হায়দরাবাদ: জীবনের সেরা সুযোগের সামনে দাঁড়িয়ে হারিয়েছিলেন সবথেকে বড় ভরসাকে। বাবাকে হারানোর কষ্ট বুকে রেখেই চোয়াল শক্ত করেছিলেন ডনের দেশে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। ফিরে এসে বাড়ি না ঢুকেই সোজা ছুটেছিলেন বাবাকে কবরে শ্রদ্ধা জানাতে। দুঃখের আবহের মাঝেই আত্মত্যাগ-কঠোর পরিশ্রমের সুবাদে যে সাফল্য তিনি পেয়েছেন, তার জন্য নিজেই নিজেকে এবার পুরষ্কৃত করলেন মহম্মদ সিরাজ। অস্ট্রেলিয়ায় ভারতকে ঐতিহাসিক বর্ডার-গাওস্কর সিরিজ জেতানোর অন্যতম কারিগর নিজের জন্য কিনলেন একটি বিএমডবলিউ গাড়ি। নিজেকে নতুন উপহার দিয়ে সিরাজের আপশোস, দেখে যেতে পারলেন না বাবা।


অ্যাডিলেড টেস্টে লজ্জার হারের পর অধিনায়ক বিরাট কোহলির দেশে ফিরে আসা। একের পর এক তারকা ক্রিকেটারের চোট। সেই জায়গায় দাঁড়িয়েও ঐতিহাসিক সিরিজ জেতে ভারত। আর এই সিরিজের সবথেকে বড় প্রাপ্তি অবশ্য মহম্মদ সিরাজ। ভারতের পক্ষে সিরিজের সবথেকে বেশি উইকেট তুলে নিয়েছেন সিরাজ।

প্রথমে মহম্মদ সামি, তারপর একে একে উমেশ যাদব, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, জসপ্রীত বুমরাহের মতো ভারতের একের পর এক সেরা বোলিং অস্ত্র যখন চোটের কবলে পড়েছেন, তখন বাড়তি দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন মহম্মদ সিরাজ। ব্রিসবেনে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের পথে অজিদের দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফিরিয়েছিলেন তিনি। ২৬ বছরের ভারতীয় এই পেসারের উপর বাড়তি ভরসা রেখেছিলেন অধিনায়ক আজিঙ্কা রাহানে। যে ভরসার দাম দিতে পেরে তৃপ্ত হন সিরাজ।

শুধুমাত্র বল হাতেই নয়, মানসিক কাঠিন্য দেখানোর দিক থেকেও অনন্য নজির রাখেন তিনি। প্রথমে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় থাকার মাঝে ২০ নভেম্বর সিরাজের বাবার প্রয়াণের খবর এসে পৌঁছয়। তরুণ তুর্কিকে জীবনের অন্যতম কঠিন সময়ে বাবার শেষকৃত্যে না যোগ দিয়ে সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়ায় থেকে যাওয়ার। যে সিদ্ধান্তকে কুর্নিশ জানিয়েছিলেন খোদ বোর্ডের প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

সিরিজ এগোনোর মাঝেও কঠিন পরিবেশের মধ্যে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। সিডনি টেস্টের মাঝে টানা বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের মুখে পড়েন তিনি। জীবনে প্রথমবার অস্ট্রেলিয়া সফরের মাঝে পিছিয়ে না গিয়ে যে আক্রমণকে পাল্টা বাউন্সারে মাঠের বাইরে পাঠিয়েছিলেন সিরাজ।