গৌতম ভট্টাচার্য
প্রশ্ন: আপনাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের কমেন্ট্রি বক্সে দেখা যাচ্ছে না কেন?
কপিল: সারা বছর শুধু কমেন্ট্রি করলে চলবে? অফিস আছে, কাজকর্ম আছে। ব্রেক দরকার তো!
প্র: বিরাটের ডাবল সেঞ্চুরি দেখলেন?
কপিল: পুরো ইনিংস দেখিনি। বেশ কিছুটা দেখেছি।
প্র: কী বলবেন?
কপিল: কারও কিছু বলার নেই। সিমপ্লি অ্যামেজিং।
প্র: এই অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতাকে কী বলবেন?
কপিল: ফর্মের তুঙ্গে রয়েছে। ভাবাই যায়নি সচিনের পর এ রকম কাউকে আমরা দেখব যে ক্রমাগত রান করে চলেছে। করেই চলেছে।
প্র: কোহালির যা পারফরম্যান্স, এ বার তো গ্রেট বলাই যায় নাকি?
কপিল: না আমার এত তাড়াতাড়ি বলায় আপত্তি আছে। গ্রেট শব্দটা বসানোর জন্য একটা নির্দিষ্ট টাইমলাইন দরকার। সেটা কোহালি এখনও পেরোয়নি।
প্র: সেটা কত দিনের?
কপিল: দশ থেকে পনেরো বছর।
প্র: কোহালির টেস্ট ক্রিকেটে হয়েছে মাত্র পাঁচ বছর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আট বছর। আর কত দিন পর্যন্ত আপনি অপেক্ষা করতে চান?
কপিল: আরও তিন-চার বছর অপেক্ষা করতে চাই। আমার দুর্ধর্ষ লাগে বিরাটের ব্যাটিং। এই জমানায় এ রকম কেউ আসবে, আগে ভাবাই যায়নি। তবু আমি ওয়েট করতে চাই কারণ অনেক প্রতিভা আমি দেখেছি সাত বছর-আট বছর দারুণ খেলে ফুরিয়ে গেছে। আমি তাই আরও কনভিন্সড হতে চাই।
প্র: কিন্তু কোহালির এই যে ফিটনেসের লেভেল, সেটা কি ভারতীয় ক্রিকেটে অভূতপূর্ব নয়? এটা তো সম্পূর্ণ নতুন ঘরানা যা আগে কারও ছিল না।
কপিল: আগে তো ফিটনেস কালচারটাই ছিল না। এই সব ফিজিও, ট্রেনার আগেকার দিনে ছিল কোথায়? এইট্টিজে আমাদের ম্যানেজার হয়ে যেতেন মান সিংহ। উনি ছিলেন টিমের অতিরিক্ত সদস্য যাঁর একমাত্র কাজ ছিল প্লেয়ারদের অ্যালাওয়েন্স বিলি করা।
প্র: বড় ক্যাপ্টেন বা বোলারদের বিশেষত্ব হল তাঁরা কমেন্ট্রি করতে করতেও নিরন্তর ভাবতে থাকেন, অমুক স্টার ব্যাটসম্যানের জন্য কী ভাবে ফিল্ড সাজাতাম? কোন লাইনে বল করতাম? আপনি বিশ্বজয়ী ক্যাপ্টেন এবং সেরা বোলার দুটোই। কী ভাবে ভেবেছেন কোহালিকে বল করতেন?
কপিল: ওরে বাবা। কোহালি, সহবাগ এদের আমি বল করতেই পারতাম না।
প্র: কপিল বিনয় করবেন না। প্লিজ বলুন কোহালিকে কোন লাইনে বল করতেন? কোথায় ওঁকে সামান্য দুর্বল মনে হয়েছে?
কপিল: বিরাটের ক্রিকেটে এমনিতে কোনও দুর্বলতা খুঁজেই পাওয়া যায় না। শুধু লাস্ট ইংল্যান্ড ট্যুরটায় ওকে আমার নির্ভরযোগ্য মনে হয়নি।
প্র: সে বারের সফরে অফ স্টাম্পের বাইরে বারবার আউট হচ্ছিলেন কোহালি।
কপিল: ইয়েস। আমি দেখতে চাই আগামী বছরের ইংল্যান্ড ট্যুরে সেই ডিফেক্টটা সারিয়ে ফেলে বিরাট দারুণ রান করছে। না পারার কোনও কারণ নেই।
প্র: জো রুট, স্টিভ স্মিথ আর বিরাট কোহালির মধ্যে কে এই মুহূর্তে বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান বলুন?
কপিল: মনে হচ্ছে কোহালি। আমরা হয়তো ওর ব্যাটিংটা তিন জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখছি। কিন্তু এই পরিমাণ কনসিস্টেন্সিতে ওকে বাছা ছাড়া উপায় নেই।
তবে আপনাকে বা মিডিয়ার বন্ধুদের বলছি, ছেলেটাকে একটু ফাঁকায় খেলতে দিন। এখনই বড় বড় তুলনা বা বিশেষণে যাবেন না। কয়েকটা বছর ওয়েট করে যান। আমার মনে হয় দশ বছর না হলে যে কোনও আমলকে ঘিরে ফাইনাল অ্যাসেসমেন্ট করার সময় আসে না।
প্র: তা হলে সচিনের সঙ্গে কোহালির অহরহ তুলনা আপনার অন্যায় মনে হয়?
কপিল: অফকোর্স অন্যায়। আমার তো মনে হয় সচিনের জন্য খুবই অন্যায়। বিরাট নিশ্চয়ই ঝলক দেখিয়েছে, এমন সব দক্ষতা দেখিয়েছে যে, আমাদের সচিন মনে পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু টাইমস্প্যানটা ভাবতে হবে। একটা মানুষ দু’দশকেরও বেশি বিশ্বের সব ধরনের বোলিংয়ের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক রান করেছে। তার পাশে থাকতে গেলে একটা নির্দিষ্ট সময় জুড়ে ধারাবাহিক পারফর্ম করতে হবে। সেই সময়টা বিরাটকে দিতে হবে। দিতে হবে তুলনামুলক বিশ্লেষণকেও।