নয়াদিল্লি: জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে জিকসন সিংহ থৌওনাওজামের হেডার সারা দেশের ফুটপ্রেমীদের উচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে দিয়েছিল। ফিফা বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম গোল। ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে সোনালি অক্ষরে লেখা থাকবে জিকসনের নাম। ছোট থেকেই ফুটবলই ছিল জিকসনের ধ্যানজ্ঞান।


ছেলে বড় হয়ে আইএএস অফিসার হবে বলে আশা করেছিলেন জিকসনের মা বিলাসীনি দেবী। তাঁর স্বামী প্রাক্তন ফুটবলার দেবেন সিংহও তা চাইতেন। কিন্তু পায়ে বল না দিলে দিন কাটত না ছেলের।

বিলাসিনী দেবী বলেছেন, দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাসে প্রথম হত জিকসন। ভারতীয় দলের অধিনায়ক অমরজিত সিংহ জিকসনের তুতো ভাই। অমরজিত দ্বিতীয় হত।

বিলাসিনী দেবীর কথায়,ছেলে পড়াশোনায় ভালো। তাই তাঁরা চাইতেন বড় হয়ে সরকারি চাকরি করুক ছেলে। কিন্তু সে কথায় কানও দিত না জিকসন। খেলতে বন্ধ করে পড়াশোনায় মন দিতে বলায় একবার তো রাগে ২ দিন কিছু মুখেই তোলেনি ছেলে। তারপর থেকে ওকে আর খেলতে বাধা দেননি। কারণ ওর বাবাও ফুটবলার ছিলেন।তাই ওকে ওর ভালোলাগা থেকে আর সরে আসতে বলেননি।  চার বছর থেকে খেলা শুরু করে জিকসন। বাড়ির কাছেই একটা মাঠ ছিল। সেখানে সারাদিন খেলত। এমনকি, খাওয়ার কথাও ভুলে যেত। ওর সঙ্গী ছিল অমরজিত।

মণিপুরে স্থানীয় একটা দলের হয়ে খেলতেন দেবেন। মণিপুরের পুলিশ ফুটবল ক্লাবের হয়েও খেলেছেন। দু বছর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হন দেবেন। তারপর থেকে সংসারের ভার বিলাসিনী দেবীর কাঁধে।

ছেলের খেলা দেখতে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায় স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে দিল্লিতে এসেছেন বিলাসিনী দেবী। ছয় ফিট দুই ইঞ্চি লম্বা ছেলে গতকাল যখন কলম্বিয়ার জালে বল জড়িয়ে গিয়েছিলেন, তখন আনন্দে রীতিমতো কাঁপছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

তাঁর গোল গতকাল কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে সমতা ফেরালেও শেষরক্ষা হয়নি। ভারতীয় খেলোয়াড় ও দর্শকদের উচ্ছ্বাস-আবেগ শেষ হওয়ার আগেই আরও একটি গোল করে কলম্বিয়া ম্যাচ হেরে যায় ভারত।

বিলাসিনী দেবী বলেছেন, ভাবিনি যে ও গোল করবে। আচমকাই তা ঘটে গেল। উত্তেজনায় কাঁপছিলাম। ছেলে ভারতীয় দলে খেলছে এতে যারপরনাই খুশি। তারওপর এই গোল! পরের মিনিটেই ওরা (কলম্বিয়া) গোল করায় খুব হতাশ লাগছিল। ভারত জিতলে ভালো লাগত।

ইম্ফলে কাপড়ের ব্যাবসা করেন বিলাসিনী দেবী। গতকাল রাত ১০ টার পর থেকে তাঁর ফোনে আসছে একের পর এক অভিনন্দন বার্তা। তাঁর মনে পড়ছে সেই দিনগুলির কথা যখন গ্রামের মাঠে বৃষ্টির সময়ও মাথায় প্ল্যাস্টিক রেখে খেলত জিকসন ও অমরজিত।