সবুজ-মেরুন বাহিনীর সঙ্গে তাদের দুই প্রাক্তনী প্রীতম কোটাল ও প্রবীর দাসেরও। গত মরশুমে মোহনবাগানকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যিনি, সেই প্রীতম এবার কেরল ব্লাস্টার্সে যোগ দিয়েছেন। একইভাবে গত মরশুমের আগে প্রবীরও মোহনবাগান ছাড়েন এবং এখন খেলেন কেরল ব্লাস্টার্সে। বুধবার এই দুজন হয়তো একসঙ্গে মাঠে নামবেন তাদের প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে। ফলে এই ম্যাচে বাড়তি আকর্ষণের বিষয় এটিই।
এফসি গোয়ার মতোই ২৩ পয়েন্ট নিয়ে কেরল ব্লাস্টার্স এখন লিগ টেবলের দ্বিতীয় স্থানে। পয়েন্ট একই হলে পিছিয়ে কেন? তার কারণ, গোয়া যেখানে ন’টি ম্যাচে খেলে ২৩ পয়েন্ট অর্জন করেছে, সেখানে ব্লাস্টার্স ১১ ম্যাচে খেলে একই সংখ্যক পয়েন্ট অর্জন করেছে। গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে জিতে একটি করে ম্যাচে হেরেছে ও ড্র করেছে কেরলের দলটি। গত দুই ম্যাচেই জয় পেয়েছে, তার মধ্যে একটি জয় মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে। সেখানে মোহনবাগান গত দুটি ম্যাচেই হেরেছে। এই দুই হার বাদ দিয়ে বাকি তিনটির মধ্যে দুটিতেই জিতেছে তারা।
চোট-আঘাত দুই দলেরই সমস্যা। কিন্তু মুম্বইয়ে গিয়ে তিন খেলোয়াড় লাল কার্ড দেখার ফলে মোহনবাগানের এই সমস্যা আরও বেড়েছে। গত ম্যাচের পরে কোচ হুয়ান ফেরান্দোর যুক্তি ছিল, গত দশদিনে তারা যেখানে আটজন খেলোয়াড়কে হারিয়েছেন, সেখানে চাইলেও ভাল কিছু করা কঠিন। এফসি গোয়ার কাছে চার গোল খাওয়ার পর এ বার আরও এক কঠিন দলের মুখোমুখি ফেরান্দোবাহিনী। এই সময়ে কলকাতার দলের খেলোয়াড়রা তাঁদের চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সাহসিকতার পরিচয় কতটা দিতে পারবেন, সেটাই দেখার। গত মরসুমে কোচিতে গিয়ে তাদের ৫-২ গোলে হারিয়ে এসেছিল মোহনবাগান। হ্যাটট্রিক করেছিলেন দিমিত্রি পেট্রাটস। সেই দলে ছিলেন প্রীতম কোটাল। ঘরের মাঠেও তারা জেতে কেরলের বিরুদ্ধে। এবার সেই হারের বদলা নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে কেরল ব্লাস্টার্স। বদলার সুযোগ প্রীতম, প্রবীরদের কাছেও। সুযোগ এই প্রথম আইএসএলের কোনও ম্যাচে সবুজ-মেরুন বাহিনীকে হারানোর। একটা জয়ে এতগুলো উদ্দেশ্য পূরণের সুযোগ কেরল ব্লাস্টার্সের সামনে।
দলের পারফরম্যান্স
মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট: পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে দাপুটে জয় দিয়ে শুরু করলেও, দ্বিতীয় ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে ততটা দাপট দেখাতে পারেনি মোহনবাগান এসজি। বুমৌসের গোলে জেতে তারা। চেন্নাইয়ে আত্মবিশ্বাস ও আধিপত্য নিয়ে ৩-১-এ জয় পায় তারা। জামশেদপুরে এক গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষে ৩-২-এ জেতে সবুজ-মেরুন বাহিনী। ২-০-য় হায়দরাবাদ এফসি-কে হারিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে জয়ের নজির তৈরি করে তারা। শেষ এগারো মিনিটে ব্রেন্ডান হ্যামিল ও আশিস রাই গোল করেন। ওড়িশার বিরুদ্ধে কঠিন ম্যাচে সাদিকুর জোড়া গোলে ২-২ ড্র করে তারা। নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে দীপক টাঙরি, জেসন কামিংস ও শুভাশিস বসুর গোলে ৩-১-এ জয়ে ফেরে তারা। কিন্তু সাত ম্যাচে অপরাজিত থাকার পর মুম্বইয়ে গিয়ে প্রথম হার মানতে হয় তাদের ১-২ ব্যবধানে। এর পর এফসি গোয়ার কাছেও ১-৪-এ হার। নয় ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট তাদের। ১৯ গোল দিয়ে খেয়েছে ১৩ গোল। চলতি লিগে সবচেয়ে বেশি গোল করেছে তারাই।
কেরল ব্লাস্টার্স এফসি: গত আটটি ম্যাচের মধ্যে সাতটিতেই অপরাজিত ছিল কেরলের দলটি। প্রথম লেগে এগারোটি ম্যাচ খেলার পর তাদের অর্জিত পয়েন্ট সংখ্যা ২৩। মোট ১৬ গোল দিয়ে দশ গোল খেয়েছে তারা। গত ম্যাচে ব্লাস্টার্স হারিয়েছে মুম্বই সিটি এফসি-কে, যারা কয়েক দিন আগেই থামিয়েছে মোহনবাগানের অপরাজিত থাকার দৌড়। এগারোটি ম্যাচের মধ্যে তারা হারিয়েছে যথাক্রমে বেঙ্গালুরু, জামশেদপুর, ওড়িশা, ইস্টবেঙ্গল, হায়দরাবাদ এফসি, পাঞ্জাব এফসি ও মুম্বই সিটি এফসি (ঘরের মাঠে)-কে। হেরেছে মুম্বই (অ্যাওয়ে), এফসি গোয়ার কাছে এবং ড্র করেছে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড এফসি, চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে। বুধবার ১২ নম্বর ম্যাচটি খেলতে চলেছে ইভান ভুকোমানোভিচের দল।
ফুটবলারদের পারফরম্যান্স
মোহনবাগান এসজি: দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য তারকাকে ছাড়াই সাতটি ম্যাচে অপরাজিত ছিল তারা। কিন্তু আট নম্বর ম্যাচে শুধু যে প্রথম হার মানতে হয়, তা-ই নয় লাল কার্ড দেখে সাসপেনশনের আওতায় পড়ে যান প্রথম দলের তিন নির্ভারযোগ্য খেলোয়াড় আশিস রাই, হেক্টর ইউস্তে ও লিস্টন কোলাসো। এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে তারা খেলতে পারেননি। ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে প্রথম দু’জন ফিরলেও শেষের জন ফিরছেন না। কোলাসোকে চার ম্যাচের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এমনিতেই চোট-আঘাতে জর্জরিত মোহনবাগান শিবির। আশিক কুরুনিয়ান, আনোয়ার আলিদের চোট। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার সহাল আব্দুল সামাদও চোট পেয়ে মাঠের বাইরে রয়েছেন। অনিরুদ্ধ থাপা, মনবীর সিংহ ও দিমিত্রি পেট্রাটস চোট সারিয়ে সদ্য মাঠে ফিরেছেন। জেসন কামিংস গত দুই ম্যাচেই গোল পেয়েছেন। আনোয়ারের অনুপস্থিতিতে দলের রক্ষণ এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়েছিল। গত ম্যাচে রাই ও ইউস্তে না খেলায় আরও দুর্বল হয়ে পড়ে তারা এবং চার গোল খায়। আশা করা যায় বুধবার আশিস, ইউস্তে ফিরে আসায় রক্ষণের শক্তি কিছুটা হলেও বাড়বে।
কেরল ব্লাস্টার্স এফসি: দুই প্রাক্তন মোহনবাগানী প্রীতম কোটাল ও প্রবীর দাস তাদের প্রাক্তন ক্লাবের বিরুদ্ধে কেমন পারফরম্যান্স দেখাবেন, বুধবারের ম্যাচে এটা আকর্ষণীয় বিষয়। দুই ফুটবলারই গত দুবছরে মোহনবাগান ছেড়ে গিয়েছেন। এই মরশুমের আগেই ক্লাব ছাড়েন গত মরশুমের অধিনায়ক প্রীতম ও প্রবীর ক্লাব ছাড়েন তার আগের মরশুমে। চলতি মরশুমে নতুন ক্লাবের হয়ে এখন পর্যন্ত সব ম্যাচের হয়েই খেলেছেন প্রীতম। এর মধ্যে দশটি ম্যাচে শুরু থেকেই খেলেছেন তিনি। ১১টি ম্যাচে ১১টি ট্যাকল করেছেন। তাঁর দলের ডিফেন্ডারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ট্যাকল অবশ্য করেছেন নাওচা সিং (২৫)। প্রবীর চারটি ম্যাচে প্রথম এগারোয় ছিলেন। ব্লাস্টার্সের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস। তিনি চোট সারিয়ে গত ম্যাচে ফিরেছেন। মোট ছ’টি গোল করেছেন তিনি। আদ্রিয়ান লুনা তিনটি গোল করেন ও চারটি গোল করান। কিন্তু চোট পেয়ে তিনি এখন দলের বাইরে। অস্ত্রোপচারও হয়েছে তাঁর। আদৌও তিনি এই মরশুমে আর মাঠে নামতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চিত কোচ। এমনিতেই তাঁর দলের অনেকেরই চোট। জৌসুয়া সোতিরিও, জিকসন সিংহ, ফ্রেডি লালমাওয়া রয়েছেন চোটের তালিকায়। কিন্তু যাঁরা খেলছেন, তাঁরাই দলকে দুর্দান্ত ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপের সময় চোখে ঝাপসা দেখছিলেন, জানালেন শাকিব
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে