কলকাতা: প্রথম লেগের মতো ফিরতি সাক্ষাতেও ইস্টবেঙ্গল এফসিকে ২-০ গোলে হারাল হায়দরাবাদ এফসি (EB vs HFC)। শুক্রবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে এই নিয়ে চলতি লিগে টানা ১১টি জয় পেল হায়দরাবাদ। তবে ১৫ নম্বর রাউন্ডের পরেও শীর্ষে থাকা মুম্বই সিটি এফসি-র সঙ্গে চার পয়েন্টের ব্যবধান রয়ে গেল তাদের। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শীর্ষস্থানীয় দুই দল মুখোমুখি হতে চলেছে মুম্বইয়ে। সেই ম্যাচে মুম্বইকে হারাতে না পারলে লিগশিল্ড জয়ের আশা অনেকটাই ম্লান হয়ে যাবে হায়দরাবপাদের। এদিন যুবভারতীর গ্যালারিতে বসে সেই ম্যাচের হোমওয়ার্কও সেরে নিলেন মুম্বইয়ের কোচ ডেস বাকিংহাম।


শুক্রবার ৯ মিনিটে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন হায়দরাবাদের স্প্যানিশ ফরওয়ার্ড হাভিয়ে সিভেরিও। সারা ম্যাচে তাদের ব্যবধান বাড়ানোর লাগাতার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ম্যাচের একেবারে শেষে ইনজুরি টাইমে পরিবর্ত ফরওয়ার্ড অ্যারেন ডি'সিলভার গোলে জয় সুনিশ্চিত করে হায়দরাবাদ।


এই হারের ফলে ন’নম্বরেই রয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল এফসি। হারলেও তারা এ দিন কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় গতবারের চ্যাম্পিয়নদের। ক্লেটন সিলভা দুটো সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া না করলে ছবিটাই অন্যরকম হতো। সারা ম্যাচে অনেক গোলের সুযোগ তৈরি করে লাল-হলুদ বাহিনী। কিন্তু বারবার গোলের মুখে গিয়ে আটকে যান তাঁরা। তবে কমলজিৎ সিংহ এদিন তাদের গোলে না থাকলে হায়দরাবাদ আরও বড় ব্যবধানে জিততে পারত। পাঁচটি অবধারিত গোল বাঁচিয়ে দলকে আরও বড় লজ্জার হাত থেকে বাঁচান তিনি। এই হারের ফলে তাদের নক আউট পর্বে ওঠার সম্ভাবনা কার্যত শেষ হয়ে গেল।


এ দিন দলে তিনটি পরিবর্তন করে প্রথম এগারো নামায় ইস্টবেঙ্গল এফসি। গোলকিপার কমলজিৎ সিংহ চোট সারিয়ে ফেরেন, মহম্মদ রকিপ আসেন চোট পাওয়া অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়ের জায়গায় এবং জর্ডন ও’ডোহার্টি আসেন ইভান গঞ্জালেসের জায়গায়। প্রত্যাশা মতোই চার ব্যাকে খেলা শুরু করে তারা। অন্য দিকে, ৪-২-৩-১-এ প্রথম এগারো সাজিয়ে শুরু থেকেই আক্রমণে ওঠে হায়দরাবাদ এফসি।


গত ম্যাচে চেন্নাইন এফসি তাদের আটকে দেওয়ায় এই ম্যাচে শুরু থেকেই গোল পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। শুরুতে ইস্টবেঙ্গলকেও নিজেদের অর্ধেই খেলতে দেখা যায়। নিজেদের গোলের সামনে কড়া পাহাড়া রাখা সত্ত্বেও নবম মিনিটেই গোল খেয়ে যায় তারা। বাঁ দিকের উইং থেকে আকাশ মিশ্রর পা থেকে উড়ে আসা বলে মাথা ছুঁয়ে জালে বল জড়িয়ে দেন হাভিয়ে সিভেরিও (১-০)। গোল করার সময় তাঁকে ঘিরে ছিলেন তিন লাল-হলুদ ডিফেন্ডার চুঙনুঙ্গা, সার্থক গলুই ও চ্যারিস কিরিয়াকু। তা সত্ত্বেও গোল করতে কোনও অসুবিধা হয়নি তাঁর।


এই গোলের পরে সাত মিনিটের মধ্যে আরও দু’টি গোলের অনবদ্য সুযোগ পায় হয়দরাবাদ, প্রথমবার রোহিত দানু এবং পরে সিভেরিও। কিন্তু দু’বারই দলকে বাঁচান ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার কমলজিৎ। বিপক্ষের পরপর আক্রমণ সামলে ইস্টবেঙ্গল কুড়ি মিনিটের পর থেকে নড়েচড়ে বসে এবং পাল্টা আক্রমণে উঠতে থাকে। ২৭ মিনিটের মাথায় ডানদিকে চুঙনুঙ্গার থ্রো থেকে বল হায়দরাবাদের বক্সে গিয়ে পড়লে তা হেড করে গোলের দিকে ঠেলেন ভিপি সুহের। কিন্তু তা বারে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে ক্লেটন গোলের বাইরে শট মারেন।


এই সময়েই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে ও ঘন ঘন আক্রমণে উঠে বিপক্ষকে চাপে রাখার প্রবণতা দেখা যায় লাল-হলুদ খেলোয়াড়দের মধ্যে। কিন্তু ফিনিশিংয়ের অভাবে কোনও আক্রমণই সাফল্য পায়নি। দুই উইং থেকে ক্রস বা পাস বাড়ালেও তাকে গোলে পরিণত করার মতো কাউকে দেখা যায়নি। ১৪ ম্যাচে যারা দশটিও গোল খায়নি, সেই হায়দরাবাদের দুর্ভেদ্য ডিফেন্সকে ফাঁকি দিয়ে তাদের জালে বল জড়ানো মোটেই সোজা ছিল না।


৩৮ মিনিটের মাথায় কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে রোহিত দানু ফের ইস্টবেঙ্গল বক্সে ঢুকে কোনাকুণি শট মারেন গোল লক্ষ্য করে। কিন্তু ফের বাধা হয়ে দাঁড়ান কমলজিৎ। তিনি না থাকলে প্রথমার্ধে হয়তো তিন গোলে এগিয়ে যেত হায়দরাবাদ এফসি। ৪৩ মিনিটের মাথায় বোরা হেরেরার মাপা কর্নারে ঠিকমতো মাথা ছোঁয়ালে অবধারিত গোল পেতেন সিভেরিও। কিন্তু তিনি তা পারেননি। ইস্টবেঙ্গল পাল্টা আক্রমণে ওঠার পর থেকে তারাও কিছুটা গতিহীন হয়ে পড়ে। এর মধ্যে লাল-হলুদ রক্ষণও নিজেদের কিছুটা গুছিয়ে নেয়। প্রথমার্ধে হায়দরাবাদ তিনটি গোলমুখী শট নিলেও ইস্টবেঙ্গল একটিও শট গোলে রাখতে পারেনি। ইস্টবেঙ্গল একটিও কর্নার আদায় করতে পারেনি, যেখানে হায়দরাবাদ পায় তিনটি কর্নার।


দ্বিতীয়ার্ধে রকিপের জায়গায় লেফট উইং ব্যাক জেরি লালরিনজুয়ালাকে নামায় ইস্টবেঙ্গল। শুরু থেকেই তারা বিপক্ষকে চাপে রাখার চেষ্টা শুরু করে। ৪৯ মিনিটের মাথায় সমতা আনার সুবর্ণ সুযোগও পেয়ে যান ক্লেটন সিলভা। কিন্তু গোলের সামনে থেকে অপ্রত্যাশিত ভাবে লক্ষ্যভ্রষ্ট হন তিনি।


ক্লেটন এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করার পর থেকেই খেলার নিয়ন্ত্রণ ক্রমশ নিয়ে নেয় হায়দরাবাদ এবং ফের আক্রমণ শুরু করে তারা। তবে কমলজিতের অনবদ্য গোলকিপিং এবং ইস্টবেঙ্গলের গোছানো রক্ষণ তাদের ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টায় সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বক্সের মধ্যে থেকে গোল না পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে গোলে শট নেওয়ার চেষ্টা শুরু করে তারা। ৬৩ মিনিটের মাথায় মহম্মদ ইয়াসিরের দূরপাল্লার শট আটকে দেন কমলজিৎ। এর দু’মিনিট পর বক্সের মাথা থেকে ওগবেচের বাইসাইকেল কিক গোলের বাইরে চলে যায়।


তবে ৬৭ মিনিটের মাথায় ক্লেটন সিলভা ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে যে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন, তা নিয়ে তাঁকে বহুদিন আফসোস করতে হবে। সামনে থাকা গোলকিপার গুরমিত সিংয়ের ডানদিক দিয়ে বল গোলে পাঠানোর চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু গুরমিত পা বাড়িয়ে দেওয়ায় পায়ে বল লেগে তা বাইলাইনের বাইরে চলে যায়। এই ঘটনার ঠিক আগেই অ্যালেক্স লিমা চোট পেয়ে বেরিয়ে যান এবং ইভান গঞ্জালেস নামেন ডাগ আউট থেকে। অন্যদিকে সিভেরিওর জায়গায় নামেন জোয়েল চিয়ানিজ। রোহিত দানুকেও তুলে হায়দরাবাদের কোচ মানোলো মার্কেজ নামান রাভিকে। একই সঙ্গে মোবাশির রহমানের জায়গায় নামেন সুমিত পাসি।


তবে স্বাভাবিক ভাবেই বারবার তার পক্ষে বিপক্ষকে আটকে রাখা সম্ভব নয়। বাড়তি সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে বাঁ দিক দিয়ে ওঠা পরিবর্ত ফরোয়ার্ড অ্যারেন ডিসিলভা বক্সে ঢুকে ওগবেচেরে ব্যাকহিল থেকে বল পেয়ে কোনাকুণি শটে গোল করে দলের হয়ে ব্যবধান বাড়িয়ে নেন (২-০)। তখন আর কিছুই করার সুযোগ ছিল না ইস্টবেঙ্গলের।


আরও পড়ুন: ABP Exclusive: সিনেমার মতো! বিয়ের পর শুরু খেলা, রাগবিতে জাতীয় টুর্নামেন্টে নামছেন প্রিয়ঙ্কা