নয়াদিল্লি: ২০১৫ বিশ্বকাপে হাঁটুতে বড় চোট পেয়েছিলেন মহম্মদ শামি। চোট এতটাই গুরুতর ছিল যে, কার্যত হাঁটাচলা করতে পারছিলেন না তিনি। কিন্তু, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল ম্যাচের আগে অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, শামির কোনও বদল হবে না। যে কারণে ব্যথা-নিরোধক ওষুধ খেয়ে তাঁকে মাঠে নামতে হয়েছিল।


শামি জানিয়েছেন, চোট নিয়ে তাঁর খেলার ফলে, বড় অঘটন ঘটে যেতে পারত। হয়ত কেরিয়ারটাই শেষ হতে পারত। চোট এতটাই গুরুতর ছিল যে, ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ সিডনিতে ওই সেমিফাইনাল ম্যাচ খেলার পরই তাঁকে অস্ত্রোপচার করাতে হয়। পরের আন্তর্জাতিক ম্যাচ শামি খেলেন ১৫ মাস পর। চোট সারিয়ে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে টেস্টে ম্যাচে প্রত্যাবর্তন হয়েছিল এই পেসারের।


প্রাক্তন ভারতীয় পেসার ইরফান পঠানের সঙ্গে ইনস্টাগ্রাম চ্যাটে শামি বলেন, সেমিফাইনালের আগে, আমি টিমমেটদের বলেছিলাম, আর ব্যথা সহ্য করতে পারছি না। ম্যাচের দিনও প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছিল। আমি টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে গোটা ঘটনা আলোচনা করি। কিন্তু ওরা বলেছিল, সব ঠিক হয়ে যাবে। মাহি ভাই সহ গোটা টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে প্রচুর আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল। সকলে বলেছিল, এটা সেমিফাইনাল। আমরা নতুন বোলার নিয়ে মাঠে নামতে পারব না।


বলা ভাল, অস্ট্রেলিয়ায় গোটা বিশ্বকাপে শামির এই চোট ভারতীয় শিবির কার্যত গোপন করেছিল। অনুশীলনে হাঁটুতে মোটা ব্যান্ডেজ মুড়িয়ে নামতেন শামি। ম্যাচ খেলতেন পেনকিলার খেয়ে ও হাঁটু থেকে ফ্লুইড সরানোর পর। শামি বলেন, আমার বিশ্বকাপের গোড়া থেকেই হাঁটুর ওই চোট ছিল। ম্যাচের পর আমি হাঁটতে পারতাম না। গোটা প্রতিযোগিতা আমি চোট নিয়ে খেলেছি। স্রেফ নিতিন পটেলের আস্থার জোরে আমি খেলে গিয়েছিলাম।


পঠানকে শামি বলেন, প্রথম ম্যাচেই হাঁটু ভেঙে যায়। হাঁটু ফুলে প্রায় থাইয়ের সমান হয়ে যায়। চিকিৎসকরা প্রতিদিন আমার হাঁটু থেকে ফ্লুইড বের করতেন। আমি তিনটে করে পেনকিলার খেতাম। শামি স্মরণ করেন সেমিফাইনালের দিনে কী ঘটেছিল। আমি প্রথম পাঁচ ওভারে ১৩ রান দিই। প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছিল, আমি মাহি ভাইকে বলে ড্রেসিং রুমে চলে যাই। কিন্তু, ধোনি বারবার আমাকে বলতে থাকে ব্যথাকে জিততে।


শামি জানান, ইঞ্জেকশন নিয়ে তিনি ফের মাঠে নামেন। বলতে থাকেন, ইঞ্জেকশন নেওয়ার পরও ব্যথা কমছিল না। আমি মাহি ভাইকে বললাম, এভাবে বল করতে পারব না। কারণ, দৌড়তেই পারছি না। কিন্তু, ও বলল, আমি তোমাকেই বিশ্বাস করি। অন্য কোনও পার্ট-টাইম বোলার বেশি রান দিয়ে দেবে। আমাকে ক্যাপ্টেন বলল, ১০ ওভারে ৬০ রানের বেশি দিও না। ব্যথা নিয়েই আমি ১০ ওভার বলে করে ৬৮ রান দিয়েছিলাম।


শামি বলেন, ম্যাচে স্টিভ স্মিথ দুরন্ত শতরান করেছিল। আর অন্যদিকে, বড় ম্যাচে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের বিপর্যয় ঘটেছিল। ওর চেয়ে খারাপ অবস্থায় আমি কখনও খেলিনি। কেউ কেউ বলেছিল, আমার কেরিয়ার শেষ। কেউ বলেছিল আমার খেলা উচিত হয়নি। তবে, এখনও আমি সকলের সামনে আছি।