কলকাতা: টেস্ট অভিষেকে চার উইকেট পেয়েছিলেন। একদিনের ম্যাচের অভিষেকের প্রথম ম্যাচটা বৃষ্টির জন্য ভেস্তে গিয়েছিল। সোমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে চলতি একদিনের সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও বল হাতে ভেল্কি দেখালেন ভারতের প্রথম চায়নাম্যান বোলার কুলদীপ যাদব। উত্তরপ্রদেশের এই ২২ বছরের তরুণ ৫০ রানে ৩ উইকেট দখল করে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংয়ের মিডল অর্ডার গুঁড়িয়ে দেন। ম্যাচের পর কুলদীপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি।


ভারত অধিনায়ক বলেছেন, ‘ক্রস সিমে কুলদীপ দু’দিকেই বল ঘোরাতে পারে। এর ফলে ওর কোন বলটা কোন দিকে ঘুরবে, সেটা ব্যাটসম্যানদের পক্ষে বোঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’

কোহলি আরও বলেছেন,‘সাধারণত বোলাররা যখন বল ভিতরে আনে, তখন সিম সোজা রেখে বল করে। গুগলি করার সময় ক্রস সিম ব্যবহার করে। কিন্তু কুলদীপ ক্রস সিমেই দু’ধরনের ডেলিভারি করতে পারে। তাই গ্রিপ দেখে ওর বল বোঝা কঠিন হয়ে যায়।’

এখন অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেছেন, ২০১৯-র বিশ্বকাপে ভারতের রণকৌশলের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারেন এই বাঁহাতি বোলার। কারণ, যে কোনও পরিস্থিতিতেই বল ঘোরানোর ক্ষমতা রয়েছে তাঁর।

অথচ এই কুলদীপই ভারতীয় দলে সেভাবে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচে সারপ্রাইজ প্যাকেজ হিসেবে দলে নেওয়া হয় ২২ বছরের এই বোলারকে। প্রথম ইনিংসে চার উইকেট নিয়ে ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন তিনি। ধর্মশালায় ওই টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সিরিজ জেতে ভারত।

কোনও কোনও মহলের খবর, সিরিজের তৃতীয় টেস্টে কুলদীপকে খেলাতে চেয়েছিলেন কোচ অনিল কুম্বলে। কিন্তু রাজি হননি কোহলি। ওই টেস্ট ড্র হয়েছিল।

ধর্মশালা টেস্টে খেলার পর একদিনের দল বা টি ২০ দলে সুযোগ পাচ্ছিলেন না কুলদীপ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলেও তাঁকে নেওয়া হয়নি। এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক তথা ব্যাটিং তারকা রাহুল দ্রাবিড়। সূত্রের খবর, ভারতের কোচ অনিল কুম্বলেও কুলদীপকে দলে চেয়েছিলেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতের হারের পর দ্রাবিড় বলেন, কুলদীপকে দলে না নেওয়ার সিদ্ধান্তটা ভুল। টুর্নামেন্টে ভারত ছাড়া কোনও দলই দুজন ফিঙ্গার স্পিনার নিয়ে মাঠে নামেনি। ভারতীয় দলের দুই ফিঙ্গার স্পিনার আর অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা প্রত্যাশা অনুযায়ী বোলিং করতে পারেননি। কব্জির সাহায্যে উইকেটের দুদিকে বল ঘোরাতে সক্ষম কুলদীপ থাকলে দল লাভবান হত বলেও মন্তব্য করেন দ্রাবিড়।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৩২২ রান করেও জিততে পারেনি ভারত। শ্রীলঙ্কার দুটি পার্টনারশিপ ভারতকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। মাঝের ওভারগুলিতে ভারতের উইকেট নেওয়ার ক্ষমতার অভাব বেশ প্রকট হয়। ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও মাঝের ওভারগুলিতে স্পিনাররা কার্যকরী হয়ে উঠতে পারেননি।

এই প্রেক্ষাপটেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ম্যাচে কুলদীপের বোলিং বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, শুরুতে জোড়া উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল ক্যারিয়ানরা। তৃতীয় উইকেটে শিয়া হোপ (৮৮ বলে ৮১ রান) এবং ইভিন লিওইস (২১)-র ৮৯ রানের পার্টনারশিপ তাদের ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিল। এই অবস্থায় কুলদীপের টপস্পিন না বুঝতে পারার খেসারত দিতে হয় লিওইসকে। স্টেপ আউট করে মারতে গিয়ে স্ট্যাম্প আউট হয়ে যান তিনি। এই জুড়ি ভাঙার পর ভারত ম্যাচ পকেটে পুরে ফেলে।

এটা ঠিক যে, কুলদীপের একটি ম্যাচের পারফরম্যান্স দেখে ভবিষ্যতবাণী করাটা সঠিক নয়। কিন্তু এটা ঠিক যে, ভারতের মাঝের ওভারে এমন বোলার দরকার যিনি, উইকেট নিতে পারবেন। কুলদীপের সেই দক্ষতা রয়েছে। বাকিটা বলে দেবে ভবিষ্যত।