বুয়েনস এয়ার্স: কোপা আমেরিকায় চিলির কাছে হারের পর সারা ফুটবল বিশ্বকে স্তম্ভিত করে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা করেছিলেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি। তাঁর এই সিদ্ধান্তের ঘোর এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি ফুটবল দুনিয়া। এলএম ১০-র সিদ্ধান্ত বদলের অপেক্ষায় এখন সারা বিশ্ব, অগনিত মেসি-অনুরাগী। অপেক্ষায় ফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো মারাদোনাও। মেসিকে তাঁর সিদ্ধান্ত বদলের আর্জি জানালেন আর্জেন্টিনার ১৯৮৬-র বিশ্বকাপ জয়ী দলের নায়ক। ফিফার পাঁচ বছরের বর্ষসেরা ফুটবলারের কাছে জাতীয় ফুটবল দলের জার্সি ফের গায়ে তোলার সকাতর আবেদন জানিয়েছেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মরিসিও মার্সি।
কোপার ফাইনালে হারের পর কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন বাঁ পায়ের শিল্পী। জানিয়েছিলেন, এরপর আর দেশের হয়ে খেলবেন না তিনি। তাঁর এই ঘোষণা আগামী বিশ্বকাপের আগে আর্জেন্টিনা ফুটবলকেই কার্যত টালমাটাল করে দিয়েছে। সেই ঘোষণার পর ২৪ ঘন্টা পার হয়ে গিয়েছে। ২০১৮-র বিশ্বকাপ কী ‘শিবহীন যজ্ঞ’ হতে চলেছে কিনা, দোলাচলে মেসি-ভক্তরা। মেসির সিদ্ধান্তে মর্মাহত মারাদোনাও। স্থানীয় সংবাদপত্রকে  আর্জেন্টিনার প্রাক্তন কোচ মারাদোনা বলেছেন, অবসরের সিদ্ধান্ত বদলাতে হবে মেসিকে। ওর এখনও জাতীয় দলের হয়ে খেলা উচিত৷ ওর মধ্যে এখনও অনেক খেলা বাকি আছে৷ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য রাশিয়ায় বিশ্বকাপ খেলুক মেসি।
কোপা আমেরিকা শুরুর আগে মারাদোনার সমালোচনাতেই বিদ্ধ হয়েছিলেন আধুনিক ফুটবলের ম্যাজিশিয়ান৷ মারাদোনা বলেছিলেন, অধিনায়ক হওয়ার মতো ব্যক্তিত্ব নেই  মেসি। কিন্তু কোপায় হারের পর মেসির সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না মারাদোনা। আর্জেন্টিনা দলের ব্যর্থতার জন্য মারাদোনা দেশের ফুটবল অ্যাশোসিয়েশন (এএফএ)-কেই দুষেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে মেসিদের দলের কোচের অভিযোগ, এএফএ মেসিকে সমর্থন করেনি। আর এই কারণেই নিজেদের খামতি ঢাকতে কোপায় হারের দায় মেসিকে নিজের মাথায় নিতে দেওয়া হয়েছে। দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মেসিকে আরও বেশি সমর্থন করতে হবে।
মারাদোনা বলছেন, যাঁরা চাইছেন যে মেসির জাতীয় দলে আর খেলা উচিত নয়, তাঁরা জানেন না যে, আর্জেন্টিনার ফুটবলের কী বিপর্যয় ঘটতে চলেছে।
বার্সেলোনা তারকার সিদ্ধান্ত  পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে টেলিফোন করেছেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মার্সি। প্রেসিডেন্টের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, মার্সি মেসিকে ফোন করে বলেছেন যে, জাতীয় দলের পারফরম্যান্সে তিনি গর্বিত। সমালোচনাকে অগ্রাহ্য করতেও তিনি মেসিকে অনুরোধ করেছেন।
উল্লেখ্য, গতকাল সন্ধেতেই বুয়েনস এয়ার্সে পৌঁছেছেন মেসি-বাহিনী। যদিও কোনও খেলোয়াড়ের কাছ থেকেই কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মেসি-অনুরাগীদের অভিযোগ, দেশে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় বর্তমান প্রজন্মের এই সেরা ফুটবলারকে। মেসির প্রথম কোচ আর্নেস্টো ভেচ্চিও বলেছেন, দলে তো এগারোজন প্লেয়ার থাকে। তাহলে সবাই মেসিকেই টার্গেট করে কেন?
মেসির অবসরের সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যেই টালমাটাল হয়ে উঠেছে আর্জেন্টিনা ফুটবল। ম্যাঞ্চেস্টার সিটি তারকা সের্গেই অ্যাগুয়েরোর হুঁশিয়ারি, অন্য প্লেয়াররাও আর জাতীয় দলে না খেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তিনি বলেছেন, ফাইনালে হেরে আমরা সবাই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছি। কিন্তু লিওকে যে অবস্থায় দেখেছি, তা আগে কখনও দেখিনি। মেসির পদাঙ্কই তিনি অনুসরণ করবেন কিনা, এই প্রশ্নের উত্তর অ্যাগুয়েরো দেননি। তবে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, তাঁর সঙ্গে জেভিয়ার ম্যাসচেরানো এবং গঞ্জালো হিগুয়েনও জাতীয় দলে আর না খেলার ঘোষণা করতে পারেন বলে জানানো হয়েছে।