কলকাতা: রাত পোহালেই বড় ম্যাচ (Kolkata Derby)। করোনা আবহে গতবারের মতোই এবারও কলকাতা (Kolkata) থেকে বহু দূরে গোয়ায় (Goa) দর্শকশূন্য মাঠে হবে ভারতীয় ফুটবলের (Indian Football) সবচেয়ে বড় ম্যাচ। সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) গলা ফাটাচ্ছেন এসসি ইস্টবেঙ্গল (SC East Bengal) ও এটিকে মোহনবাগানের (ATK Mohun Bagan) সমর্থকরা। দু’দলের কোচ-ফুটবলাররা চোখের সামনে এই ম্যাচ ঘিরে দর্শকদের উন্মাদনা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ না পেলেও, সোশ্যাল মিডিয়ায় হইচই দেখে ম্যাচটির গুরুত্ব বুঝতে পারছেন।


গত মরশুমে এসসি ইস্টবেঙ্গল আইএসএল-এ অভিষেক ম্যাচেই এটিকে মোহনবাগানের কাছে হেরে গিয়েছিল। দ্বিতীয় ডার্বিতেও লজ্জাজনক হারের মুখ দেখতে হয়েছিল রবি ফাওলারের দলকে। বছর ঘুরে ফের ডার্বি। এবার অবশ্য আর লাল-হলুদ শিবিরে নেই লিভারপুলের কিংবদন্তি ফাওলার। তাঁর বদলে এসসি ইস্টবেঙ্গলের প্রধান কোচ হয়ে এসেছেন স্পেনের হোসে ম্যানুয়েল দিয়াজ। এবার লাল-হলুদের বিদেশিরাও বদলে গিয়েছেন। এবারের আইএসএল-এর প্রথম ম্যাচে জামশেদপুর এফসি-র সঙ্গে ১-১ ড্র করেছে লাল-হলুদ। দ্বিতীয় ম্যাচই ডার্বি। গতবারের পারফরম্যান্সের বিচারে এটিকে মোহনবাগানের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও, স্বপ্ন দেখছে লাল-হলুদ জনতা।


প্রথম ম্যাচে নজর কেড়ে নিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার অ্যান্টনিও পেরোসেভিচ। তিনি যেভাবে অনায়াসে বাঁ পায়ের ছোট্ট টোকায় তিন-চারজনকে কাটিয়ে নিয়েছেন, তাতে বড় ম্যাচ জয়ের জন্য তাঁর উপরেই বাজি ধরছেন সমর্থকরা। লাল-হলুদের প্রধান কোচ অবশ্য গোটা দল নিয়েই ভাবছেন। একা পেরোসেভিচ ম্যাচ জিতিয়ে দেবেন, এই আশা করছেন না দিয়াজ। পেরোসিভচকে নিয়ে এবিপি লাইভের প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘প্রথম ম্যাচে অ্যান্টনিও পেরোসেভিচ ভাল খেলেছে। তবে দলের সবাইকেই ভাল খেলতে হবে। ওকে সাহায্য করতে হবে। তাহলেই আমরা জিততে পারি।’


‘ভারতের মাটিতে পা রাখার পর থেকেই ডার্বির কথা শুনছেন। এত অল্প সময়ে দল গড়তে হয়েছে। অনেক তাড়াতাড়ি ডার্বি খেলতে হচ্ছে। এতে কি সমস্যা হবে?’ সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রশ্নের জবাবে লাল-হলুদের প্রধান কোচ বললেন, ‘এই ম্যাচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ডার্বির গুরুত্ব বুঝি। দ্বিতীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচই ডার্বি হওয়ায় আমাদের কাজটা কঠিন। তবে আমরা কোনও অজুহাত দিচ্ছি না। আমরা জানি, এটিকে মোহনবাগান ভাল দল। ওদের কোচ ভাল, অভিজ্ঞ, ভারতীয় ফুটবলের সঙ্গে অনেকদিন ধরে যুক্ত। তবে আমরা নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।’


‘এটিকে মোহনবাগানের মুখোমুখি হওয়ার আগে আপনাদের শক্তি কী?’ এই প্রশ্নের জবাবে দিয়াজ জানালেন, ‘আমরা এটিকে মোহনবাগানের দুর্বলতা খুঁজে বের করে সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। ম্যাচ চলাকালীন আমরা নিজেদের মান বাড়ানোর চেষ্টা করব। আমরা যাতে কম ভুল করি, সেই চেষ্টা করে যেতে হবে।’


‘কাল কি ড্যারেন সিডলকে খেলার সুযোগ দেবেন?’ এই প্রশ্নের জবাবে লাল-হলুদ কোচ জানালেন, ‘ড্যারেন ভাল খেলোয়াড়। ও ২৭ জনের একজন। ওকে খেলাতেই পারি।’


‘এটিকে মোহনবাগান গত মরশুম থেকে যেরকম ফর্মে আছে, তাতে কি আন্ডারডগ ট্যাগ আপনাদের সাহায্য করবে?’ এই প্রশ্নের জবাবে প্রতিপক্ষকে কিছুটা এগিয়েই রাখলেন লাল-হলুদ কোচ। তাঁর বক্তব্য, ‘আমরা নিজেদের শক্তি অনুযায়ী খেলব। গত মরশুমে এবং এবারও প্রথম ম্যাচে কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে এটিকে মোহনবাগানের পারফরম্যান্স দারুণ। ওরা অনেক বছর ধরে একসঙ্গে খেলছে। তবে আমরা তৈরি।’


‘আপনারা কি দুই বিদেশি স্ট্রাইকার, দুই বিদেশি স্টপার নিয়েই খেলবেন? নাকি দলে বদল আনবেন?’ দিয়াজ জানালেন, ‘আমরা বিভিন্ন কম্বিনেশন নিয়েই ভাবছি। অল্প সময়ে আমাদের অনেকগুলি ম্যাচ খেলতে হবে। সে কথা ভেবেই দলকে তৈরি করছি।’


‘বিপক্ষের সেরা অস্ত্র রয় কৃষ্ণ, হুগো বুমোসকে কীভাবে আটকানোর কথা ভাবছেন? ম্যান মার্কিং করবেন না জোনাল মার্কিং?’ লাল-হলুদ কোচ জানালেন, ‘পরিস্থিতির উপর সেটা নির্ভর করছে। আমাদের বক্সে বল বল এলে ম্যান টু ম্যান মার্কিং করতেই পারি।’


‘কালকের ম্যাচে কি এটিকে মোহনবাগানের আক্রমণের সঙ্গে আপনাদের রক্ষণের লড়াই?’ এই প্রশ্ন শুনে রক্ষণাত্মক খোলস ছেড়ে বেরোলেন লাল-হলুদের স্প্যানিশ কোচ। বললেন, ‘না, ওদের আক্রমণের সঙ্গে আমাদের রক্ষণের লড়াই নয়। এটিকে মোহনবাগান গত মরশুমে দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। এসসি ইস্টবেঙ্গল এর আগে একবারই আইএসএল খেলেছে। ফলে অভিজ্ঞতা, পারফরম্যান্সে ওরা এগিয়ে। ওদের দলের সঙ্গে আমাদের লড়াই হবে।’


‘আপনাদের বিপক্ষে কে বেশি ভয়ঙ্কর, রয় কৃষ্ণ না হুগো বুমোস?’ এই প্রশ্নের জবাবে লাল-হলুদের প্রধান কোচ বললেন, ‘ওদের গোটা দলই আমাদের প্রতিপক্ষ। একজন-দুজন ম্যাচ জেতাতে পারে না। গোটা দলটাকে নিয়েই ভাবতে হবে।


‘দলের কোন জায়গায় উন্নতি করতে হবে?’ এবার লাল-হলুদ কোচ জানালেন, ‘আমাদের পাসিংয়ে উন্নতি করতে হবে। গোলের সুযোগ পেলে সেটা কাজে লাগাতে হবে। আমাদের রক্ষণভাগের দিকে নজর দেওয়ার পাশাপাশি আক্রমণেও জোর দিতে হবে। ওদের রক্ষণে চাপ তৈরি করতে হবে।’


সাংবাদিক বৈঠকের শেষদিকে ফের রয় কৃষ্ণ, হুগো বুমোসকে নিয়ে প্রশ্ন ধেয়ে এল। এবারও দিয়াজ বললেন, ‘আমরা দু-একজনকে নিয়ে না, ওদের গোটা দলটাকে নিয়েই ভাবছি। রয় কৃষ্ণ, হুগো বুমোস ভাল খেলোয়াড়, গোল করতে পারে। তবে গোটা দলটাকে নিয়েই ভাবতে হবে।’