কলকাতা: ভারত (Team India) মানেই স্পিনারদের দেশ। একটা সময় মনে করা হতো, ক্রিকেট মাঠে ভারতের ম্যাচ জয়ের ফর্মুলাই হল প্রথমে ব্যাট করে বড় রান তোলো। তারপর স্পিন অস্ত্রে ঘায়েল করো বিপক্ষের ব্যাটিং।


অথচ এই ছেলেকে দেখে চমকে উঠলেন ভারতীয় নেটের দিগ্বজেরা। নেটে তখন ব্যাটিং করছেন দিলীপ বেঙ্গসরকর (Dilip Vengsarkar)। যাঁকে ভারতীয় ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা ব্যাটারদের একজন মনে করা হয়। সাল ১৯৯০। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ খেলবে ভারত। বেঙ্গালুরুতে চলছে তারই প্রস্তুতি। নেটে ব্যাট করছেন বেঙ্গসরকর। বিষেণ সিংহ বেদী বল করার জন্য ডেকে পাঠালেন এক তরুণকে। যে তরুণ আবার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। শখে ক্রিকেট খেলেন। আর সেই তরুণ কি না নেটে বেঙ্গসরকরকে শুরুতেই দিলেন বাউন্সার। সেই বাউন্সারে এমনই চমকে গিয়েছিলেন বেঙ্গসরকর যে, তাঁর হাত থেকে ব্যাট ছিটকে গিয়েছিল।


সেই দিন ভারতের নেটে ছিলেন প্রাক্তন পেসার, এক সময় বাংলার হয়ে খেলা সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি সাক্ষাৎকারে সচিন-ঘনিষ্ঠ সুব্রত জানিয়েছিলেন, বেঙ্গসরকর নাকি তরুণ পেসারের ওপর রেগেও গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য তিনি পরের বলটাও বাউন্সার করতে বলেন। কিন্তু সেখানেও চমক। তরুণ পেসার এমন ইয়র্কার দিয়ে বসেন যে, ফের বেঙ্গসরকারের রক্ষণ টলমল।


তার আগে পর্যন্ত ভারতের পেস বোলিং আক্রমণ বলতে জ্বলজ্বল করত একটিই নাম। কপিল দেব নিখাঞ্জ। কিন্তু সেদিনের সেই আনকোরা তরুণ যে কেরিয়ারে দাগ কাটতে চলেছেন, ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল বেঙ্গসরকরের মতো বড় মাপের ব্যাটারের অস্বস্তিতে।


পরে সেই তরুণকেই ক্রিকেটবিশ্ব চিনেছে জাভাগাল শ্রীনাথ (Javagal Srinath) নামে। দুরন্ত গতিতে যিনি প্রতিপক্ষ ব্যাটিংকে ধাক্কা দিয়েছেন বছরের পর বছর। ভারতীয় পেসাররাও যে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারেন, সেটা প্রথম বুঝিয়েছিলেন শ্রীনাথই। বুধবার ৫৩ বছর সম্পূর্ণ করলেন কর্নাটকের প্রাক্তন পেসার।


১৯৯১ সালের ১৮ অক্টোবর। শারজায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে ম্যাচে অভিষেক হয় শ্রীনাথের। সেই ম্যাচে একটি উইকেট নেন ডানহাতি পেসার। সেটি ছিল ওয়াসিম আক্রমের উইকেট।


সেই বছরই ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্টে অভিষেক। সেই টেস্টে ৩ উইকেট পেয়েছিলেন শ্রীনাথ। যার মধ্যে ছিল জেফ মার্শ ও মার্ক ওয়র উইকেট।


ভারতের হয়ে ৬৭ টেস্টে ২৩৬ উইকেট নেন শ্রীনাথ। যার মধ্যে ইডেনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক টেস্টে ১৩ উইকেটও রয়েছে। তবে সেই ম্যাচে হেরে গিয়েছিল ভারত।


দেশের হয়ে ২২৯টি ওয়ান ডে ম্যাচে ৩১৫টি উইকেট নেন শ্রীনাথ। ২০০২ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাংকে আটকান সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সৌরভের অনুরোধেই বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যান। ২০০৩ সালে সৌরভের নেতৃত্বে বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছেছিল ভারত। নবাগত আশিস নেহরা ও জাহির খানের সঙ্গে ভারতের পেস বোলিং আক্রমণকে শক্তিশালী করে তুলেছিলেন শ্রীনাথই।


ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। তবে ক্রিকেটকে ছাড়তে পারেননি শ্রীনাথ। এখন তিনি আইসিসি-র ম্যাচ রেফারি হিসাবে কর্মরত।


আরও পড়ুন: সামনে শুধু শাকিব, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তিন উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক হলেন রশিদ