কলকাতা: সময়টা নভেম্বরের মাঝামাঝি। বাতাসে শীতের হাল্কা আমেজ। বাংলার ফুটবলপ্রেমীরা অবশ্য উত্তাপ অনুভব করছেন। কারণ, ইন্ডিয়ান সুপার লিগ শুরু হতে চলেছে। হোক না খেলা গোয়ায়, তবু কলকাতার দুটো বড় দলের খেলা টিভিতে বা মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপে দেখা যাবে। প্রিয় দলের হয়ে গলা ফাটানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া তো আছেই।
সাধারণ সমর্থকদের মতোই প্রাক্তন ফুটবলাররাও উত্তেজিত। ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার সূর্যবিকাশ চক্রবর্তীই যেমন। ফোন করতেই তাঁর গলায় উত্তেজনার আঁচ পাওয়া গেল। বললেন, ‘ইস্টবেঙ্গল যখন যেখানেই খেলুক না কেন, আমি সবসময় জয়ই চাই। ইস্টবেঙ্গল হারতে পারে, এটা কোনওদিন ভাবি না। ফলে এবারের আইএসএল-এও আমি দল নিয়ে আশাবাদী। প্রতিটি ম্যাচে দলের জয় চেয়েই টিভির সামনে বসব।’
এবার এসসি ইস্টবেঙ্গলের নতুন কোচ। বিদেশি ফুটবলাররা সবাই নতুন। দল নিয়ে কতটা আশাবাদী? সূর্যবিকাশ বললেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, গতবারের চেয়ে এবার দল ভাল হয়েছে। ফলে গতবারের চেয়ে ভাল পারফরম্যান্স হবে, এটাই আশা করি। আমাদের এখানে তো অতীতের পারফরম্যান্স দেখে টিম করা হয়। তার ভিত্তিতে বলতে পারি, দলটা গতবারের তুলনায় ভাল। তবে নতুন বিদেশিরা কেমন, সেটা জানি না। কোচও ভারতীয় ফুটবলে নতুন। তিনি কীভাবে বিদেশিদের ব্যবহার করেন, সেটা আসল। গতবার যিনি কোচ ছিলেন, তিনি ফুটবলারদের ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারেননি। তার ফলে দল ঠিকমতো খেলতে পারেনি। এবার আশা করি সেটা হবে না। এবার গোলকিপার খুব ভাল, সব পজিশনে দু’জন করে বিদেশি ফুটবলার আছে। ফলে আমি আশাবাদী।’
এবার লাল-হলুদ স্কোয়াডে ভারসাম্য কেমন মনে হচ্ছে? সূর্যবিকাশ জানালেন, ‘বিদেশি স্ট্রাইকারদের মধ্যে চিমাকে ভাল মনে হচ্ছে। ভারতীয় ছেলেগুলোও বেশ ভাল। সবাই অনেক বছর ধরে খেলে আসছে। ফলে ভাল কিছু আশা করাই যায়। প্রথম ম্যাচ খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ম্যাচে দল যদি ভাল খেলতে পারে, তাহলে পরের ম্যাচগুলোয় সমস্যা হবে না।’
দল নিয়ে আশাবাদী হলেও, কিছুটা আশঙ্কাও রয়েছে সূর্যবিকাশের মনে। এই প্রাক্তন ফুটবলার নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বললেন, ‘আমাদের সময় সারা বছর খেলা ছিল। কলকাতা লিগ দিয়ে মরসুম শুরু হত। তারপর আইএফএ শিল্ড, ডুরান্ড কাপ খেলে আমরা আই লিগ শুরু করতাম। ফলে প্রতিযোগিতার একেকটা ধাপ ছিল। কলকাতা লিগে বেশিরভাগই স্থানীয় ছেলে, বিদেশিরাও মোটামুটি সমমানের। শিল্ডে প্রতিযোগিতা একটু বেশি ছিল। ডুরান্ডে ভিনরাজ্যের দলগুলোর সঙ্গে খেলা হত। তারপর আই লিগ। ফলে তৈরি হওয়ার জন্য আমরা অনেক বেশি সময় পেতাম। এখন কিন্তু আর সেটা নেই। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান আইএসএল-এ চলে যাওয়ায় এখন কলকাতা লিগ নিয়ে আর কারও উৎসাহ নেই। আই লিগকেও কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। কবে, কোথায় খেলা, কেউ খবরই রাখে না। অথচ আই লিগের পরের ধাপটাই আইএসএল। একটা টুর্নামেন্টের জন্য বাকি সবকিছুর গুরুত্ব কমে যাওয়া ঠিক না। এতে ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি হবে না। ছেলেদের আরও বেশি খেলার মধ্যে রাখতে হবে। মহম্মদ রফিকের মতো ছেলেগুলোর বয়স বেড়ে যাচ্ছে। ওরা যদি বছরে অল্প কয়েকটা ম্যাচ খেলে, তাহলে নিজেদের পারফরম্যান্স, ফিটনেস ধরে রাখা কঠিন।’
রবিবার জামশেদপুর ম্যাচ দিয়ে এবারের আইএসএল অভিযান শুরু করছে এসসি ইস্টবেঙ্গল। তারপর ২৭ তারিখ দ্বিতীয় ম্যাচেই সামনে এটিকে মোহনবাগান। গতবার দুটো ডার্বিই হারতে হয়েছিল। এবার কি আশাবাদী হতে পারেন লাল-হলুদ সমর্থকরা? সূর্যবিকাশ বলছেন, ‘প্রথম ম্যাচের উপর অনেককিছু নির্ভর করছে। শুরুটা যদি ভাল হয়, তাহলে ডার্বি জয়ের আশা করাই যায়। তবে এটিকে মোহনবাগান দলটা খুব ভাল। ওরা গত কয়েক বছর ধরে একসঙ্গে খেলছে। কোচও ভারতীয় ফুটবলের সঙ্গে পরিচিত। তা সত্ত্বেও আমি জয়ের আশাতেই থাকব।’