কলকাতা: গুড লেংথ স্পটে পড়ে অতর্কিতেই লাফিয়ে উঠছিল বলটি। বাড়তি বাউন্সের ছোবল সামলাতে পারেননি পাকিস্তানের ব্যাটসম্যান আজহার আলি। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো জো রুটের তালুবন্দি হতেই তাঁর মুখে স্বস্তি। মঙ্গলবার সাউদাম্পটনে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে নতুন মাইলফলক গড়ে ফেললেন তিনি, জেমস অ্যান্ডারসন।



বিশ্বের প্রথম পেসার হিসাবে টেস্টে ৬০০ উইকেটের ক্লাবে পৌঁছে গিয়েছেন ব্রিটিশ তারকা। সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীদের তালিকায় তাঁর আগে থাকা তিনটি নাম? অনিল কুম্বলে, শেন ওয়ার্ন, মুথাইয়া মুরলীধরন। তিনজনই স্পিনার! পেসার অ্যান্ডারসনের কৃতিত্ব তাই ক্রিকেটবিশ্বে মুগ্ধতা তৈরি করেছে।



অ্যান্ডারসনের বোলিংয়ের আঁচ অবশ্য ১৪ বছর আগেই টের পেয়েছিলেন ইরফান পাঠান। ২০০৬ সালে। ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে। মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। সেটাই ছিল ভারতের বিরুদ্ধে ডানহাতি ব্রিটিশ পেসারের প্রথম টেস্ট। সেই ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন অ্যান্ডারসন। ২১২ রানে ম্যাচটি জিতেছিল অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের ইংল্যান্ড। ভারতের মাটিতে ৩ টেস্টের সিরিজ ১-১ করে ফিরেছিল ব্রিটিশবাহিনী।



আর ওয়াংখেড়েতে অ্যান্ডারসনের প্রথম দুই শিকার? ‘সচিন তেন্ডুলকর আর রাহুল দ্রাবিড়,’ মোবাইল ফোনে বলছিলেন ইরফান। যোগ করলেন, ‘প্রথম ইনিংসে মোট ৪ উইকেট নিয়েছিল জিমি। তবে সচিন-রাহুলকে ফিরিয়ে আমাদের জোর ধাক্কা দিয়েছিল। ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট নিশ্চয়ই ওর কাছে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসে আমাকেও ফিরিয়ে দিয়েছিল জিমি। আমি ইনিংস ওপেন করতে নেমেছিলাম। ওর অফস্টাম্পের বাইরের বল আমার ব্যাটের কানা লেগে স্টাম্পস ভেঙে দেয়। বল হাতে জিমির দাপট আমাদের হাত থেকে ম্যাচের রাশ কেড়ে নিয়েছিল।’



ব্রিটিশ পেসারের কৃতিত্বকে কুর্নিশ করছে গোটা বিশ্ব। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে টেস্ট খেলে চলেছেন অ্যান্ডারসন। তাঁর কীর্তি দেখে উচ্ছ্বসিত ইরফানও। অ্যান্ডারসনের মতো ইরফানেরও টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ২০০৩ সালে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অভিষেক সিরিজে ইরফানের স্যুইংয়ের ভেল্কি বিশেষজ্ঞদের দরাজ সার্টিফিকেট পেয়েছিল। ভারতের হয়ে ২৯ টেস্টে ১০০ উইকেট রয়েছে বাঁহাতি পেসার ইরফানের। ব্যাট হাতে টেস্টে সেঞ্চুরিও রয়েছে। জাতীয় দলের প্রাক্তন অলরাউন্ডার বলছেন, ‘ওয়াংখেড়ের সেই ম্যাচেই দেখেছিলাম, জিমি দুদিকে বল স্যুইং করাচ্ছে। এবং নিয়ন্ত্রিত স্যুইং। ইংল্যান্ডকে প্রচুর ম্যাচ জিতিয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধেও দারুণ ট্র্যাক রেকর্ড।’



পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাবে, ভারতের বিরুদ্ধে ২৭ টেস্টে ১১০ উইকেট রয়েছে অ্যান্ডারসনের। গড় ২৫.৯৮। অর্থাৎ, উইকেট পিছু খরচ করেছেন ২৫.৯৮ রান। যা তাঁর টেস্ট কেরিয়ারের গড় ২৬.৭৯-এর চেয়ে আরও ভাল। সচিনকে টেস্টে মোট ৯বার আউট করেছেন অ্যান্ডারসন। একসময় বিরাট কোহলিকেও নিয়ম করে বিপাকে ফেলেছেন। কোহলি টেস্টে মোট ৫বার তাঁর শিকার হয়েছেন। এছাড়া চেতেশ্বর পূজারা, মুরলী বিজয়দের ৭বার করে, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি-গৌতম গম্ভীরদের ৬বার করে, রাহুল দ্রাবিড়, বীরেন্দ্র সহবাগ, শিখর ধবনকে ৫বার করে ফিরিয়েছেন অ্যান্ডারসন।

কেন এত ভয়ানক অ্যান্ডারসনের স্যুইং? ইরফান বলছেন, ‘ওর অ্যাকশনের জন্য আগাম বোঝা যায় না কোন বলটা বাইরে যাবে, আর কোনটা ভিতরে ঢুকবে। একই অ্যাকশনে দুরকম স্যুইং করাতে পারে। ৩৮ বছর বয়সেও যেরকম ছন্দে রয়েছে, টেস্টে আরও অনেক উইকেট নেবে জিমি।’