কলকাতা: টানা ১১ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের কাছে হার মানতে হয়েছিল আগের ম্যাচে। সেই ম্যাচের তিন দিন পরেই ফের মাঠে নামছে ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal FC)। প্রতিপক্ষ গতবারের লিগশিল্ড চ্যাম্পিয়ন মুম্বই সিটি এফসি (ISL), যারা শুরুতে টানা অপরাজিত থাকলেও ইদানীং দলের একাধিক তারকা চলে যাওয়ার ফলে সমস্যার মধ্যে রয়েছে।

তবু মুম্বই সিটি এফসি এমন একটা দল, যারা যে কোনও ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। অতীতে যার উদাহরণ বহুবার দিয়েছে তারা। ইস্টবেঙ্গলেরও ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই এই ম্যাচে। কিন্তু এই ম্যাচের প্রস্তুতি ঠিকভাবে নিতে না পারায় আত্মবিশ্বাসের কিছুটা ঘাটতি হতে পারে বলে মনে করছেন কোচ। গত ম্যাচে যাঁরা খেলেছেন, তাঁদেরও অনেককে এই ম্যাচে খেলাতে পারবেন না। কারণ, তাঁরা গত ম্যাচের ক্লান্তি এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তাই রোটেশন পদ্ধতি অবলম্বন করে এই ম্যাচের জন্য প্রথম এগারো বাছবেন বলে ঠিক করে রেখেছেন কুয়াদ্রাত।

সোমবার সাংবাদিকদের এই প্রসঙ্গে কোচ বলেন, “তিনদিন আগেই ম্যাচ খেলেছি আমরা। তাই গত ম্যাচের সব খেলোয়াড়কে এই ম্যাচে পাওয়া সম্ভব না। রোটেশন পদ্ধতি অবলম্বন করব আমরা। এমন কয়েকজনকে কাল মাঠে নামতে হবে, যারা এখন পর্যন্ত সে রকম সুযোগ পায়নি। এক মাসে আমাদের আটটা ম্যাচ খেলতে হচ্ছে। খেলোয়াড়দের সুরক্ষিত করা আমার কাজ। আমাদের সামনে এখন দশটা ম্যাচ, যেগুলো সবই কার্যত ফাইনালের মতো। তাই দলের সবাইকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। প্লে অফে পৌঁছতে আমাদের জয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে”।

একেই এই সমস্যা। তার ওপর এই ম্যাচে গোল করার আসল খেলোয়াড়কেই পাবে না ইস্টবেঙ্গল। কার্ড সমস্যার জন্য এই ম্যাচে নেই ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার ক্লেটন সিলভা। ফলে পুরো পরিকল্পনাটাই অন্য ভাবে ছকতে হচ্ছে স্প্যানিশ কোচকে। ক্লেটনের অভাব বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবল খেলে মেটাক তাঁর দলের ছেলেরা, এমনই চান কুয়াদ্রাত। বলেন, “এটা ঠিকই যে এই ম্যাচে ক্লেটনকে পাব না। তবে ওর অভাব পূরণের জন্য আমাদের আরও মাথা খাটিয়ে খেলতে হবে। কোচ হিসেবে আমাকে আমার খেলোয়াড়দের সুরক্ষিত করতেই হবে। কারণ, নক-আউটে খেলতে গেলে আমাদের আরও শক্তিশালী হতে হবে।

মুম্বই সিটি এফসি এই ম্যাচের প্রস্তুতির জন্য আমাদের চেয়ে বেশি সময় পেয়েছে। তবু আমাদের এই ম্যাচ থেকে পুরো পয়েন্ট তোলার লক্ষ্যই থাকবে। তবে সেটা অন্য উপায়ে। আমরা এখন পর্যন্ত অন্যদের চেয়ে কম ম্যাচ খেলেছি। এটা একটা সুবিধা। আবার আমরা গত ম্যাচে হেরে এই ম্যাচে নামছি, এটা একটা নেতিবাচক ব্যাপার। তবে সেই ম্যাচ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। সেরা ছয়ে থাকতে গেলে আমাদের আরও পরিশ্রম করতে হবে এবং তা কাজেও লাগাতে হবে”।

এর আগের ম্যাচগুলির আগে যতটা আত্মবিশ্বাসী লেগেছিল তাঁকে, এই ম্যাচের আগে তার কথায়, অভিব্যক্তিতে অতটা আত্মবিশ্বাসের ছাপ নেই যেন। স্বীকারও করলেন সে কথা। বলেন, “এখন আর ততটা আত্মবিশ্বাসী নই। আমাদের রক্ষণে বদল আনতে হবে। তিন গোল খাওয়াটা মোটেই ঠিক নয়। ডিসেম্বরে আমাদের রক্ষণ যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে আমরা ডিফেন্স করেছি। এর পরে আমাদের চুঙনুঙ্গা জাতীয় শিবিরে চলে যায়। ওখানে অন্যরকম প্রশিক্ষণ, অন্য সিস্টেমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয় ওকে। ফিরে আসার পরে ওকে অন্য রকম লাগছে। তাই ওকে আবার আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তবে সমস্যাটা একজনকে নিয়ে নয়। পুরো দলকে নিয়েই। অনেক কিছুরই সংস্কার দরকার, যার জন্য সময় চাই”।

একাধিক তারকা খেলোয়াড় জানুয়ারির দলবদলে মুম্বই সিটি এফসি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তবে তাঁদের অনুপস্থিতি তাঁর দলকে সুবিধা দেবে, এটা মানতে নারাজ লাল-হলুদ কোচ। বলেন, “ওদের তারকারা নেই বলে আমরা সুবিধা পাব, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। বরং আমাদের যে মাত্র তিনদিনের মধ্যে আরও একটা ম্যাচ খেলতে নামতে হচ্ছে, এর সুবিধা ওরা পেতে পারে”।

চোট পাওয়ার ফলে আপাতত মাঠের বাইরে চলে যাওয়া সল ক্রেসপোর অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে কুয়াদ্রাত বলেন, “ক্রেসপো এই ম্যাচে তো নেই, পরের ম্যাচেও ওকে পাওয়া কঠিন। ওর চোট সেরে উঠতে সময় লাগবে। পুরোপুরি চোট না সারিয়ে ওকে মাঠে নামানোর প্রশ্নই নেই। আগেই বললাম, দলের খেলোয়াড়দের আমাকেই রক্ষা করতে হবে”।

এ দিন দলের নতুন বিদেশী স্ট্রাইকার জার্মানির ফেলিসিও ব্রাউনকে নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে হাজির হন কোচ। গত ম্যাচের দু’দিন আগেই ভারতে এসে পৌঁছনোর পর গত ম্যাচে পরিবর্ত হিসেবে নেমে গোল করে সমর্থকদের মনে আশা জাগিয়েছেন। অনেকেরই আশা ক্লেটনের অভাব তিনিই পূরণ করবেন মঙ্গলবার।

এর আগে চিনের ক্লাব ফুটবলে খেলতেন তিনি। সদ্য ভারতে এসে মানিয়ে নেওয়ার জন্য একটু সময় চেয়ে নিলেন তিনি। বলেন, “সবে ভারতে এসেছি এখনও সময়ের ব্যবধানের সঙ্গে পুরোপুরি মানিয়ে উঠতে পারিনি। এখানকার আবহাওয়াও অন্য রকম। মাত্র দু-তিন দিনে মানিয়ে নেওয়া কঠিন। তবু চেষ্টা করব। চিনে মানিয়ে নেওয়া একটু কঠিন ছিল। ভারতে সোজা। সবাই ইংলিশ বলতে পারে। ফলে এখানে সবার সঙ্গে কথা বলতে অসুবিধা হচ্ছে না। দলের দেশীয় সতীর্থদের সঙ্গেও কথা বলছি। অসুবিধা হচ্ছে না”।

কলকাতায় এসে মুগ্ধ ব্রাউন বলেন, “এখানে এসে সমর্থকদের উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছি। সে জন্য আমি খুশি। এসে ভাল লাগছে। দেখছি প্রচুর সমর্থক এই ক্লাবের। ওদের সামনে গোল করতে পেরে আমি খুশি। বেশিদিন এখানে আসিনি। তাই সব কিছু জানি না। তবে আশা করি, কোচ, সতীর্থরা ভালই হবে। ওদের সাহায্যে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। প্লে অফে ওঠার জন্য দলকে একটা ভাল জায়গায় পৌঁছে দিতে চাই। আমার যা অভিজ্ঞতা রয়েছে তা এখানে সবার সঙ্গে ভাগ করে নেব। যাতে দলের ভাল হয়”।


(তথ্যসূত্র: আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: Sourav Ganguly: বাড়িতে না জানিয়ে ডোনার সঙ্গে রেজিস্ট্রি সেরেই শ্রীলঙ্কায় সৌরভ, বিয়ের খবর ফাঁস হয় কীভাবে?


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।