কলকাতা: ভারোত্তোলনের নজির গড়েছে হাওড়ার ১৭ বছরের কন্যা কোয়ল বর (Koyel Bar)। আমদাবাদে কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপ (Commonwealth Championship) ভারোত্তোলনে জোড়া সোনা জিতেছে। মোট ১৯২ কেজি ওজন তুলে যুব ভারোত্তোলনে বিশ্বরেকর্ড করেছে কোয়েল। সাব জুনিয়র ভারোত্তোলনে ৫৩ কেজি বিভাগে আগের বিশ্বরেকর্ড ছিল ১৮৮ কেজি। কোয়েল সেই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। ক্লিন অ‍্যান্ড জার্ক বিভাগে ১০৭ কেজি ওজন তুলেছে কোয়েল। এই বিভাগে বিশ্বরেকর্ড ছিল ১০৫ কেজি। স্ন্যাচে ৮৫ কেজি ওজন তুলে বিশ্বরেকর্ড স্পর্শ করেছে কোয়েল। সাব জুনিয়র ছাড়াও জুনিয়র বিভাগেও সোনা জিতেছে কোয়েল। 

ছাত্রীর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত অষ্টম দাস। সেই অষ্টম দাস, যাঁর হাত ধরে উঠে আসা ভারোত্তোলক অচিন্ত্য শিউলি কমনওয়েলথ গেমসে পদক জিতেছিলেন। ভারতীয় ভারোত্তোলনে অষ্টমের নতুন উপহার কোয়েল। হাওড়ার দেউলপুরে যাঁর আখড়ায় কোয়েলের হাতেখড়ি। আমদাবাদে ছাত্রীর জোড়া সোনা জয়ের পর অষ্টম বলছিলেন, '২০১৮ সালে প্রথম আমার কাছে এসেছিল। কোয়েলের বাবা আমার বন্ধু। প্রায়ই দেউলপুরে আমার আখড়ায় আসত। বলত, ছেলে ও মেয়েকে ওয়েটলিফ্টিংয়ে দেব। আমি বলেছিলাম, ওরা বড্ড ছোট, আরও ২-১ বছর যাক। ওরা দু ভাইবোন এসেছিল। তারপর আমার কাছেই ওদের ভারোত্তোলন শুরু। কোয়েলের ভাই সৌম্যও খুব প্রতিভাবান। আর্মি শিবিরে সুযোগ পেয়ে গিয়েছে। পুণেতে আর্মি শিবিরে রয়েছে ও।'

ছাত্রী হিসাবে কোয়েল কেমন? অষ্টমের কথায়, 'মন দিয়ে ট্রেনিং করত। ওর বয়স এখন মাত্র ১৭ বছর ৩ মাস। ওয়েটলিফ্টিং টেকনিক্যাল খেলা। টেকনিক ভাল না হলে ওয়েটলিফ্টিং করা যায় না। কোয়েল টেকনিকের দিক থেকে খুব শক্তিশালী। ওর স্ট্যামিনা বা শক্তি দুর্দান্ত কিছু নয়। তবে টেকনিক্যাল মুন্সিয়ানায় বাকি সব খামতি ঢেকে বাজিমাত করছে।' যোগ করলেন, 'ভারতীয় দলের কোচ বিজয় শর্মা উত্তর প্রদেশে নিজের অ্যাকাডেমিতে ওকে নিয়ে চলে গিয়েছে। সেখানে প্র্যাক্টিস করায় বছর দেড়েক ধরে।'

অষ্টম বলছিলেন, 'বয়স কম হওয়ায় এবং দারুণ প্রতিভাবান হিসাবে নজর কাড়ায় ওকে জুনিয়র ও সাব জুনিয়র – কমনওয়েলথ গেমসের দুটি পর্যায়েই সুযোগ দেওয়া হয়। দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে কোয়েল। জোড়া সোনা জিতেছে। পরের বছর থেকে আশা করছি জুনিয়র ও সিনিয়র খেলবে কোয়েল।' আরও বললেন, 'খুব প্রতিভাবান মেয়ে। ২০২৬ সালের কমনওয়েলথ গেমসে সুযোগ পাওয়ার দাবিদার। হাওড়ার সাঁকরাইলে বাড়ি। পরে ধুলাগড়ে চলে আসে। ধুলাগড় বাজারের কাছে বাড়ি করেছে।'

কোয়েলের বাবা মাংসবিক্রেতা। অভাবের সংসার। অষ্টম বলছিলেন, 'আমাদের খেলায় ডায়েট খুব একটা মেনটেন করতে হয় না। তবে পুষ্টিকর খাবার ভীষণ জরুরি। প্রত্যেক দিন ১৫০-২০০ গ্রাম মাংস, দুধ, ফল ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার। তবে অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার জন্য সবাই খেতে পায় না।'

কোয়েলের পড়াশোনা? গুরু অষ্টম বললেন, 'মাধ্যমিক এখনও দেয়নি। এবার দেবে। খেলার জন্য দেউলপুর স্কুলে ভর্তি হয়েছে। ভারোত্তোলনই ওর ধ্যানজ্ঞান।'