সন্দীপ সরকার, কলকাতা: তিনি রাগবি (Rugby) দলের উইঙ্গার। ঘোড়া চালান। সাঁতার জানেন। গাড়ি চালাতে পারেন। ব্যবসা সামলান। ঘরকন্নায় পটু। আবার পরিচিত মডেলও।


বাঙালি গৃহবধূ প্রিয়ঙ্কা চৌধুরীর (Priyanka Chowdhury) আরেক পরিচয়, তিনি রাগবি খেলেন। ভুবনেশ্বরে যাচ্ছেন জাতীয় ডিভিশন ওয়ান টুর্নামেন্টে খেলতে।


প্রিয়ঙ্কার কেরিয়ার গ্রাফের মতো, তাঁর জীবনের উত্থান-পতনের কাহিনিও সিনেমার চিত্রনাট্যের মতো। মাত্র ১৮ বছর বয়সে বিয়ে। প্রিয়ঙ্কা তখন দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। এবিপি লাইভকে বলছিলেন, 'ঠাকুমার বয়স হয়ে গিয়েছিল। তিনি চেয়েছিলেন, বড় নাতনির বিয়ে দেখে যেতে। তাই এত কম বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। আর তারপর ঠাকুমা প্রয়াত হন।'


তবে বিয়ের পর দ্বিতীয় ইনিংসে যেন আরও ঝকঝকে প্রিয়ঙ্কা। উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন। স্নাতক স্তরের পড়া শেষ করেন। ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করেন। বলছিলেন, 'সালকিয়ায় বাপের বাড়ি। বাবা সরকারি চাকরি করতেন। বাড়ির এক মেয়ে। আর্থিক প্রতিকূলতা ছিল না। স্কুল জীবনে স্প্রিন্টিং করতাম। বিয়ে হয়েছিল ২০০৪ সালে। ২০০৮ সালে মেয়ে হয়। সল্ট লেকে শ্বশুরবাড়ি। মেয়ে হওয়ার পর ১০০ কেজি ওজন হয়ে গিয়েছিল। মাত্র ৭ মাসে ৪০ কেজি ওজন কমিয়ে মডেলিং শুরু করেছিলাম। তারপর মিসেস কলকাতা হয়েছিলাম। বিজ্ঞাপনও করেছি অনেক।'


মেয়ে যশপ্রিয়ার বয়স ১৪। সেও মায়ের মতো রাগবি খেলে। আপনার রাগবি খেলা শুরু কীভাবে? 'ক্যালকাটা ক্রিকেট অ্যান্ড ফুটবল ক্লাবে প্রথম রাগবি খেলা দেখি। তখন খেলাটার নামও জানতাম না। দেখে মনে হল, শুধু ছেলেরা কেন খেলবে? মেয়েরা কেন পারবে না? তখন খেলাটা নিয়ে কিছু জানতামও না। ক্লাবের এক সদস্যকে জানালাম। তারপর থেকে শুরু। সিসিএফসি-র মহিলা দলের সঙ্গে খেলছি গত ৮ বছর,' বলছিলেন প্রিয়ঙ্কা। ছোটবেলায় গাছে চড়েছেন। দস্যি মেয়ের রাগবি খেলার স্বপ্নপূরণ হয় ক্লাব দলেই। 


প্রিয়ঙ্কা বলছেন, 'গত ৮ বছর ধরে রাগবি খেলছি। খেলার পাশাপাশি খেলোয়াড় তুলে আনাতেও জোর দিই। সিঙ্গুর, হাওড়ার বিভিন্ন আদিবাসী মেয়েকে স্কাউটিং করে তুলে এনেছি।' 


প্রিয়ঙ্কার বয়স ছত্রিশ। ইচ্ছেশক্তিই সেরা সম্পদ। অনেক চোট-আঘাত লেগেছে। তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। প্রিয়ঙ্কার কথায়, '৬ বছর আগে পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছিল। প্রায় ৮ মাস মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছিল। তবে ফিরে আসি আরও শক্তিশালী হয়ে। পরে একবার কনুইয়ে গ্রেড টু ডিসলোকেশন হয়। আসলে রাগবি বডি কনট্যাক্ট গেম। চোট লাগা স্বাভাবিক।' যোগ করলেন, 'বাংলায় রাগবি ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মহিলারাও ভাল খেলছে। প্রতিশ্রুতিমানদের পাশে থাকি। ভীষণভাবে চাই রাগবি নিয়ে প্রচার হোক। এরকম রোমাঞ্চকর খেলায় মেয়েরাও খেলছে, সেটা নিয়ে চর্চা হওয়া উচিত।'


বাংলায় ক্লাব পর্যায়ে রাগবির জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে। সিসিএফসি ছাড়াও জাঙ্গল ক্রোজ়, আদিবাসী - এরকম তিন-চারটি ক্লাব দল রয়েছে বাংলায়। সিসিএফসি-তে প্রত্যেক বছর ক্যালকাটা কাপ হয়। প্রিয়ঙ্কা বলছেন, 'রাগবি বছরে ছ'মাসের খেলা। এপ্রিলের শেষভাগে খেলা শুরু হয়। সিসিএফসি-র মহিলা দল জাতীয় স্তরে চার নম্বরে রয়েছে। ভারতে কলকাতার সিসিএফসি ক্লাবেই প্রথম রাগবি খেলা শুরু হয়। মহিলাদের দল ৯ বছর হল তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই ছাপ ফেলতে পেরেছি। আশা করছি জাতীয় ডিভিশন ওয়ান টুর্নামেন্টেও ভাল ফল করে ফিরব।'


আরও পড়ুন: Exclusive: "একটা ম্যাচে ১০ উইকেট লোকে ভুলে যাবে, রঞ্জি জিতলে সকলে আজীবন মনে রাখবে"