লখনউ: অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে নজর কেড়েছিলেন গোটা বিশ্বের। এবার টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের সবচেয়ে বড় মঞ্চ আইপিএলেও ঢুকে পড়লেন ক্যারিবিয়ান পেসার শামার জোসেফ। লখনউ সুপার জায়ান্টস দলের হয়ে খেলতে দেখা যাবে আগামী মরশুমে এই তরুণ পেসারকে। মার্ক উডের বদলি হিসেবে তাঁকে দলে নেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, ৩ কোটি দরে লখনউতে যোগ দিচ্ছেন শামার।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২ টেস্টে ১৩ উইকেট নিয়েছিলেন শামার। অ্য়াডিলেড টেস্টে অভিষেক হয়েছিল শামারের। কেরিয়ারের প্রথম উইকেট ছিল তাঁর স্টিভ স্মিথের। অভিষেক টেস্ট ইনিংসে ৯৪ রানের বিনিময়ে ৫টি উইকেট শামার। তবে গাব্বা টেস্টে ভয়ঙ্কর বোলিং করেন ২৪ বছরের তরুণ। ব্রিসবেন টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫৬ রানের বিনিময়ে ১টি উইকেট নেন জোসেফ। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৮ রানে ৭ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ঐতিহাসিক জয় এনে দেন নবাগত পেসার। ব্যাট হাতেও ১১ নম্বরে নেমে প্রথম ইনিংসে ৩৬ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১১ রানের ইনিংস খেলেন।
লখনউ সুপার জায়ান্টসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ''উডের বদলি হিসাবে শামারকে দলে নেওয়া হয়েছে। ৩ কোটি টাকায় নেওয়া হয়েছে তাঁকে। সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের টেস্ট জয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছেন শামার। আইপিএলে এই প্রথম বার দেখা যাবে তাঁকে।'' উড ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে খেলছেন। কিন্তু আইপিএলে তিনি খেলবেন না, জানিয়ে দিয়েছেন।
অ্যাডিলেডে রুদ্ধশ্বাস টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে ৮ রানে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ় (Aus vs WI)। ক্যারিবিয়ানদের জয়ের নায়ক গায়ানার ২৪ বছরের এক ফাস্টবোলার। শামার জোসেফ। ৬৮ রানে ৭ উইকেট নিলেন ডান হাতি পেসার। ঘণ্টায় কখনও ১৪০ কিলোমিটার গতিতে, তো কখনও ১৪৫ কিলোমিটারে বল করেছেন। তাও ভাঙা আঙুল নিয়ে। মিচেল স্টার্কের ইয়র্কার আছড়ে পড়েছিল পায়ে। আঙুল ভাঙলেও শামারের ইচ্ছেশক্তিকে তা ধাক্কা দিতে পারেনি। বল হাতে গাব্বায় ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্পেলটা করলেন তিনি। ২৭ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। ১৯৯৭ সালে পারথে জিতেছিল। তারপর অ্যাডিলেডে।
ম্যাচের পর দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি এ বি ডিভিলিয়ার্স ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে আবেদন করেছেন, শামারের কাহিনি পড়ুন। যা পড়ে তাঁর নিজের চোখেই জল চলে এসেছিল। শামারের কাহিনি যে সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে!
গায়ানার বারাকারার বাসিন্দা ছিলেন শামার। সাকুল্যে ৩৫০ জন অধিবাসী যে এলাকার। সকলেই মূলত কাঠুরে। জঙ্গলে গিয়ে শুকনো গাছ নিয়ে আসতেন। তারপর তা কাজে লাগাতেন। শামার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'একদিন জঙ্গলে আমার মাথার ওপরই আর একটু হলে গাছ পড়ে যেত। বাবা ও ভাইবোনেদের সঙ্গে জঙ্গলে গিয়েছিলাম। অল্পের জন্য প্রাণরক্ষা হয়েছিল। সেদিনই বুঝেছিলাম, আর এই কাজ করতে পারব না। আমাকে বারাকারা ছেড়ে বেরিয়ে আসতেই হতো।'
তারপরই বারাকারা ছেড়ে নিউ আমস্টারডামে চলে যান শামার। সেখানে নানারকম কাজ করেছেন। কখনও নির্মাণকর্মী, কখনও মজুর, কখনও নিরাপত্তাকর্মী। জঙ্গলে লেবু, পেয়ারা, পিচফল দিয়ে যিনি ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন।